চিকিৎসার অভাব নহে, তাহার আধিক্য লইয়া উদ্বেগ দেখা দিয়াছে। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প গ্রহণ না করিলেও ‘সিজ়ারিয়ান’ প্রসবের বাড়াবাড়ি দেখিয়া পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য দফতর এই প্রবণতার ‘অডিট’ করিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে। অকারণ অস্ত্রোপচারে মা এবং নবজাতক, উভয়েরই দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যা হইতে পারে, এমনকি মৃত্যুর সম্ভাবনাও বাড়িতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রসবের জন্য অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হইতে পারে বড়জোর পনেরো শতাংশ ক্ষেত্রে। ভারতে সিজ়ারিয়ানের গড় হার সতেরো শতাংশ ছাড়াইয়াছে বহু পূর্বে। বড় শহরগুলিতে ওই হার কোথাও মোট প্রসবের অর্ধেক, কোথাও এক-তৃতীয়াংশ। এই অতিরিক্ত হারের জন্য প্রধানত বেসরকারি হাসপাতালকে দায়ী করা হইয়া থাকে। অবস্থাপন্ন পরিবারের প্রসূতিরা কখনও প্রসবযন্ত্রণার ভীতির কারণে, কখনও বা অস্ত্রোপচারকে অধিক ‘ঝুঁকিহীন’ মনে করিয়া সিজ়ারিয়ান দাবি করিতেছেন, চিকিৎসকও বাড়তি আয়ের আশায় তাহাতে উৎসাহ দিতেছেন, এই সম্ভাবনাই অধিক আলোচিত হইয়াছে। কিন্তু সরকারি হাসপাতালেও দ্রুত বাড়িতেছে অস্ত্রোপচারের হার। গত বারো বৎসরে সরকারি হাসপাতালে সিজ়ারিয়ান অস্ত্রোপচারের সংখ্যাবৃদ্ধি তিনশো শতাংশ। কেন, স্বাস্থ্যনীতির নিকট ইহা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
কেন্দ্রের স্বাস্থ্য দফতরের মতে, কেবল চিকিৎসকদের কাঠগড়ায় তুলিয়া লাভ নাই। সরকারি হাসপাতালের ‘লেবার রুম’ অর্থাৎ প্রসবগৃহের পরিস্থিতি স্বাভাবিক প্রসবের অনুকূল করিতে হইবে। সহায়ক পরিবেশ পাইলে ব্যথা কমাইবার জন্য দেহের নিজস্ব প্রক্রিয়াগুলি সক্রিয় হইয়া ওঠে। জীবজগতের মতোই, মানবজগতেও সন্তানের জন্ম দিবার পরে মা শিশুকে লইয়া স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়া যায়। হাসপাতালের আপৎকালীন চিকিৎসা নবজাতক ও প্রসূতিকে অকালমৃত্যু হইতে বাঁচাইয়াছে। কিন্তু হাসপাতালে দরিদ্র প্রসূতির প্রতি চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের দুর্ব্যবহার, লেবার রুমের উৎকণ্ঠা ও ব্যস্ততা, চিকিৎসকের কর্তব্যের বিপুল বোঝা, এই সকলই মায়ের মধ্যে উদ্বেগ ও ভয়ের সঞ্চার করে, যাহা স্বাভাবিক প্রসবকে প্রতিহত করে, এই সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিয়া দেখিতেছে কেন্দ্র। এই কারণে কেন্দ্র সুরক্ষিত প্রসবের একটি নূতন প্রকল্পের অধীনে প্রসবগৃহে স্বাভাবিক প্রসবের সহায়ক পরিবেশ গড়িতে উদ্যোগী হইয়াছে।
এই উদ্যোগ স্বাগত। প্রসব একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া, ‘অসুখ’ নহে। প্রসূতির পর্যবেক্ষণ, প্রয়োজনে দ্রুত অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা, ইহাই কাম্য। অতএব সিজ়ারিয়ান অস্ত্রোপচার কমাইবার চেষ্টাকে স্বাগত জানাইতে হইবে। তাহার জন্য চিকিৎসক, চিকিৎসাকর্মী ও প্রসূতি, সকলকেই স্বাভাবিক প্রসবের উপযোগী মানসিকতা তৈরি করিতে হইবে। সরকার পরিসংখ্যান সংগ্রহ করিতেছে এবং প্রয়োজনে কৈফিয়ত তলব করিতে পারে, এই তথ্যটিই বহু অতি-উৎসাহী চিকিৎসককে সংযত করিবে। সেই সঙ্গে সরকারি হাসপাতালে লেবার রুমকে প্রসূতি-বান্ধব করাও প্রয়োজন। প্রশ্ন একটিই, বেসরকারি হাসপাতালের নিকটও কি অডিট তলব করিবে না স্বাস্থ্য দফতর? চিকিৎসা কেবল ভোগ্যপণ্য নহে, অপচিকিৎসার ফল ভুগিতে হয় গোটা সমাজকে। নবজাতকের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করিবার দায় সকলের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy