Advertisement
E-Paper

শিশুদের ভোট নাই

স্মরণ করাইয়া দেওয়া বিধেয় যে ব্যর্থতা শুধু বর্তমান সরকারেরই নহে, তাহার পূর্বসূরিদেরও। গত উনিশ বৎসরে কেন্দ্রে ইউপিএ জোট ক্ষমতায় ছিল দশ বৎসর, আর এনডিএ নয় বৎসরের অধিক।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ ০০:৩৪
Share
Save

লজ্জার যতখানি, উদ্বেগের কারণ তাহারও বেশি। বিশ্বের ১১৭টি দেশের মধ্যে ক্ষুধার তীব্রতায় ভারতের ঠাঁই হইয়াছে ১০২তম স্থানে। বাংলাদেশ, পাকিস্তানেরও পরে। ব্রিকস অন্তর্ভুক্ত দেশগুলির মধ্যে ভারতের অবস্থান সর্বনিম্ন। গ্লোবাল হাঙ্গার ইন্ডেক্সের ধাক্কা সামলাইবার পূর্বেই রাষ্ট্রপুঞ্জের সংস্থা ইউনিসেফ জানাইল, ভারতের অর্ধেক শিশুই অপুষ্টির শিকার। গোটা দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের অবস্থা সর্বাপেক্ষা খারাপ। পরিসংখ্যানগুলিকে অস্বীকার করিবার কোনও পথ নাই। এমনকি, ২০০০ সালের তুলনায় ভারতের অবস্থা ঢের ভাল হইয়াছে বলিয়া আত্মরক্ষার চেষ্টাও না করাই ভাল। হাঙ্গার ইন্ডেক্সের তালিকায় ভারতের ঠিক আগে এবং পরে আছে আফ্রিকার দুইটি দেশ— যথাক্রমে নাইজার ও সিয়েরা লিয়ন। ২০০০ সালে যখন প্রথম বার ক্ষুধাসূচক তৈরি হইয়াছে, তখন এই দুইটি দেশে যে ভয়ঙ্কর ছবি ছিল, সেই তুলনায় তাহাদের উন্নতি ভারত অপেক্ষা ঢের বেশি। এই দুই হতদরিদ্র দেশ যাহা পারে, ‘আর্থিক মহাশক্তি’ কেন তাহা পারে না, এই প্রশ্নটির উত্তর সন্ধান করাই এই মুহূর্তের কর্তব্য।

স্মরণ করাইয়া দেওয়া বিধেয় যে ব্যর্থতা শুধু বর্তমান সরকারেরই নহে, তাহার পূর্বসূরিদেরও। গত উনিশ বৎসরে কেন্দ্রে ইউপিএ জোট ক্ষমতায় ছিল দশ বৎসর, আর এনডিএ নয় বৎসরের অধিক। কাজেই, এই ব্যর্থতার দায় রাজনীতির রং দেখিয়া বর্তাইবে না। এবং, এই একই সময়কালে ভারতে অভূতপূর্ব আর্থিক বৃদ্ধি ঘটিয়াছে। এক দিকে অর্থব্যবস্থার বিপুল বৃদ্ধি, আর অন্য দিকে শিশুদের ব্যাপক অপুষ্টি— ভারত এই দুইটিকে মিলাইয়াছে বৈষম্যের অঙ্কে। ভারতে আর্থিক বৈষম্য ক্রমবর্ধমান। অর্থাৎ, সমাজের সিংহভাগ মানুষের নিকট দেশের আর্থিক সমৃদ্ধির ফল পৌঁছায় নাই। শিশুর পুষ্টিতে স্বভাবতই তাহার প্রভাব পড়িয়াছে। আইসিডিএস বা মিড-ডে মিলের ন্যায় প্রকল্পগুলিকেও যতখানি গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন ছিল, ভারতীয় রাজনীতি তাহা দেয় নাই। অন্য দিকে, অভ্যাসও বদলাইয়াছে। যে পরিবারে শিশুর পুষ্টির ব্যবস্থা হইবার মতো আর্থিক সংস্থান আছে, সেখানেও অপুষ্টি থাবা বসাইয়াছে, কারণ প্রথাগত খাদ্যাভ্যাস ভুলিয়া সম্পন্ন ভারতীয়রা ফাস্ট ফুডের দিকে ঝুঁকিয়াছে। তাহাতে পুষ্টির ক্ষতি হইয়াছে মারাত্মক। রাষ্ট্রপুঞ্জের কর্তারা কথাটি স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন। কিন্তু, এক অর্থে ইহাও কি সরকারের ব্যর্থতা নহে? শিশুর পক্ষে কোন খাদ্য উপযোগী এবং কোনটি ক্ষতিকর, সেই সচেতনতা তৈরির যথেষ্ট চেষ্টা হইয়াছিল কি? অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়রা স্মরণ করাইয়া দিবেন, শুধু তথ্যের অভাবও মানুষকে ক্ষতিকর সিদ্ধান্তের দিকে ঠেলিয়া দিতে পারে, এবং সেই অভাব ঘুচানো উন্নয়নের অতি জরুরি শর্ত। সে ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা পাহাড়প্রমাণ।

ভারতীয় শিশুরা যে অপুষ্টিতে ভুগিতেছে, বয়সের তুলনায় অনেকেরই ওজন কম, উচ্চতা কম— এই কথাগুলি জানিবার জন্য কোনও আন্তর্জাতিক রিপোর্টের অপেক্ষায় থাকিতে হয় না। শুধু চোখ খোলা রাখিলেই সেই অপুষ্টির সাক্ষ্যপ্রমাণ মিলিতে থাকে নিরন্তর। কিন্তু, শিশুর পুষ্টির প্রশ্নটি কখনও ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রীয় প্রশ্ন হইয়া উঠিতে পারে না। মিড-ডে মিল লইয়া ছেলেখেলা হয় কেন, অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী অনুপস্থিত থাকিলেই শিশুদের অভুক্ত থাকিতে হয় কেন, সাধারণ মানুষ— শিশুগুলির অভিভাবকরা— নেতাদের এই প্রশ্ন করেন না। রাষ্ট্রের নিকট জবাবদিহি দাবি করেন না। এই ফাঁক গলিয়া রাষ্ট্রও শিশুর অপুষ্টিকে দেখিয়াও না-দেখিয়া থাকে। শিশুদের ভোট নাই, ফলে তাহাদের কথা ভাবিবার অবকাশও রাজনীতির নাই। ক্ষুধাসূচক বা ইউনিসেফের সমীক্ষার ন্যায় আন্তর্জাতিক রিপোর্ট প্রকাশিত হইলে দিনকয়েকের লজ্জা, ইহার অধিক ক্ষতি রাজনীতির হয় না।

Hunger Index India BRICS

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।