Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
RTI

এ বার অবগুণ্ঠন

কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন জানাইয়া দিল, রাজনৈতিক অনুদান সংক্রান্ত তথ্য দেশের তথ্যের অধিকার আইনের আওতাভুক্ত নহে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:২৫
Share: Save:

কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন জানাইয়া দিল, রাজনৈতিক অনুদান সংক্রান্ত তথ্য দেশের তথ্যের অধিকার আইনের আওতাভুক্ত নহে। কারণ, সেই তথ্য প্রকাশ করিলে দাতা ও গ্রহীতার গোপনীয়তার অধিকার খণ্ডিত হইবে। ইহা সত্য যে, কোন ব্যক্তি কোন রাজনৈতিক দলকে অর্থসাহায্য করিতেছেন, সেই তথ্য জনসমক্ষে আসিলে সেই ব্যক্তির সমস্যা হইতে পারে— বিশেষত, সেই দানের প্রাপক যদি কোনও বিরোধী দল হয়, তবে দাতাকে শাসকের রোষানলে পড়িতে হইতে পারে। সেই ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটি দাতা বা গ্রহীতা, কাহারও পক্ষেই ভাল হইবে না। কিন্তু, রাজনৈতিক অনুদানের যে হিসাব দলগুলি দিয়াছে, তাহাতে স্পষ্ট— বিরোধী দলকে অনুদান দেওয়ার মতো অজ্ঞাতপরিচয় দাতার কিঞ্চিৎ অভাব আছে। ইলেক্টরাল বন্ডের মাধ্যমে অনুদানের পরিমাণ ২০,০০০ টাকার কম হইলে দাতার পরিচয় গোপন রাখা চলে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে দেশে মোট যত টাকার এমন ইলেক্টরাল বন্ড কেনা হইয়াছিল, তাহার ৬১ শতাংশই গিয়াছিল বিজেপির ঝুলিতে। এবং, বিজেপি মোট যত রাজনৈতিক অনুদান পাইয়াছিল, তাহার ৬০ শতাংশ আসিয়াছিল এই অজ্ঞাতপরিচয় দাতার ইলেক্টরাল বন্ডের মাধ্যমে। সুতরাং, দাতার তথ্য গোপন রাখিলে অন্যান্য দলের যতখানি সুবিধা, বিজেপির সুবিধা সেই অনুপাতে বহু গুণ। সুতরাং, তথ্য কমিশনের সিদ্ধান্তটিকে রাজনীতি-নিরপেক্ষ ভাবে দেখিবার সুযোগ, দুর্ভাগ্যবশত নাই।

কিন্তু, প্রশ্নটি বিজেপির রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক লাভের তুলনায় বড়। প্রশ্ন হইল, ইলেক্টরাল বন্ডের লেনদেনের ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতার স্বার্থের তুলনায় জাতীয় স্বার্থ অনেক বড় নহে কি? ২০১৮ সালে যখন এই ইলেক্টরাল বন্ড প্রকল্পটি গৃহীত হয়, তখনই আপত্তি উঠিয়াছিল যে, দাতার পরিচয় গোপন রাখিবার অর্থ, সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটিকেই অস্বচ্ছ করিয়া তোলা। আশঙ্কা করিবার কারণ আছে যে, অজস্র সাধারণ মানুষ নহেন, এই ইলেক্টরাল বন্ড কেনা হইতেছে কিছু নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সংস্থার তরফে। এবং, কে টাকা দিতেছেন, সেই তথ্যটি ব্যাঙ্ক বা তথ্য কমিশন জনসাধারণের নিকট গোপন রাখিলেও শাসক দলের নিকট তথ্যটি অজ্ঞাত নহে। যাঁহারা দিতেছেন, তাঁহারাই জানাইতেছেন। এবং, এই সন্দেহেরও কারণ আছে যে, সেই অর্থ নেহাত ভালবাসার দান নহে— এই টাকার বিনিময়ে সেই ব্যক্তি বা সংস্থা সরকারের নিকট হইতে সুবিধা কিনিতেছে। টাকার অঙ্কটি কম নহে— ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পূর্বে ‘অজ্ঞাতপরিচয় দাতা’র অনুদান মারফত বিজেপি ১৪৫০ কোটি টাকা পাইয়াছিল।

আশঙ্কাগুলি যদি সত্য হয়, তবে এই পরিস্থিতি প্রত্যক্ষ ভাবে গণতন্ত্রের পরিপন্থী। কোনও ব্যক্তি বা সংস্থা টাকার বিনিময়ে সরকারের আনুকূল্য কিনিয়া লইলে আর সমদর্শী সরকার, সর্বজনীন উন্নয়ন ইত্যাদি কথার কোনও অর্থই থাকে না। ক্ষমতাসীন দলকে মুখ লুকাইয়া অর্থসাহায্য করিবার, এবং বিনিময়ে আনুকূল্য লাভ করিবার ব্যবস্থা থাকিলে তাহা বিরোধী দলগুলিকে অধিকতর প্রতিকূল পরিস্থিতির দিকে ঠেলিয়া দেয়। ভারতে গত দুই বৎসরে তেমন ঘটনাই ঘটিতেছে, কেহ এমন অভিযোগ করিলে তাহা খণ্ডাইবার উপায় আছে কি? এক্ষণে একটিই কর্তব্য— এই রাজনৈতিক অনুদানের অবগুণ্ঠনটি মোচন করা। কে বিজেপিকে টাকা দিবেন, আর কে এসইউসিআইসি-কে, তাহা নিতান্তই ব্যক্তির নিজস্ব সিদ্ধান্ত। কিন্তু, কে কাহাকে টাকা দিতেছেন, সেই তথ্যটি প্রকাশ্যে থাকিলে বোঝা সম্ভব হইবে, অন্যায় সুবিধার লেনদেন হইতেছে কি না। সেই লেনদেনের পথ বন্ধ হইলে আর কিছু না হউক, রাজনৈতিক লড়াইয়ের ময়দানটি সমানতর হইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

RTI Political parties Funds
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy