Advertisement
২১ নভেম্বর ২০২৪
Indian Transport Sector

Indian Transport Sector: দেশের পরিবহণ ক্ষেত্রের মূল সমস্যাগুলি কোথায়, সমাধান কি আদৌ সম্ভব?

ভারতে পরিবহণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগ আর তা থেকে আয়ের মধ্যে বিরাট ফারাক। এই দূরত্ব দূর করে কি পরিবহণে সুদিন আসবে?

পরিবহণে লোকসানের দিন কি ফুরোবে?

পরিবহণে লোকসানের দিন কি ফুরোবে? গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

টি এন নাইনান
টি এন নাইনান
শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২২ ১৫:৩৩
Share: Save:

ভারতের পরিবহণ ক্ষেত্র থেকে আয়ের ব্যাপারে এক অদ্ভুত রীতি লক্ষ করা যায়। এই ক্ষেত্র থেকে আয় বেশির ভাগ সময়েই কম, বা একেবারেই হয় না। তার উপরে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের ব্যাপারে এক অভাবনীয় টাকার অঙ্ক এই ক্ষেত্র দাবি করে। বিপুল পরিমাণ অর্থ যাবতীয় রকমের পরিবহণ মাধ্যমে বছরের পর বছর বিনিয়োগ করার পরের দুই বা তিন বছর বিমান, হাইওয়ে বা এক্সপ্রেসওয়ের মতো সড়কপথ এবং রেলপথে কিছু মাত্রায় পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। বাকিটুকুর জন্য আশা জিইয়ে রাখতে হয়।

এ সত্ত্বেও, বেশ কিছু বৈপরিত্য কিছুতেই দূর হয় না। কোনও ভারতীয় বিমান সংস্থাই লাভের মুখ দেখে না এবং আকাশপথে ঘটে চলা বিভিন্ন ‘ঘটনা’ যাত্রী-নিরাপত্তাকে এমন সময়ে প্রশ্নের সম্মুখীন করে তোলে, যখন অতিমারি কাটিয়ে সংস্থাগুলি সবে একটু আশার আলো দেখতে পেয়েছে। তবুও নতুন বিমান পরিবহণ সংস্থায় বিনিয়োগের বিষয়টি সে অর্থে কোনও বিশেষ আশা জাগাতে পারেনি। ‘আকাশ’ সবে এক ‘অতিরিক্ত মাত্রায় সস্তা’ বিমান সংস্থা হিসেবে তার যাত্রা শুরু করেছে এবং ৭২টি বিমানের বরাত দিয়েছে। ইন্ডিগো এই ক্ষেত্রের অগ্রণী সংস্থা হিসেবে ২৭৫টি বিমানের মালিক এবং প্রায় ৭০০ বিমানের বরাত তারা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু বেতন কমানোর কারণে এই মুহূর্তে তাদের কর্মীরা বেশ অসন্তুষ্ট। আবার এয়ার ইন্ডিয়ার নতুন মালিকানা (২০০৬-এর কুখ্যাত বিমান ক্রয়ের পর থেকে যদিও এই সংস্থা নতুন কোনও বিমানের বরাত দেয়নি) তাদের বিমানবহরের পুনর্বিন্যাস নিয়ে ভাবছে এবং ৩০০টি বিমানের বরাত দিয়েছে (তাদের বর্তমান বিমান সংখ্যা ১২০)।

সব মিলিয়ে, বরাতের সংখ্যার দিকে তাকালে বোঝা যাচ্ছে যে, বিমানের বর্তমান সংখ্যার (৬৬৫) প্রায় দ্বিগুণ বিমান দেশে আসতে চলেছে। বরাত দেওয়া বিমানগুলি ধাপে ধাপে হাতে আসবে এবং তাদের বেশির ভাগই বর্তমানে চালু থাকা বিমানগুলির পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে। কিন্তু চাহিদা বৃদ্ধির তুলনায় এই পরিসংখ্যান যে সংস্থাগুলির সামর্থ্যের মাত্রাকেও বাড়াবে, সে কথা বলা যায়। সেই সঙ্গে বিমান মাশুল যে বাড়বে, তা আশা করা যায় এবং তারই অনুষঙ্গে আসবে ক্ষতি। বিশেষ করে যদি জ্বালানি তেলের দাম বাড়তির দিকে থাকে এবং রাজস্বের মাত্রাও তথৈবচ হয়ে থাকে, তবে ক্ষতি সুনিশ্চিত। বর্তমানে চালু থাকা বিমান সংস্থাগুলির মধ্যে এক বা একাধিক সংস্থা জেট, কিংফিশার ইত্যাদির মতো মুখ থুবড়ে পড়বে।

একই ভাবে রেল পরিবহণের ক্ষেত্রেও বার্ষিক বিনিয়োগের পরিমাণ অভূতপূর্ব। মোট দেশজ উৎপাদন(জিডিপি)-এর এক শতাংশের কাছাকাছি। এই ক্ষেত্রে ‘সেমি হাইস্পিড’ প্যাসেঞ্জার ট্রেন, যা ঘণ্টায় গড়ে ১০০ কিলোমিটার যেতে পারে (এত কাল ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটারের সীমাতে আবদ্ধ ছিল), তা চালু করার ব্যবস্থা হচ্ছে। পর্যটকদের আকর্ষণের জন্য ভিস্তাডোম কামরা চালু করা হচ্ছে মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য সম্বলিত এলাকার জন্য এবং রেল স্টেশনগুলির উন্নতিসাধনের উদ্দেশ্যে বড় ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই সব পরিবর্তন অবশ্য কাঙ্ক্ষিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হবে না। কারণ, একান্ত ভাবে এই কাজের জন্যই নির্মিত ‘ফ্রেট করিডর’ (যে রেলপথ দিয়ে দ্রুতগামী মালবাহী ট্রেন যেতে পারে)নির্মাণের গতি বেশ ধীর এবং প্রাথমিক স্তরে আনুমানিক হিসাবের সীমা অতিক্রম করে গিয়েছে। কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্যময় ভ্রমণ এবং আন্তঃশহর দ্রুতগামী ট্রেন পরিষেবা যে আসন্ন, তা বোঝা যাচ্ছে। এবং এই লক্ষ্য পূরণ হলে রেল স্বল্প দূরত্বের ক্ষেত্রে বিমানের সঙ্গে পাল্লা দেবে বলেই মনে হয়।

কিন্তু এর মধ্যেও কিছু সমস্যা থেকে যাচ্ছে। মনে রাখা দরকার, এই পুরো বিষয়টিই ঘটছে অলাভজনক এক যাত্রী-পরিষেবার প্রেক্ষিতে দাঁড়িয়ে। যার পাশাপাশি রয়েছে পণ্য পরিবহণ পরিষেবা নির্মাণে শ্লথতা এবং ব্যয়ের সাপেক্ষে আয়কে সমান সমান করে তোলার সমস্যা (সহজে পরিবর্তনযোগ্য বিনিয়োগের হিসেবের সাপেক্ষে)। এই প্রবণতাগুলি হয়তো বদলাতে পারে, কিন্তু রেলপথে বার্ষিক বিনিয়োগের পরিমাণ বর্তমানে এই ক্ষেত্র থেকে আয়ের সমান। প্রায় কোনও বিনিয়োগই চালু উদ্বৃত্ত থেকে করা হচ্ছে না এবং এর একটি লক্ষণীয় অংশ আসছে বাইরের উৎস থেকে, যা ক্রমে ঋণের পাহাড় খাড়া করে দিতে পারে। এবং বলাই বাহুল্য, বাজেটের বরাদ্দ থেকে রেলপথে বিনিয়োগের বৃহদাংশ বজায় থাকবে।

সড়কপথ এবং রাজপথ পরিবহণে বিনিয়োগের পরিমাণ রেলপথে লগ্নির প্রায় অর্ধেক (জিডিপি-র ০.৫ শতাংশ)। কিন্তু তা থেকে আয়ের সঙ্গে বিনিয়োগের আনুপাতিক চেহারাটি মোটেই সুখকর নয়। বিনিয়োগ সেখানে আয়ের প্রায় নয় গুণ। বিনিয়োগের উদ্যোগ শুরু হওয়ার আগে লগ্নি এবং আয় প্রায় সমান ছিল। কিন্তু যখন দেশ হাইওয়ে থেকে এক্সপ্রেসওয়ের দিকে তার দৃষ্টি ফেরাল এবং পণ্য ও পরিষেবা কর (জিএসটি)-কে কাজে লাগিয়ে যখন ‘ইন্টার মোডাল’ (যেখানে পণ্য এক এবং অভিন্ন বিন্দু থেকে পরিবহণের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং বিভিন্ন প্রকার পরিবহণ মাধ্যমকে ব্যবহার করে) ট্রাফিক কেন্দ্র এবং বন্দরগুলিকে সংযোগের উদ্যোগ নিল, যাতে দেশের পরিকাঠামোগত চিরাচরিত সমস্যার সমাধান করা যায়, তখন পরিবহণে গতি এলেও ট্রাক পরিষেবার ক্ষেত্রে তেমন আশার আলো দেখা গেল না।

পুনরায় বিনিয়োগের প্রশ্নে ফিরে আসা কিন্তু দেশের পরিবহণ পরিকাঠামোর প্রাথমিক যাত্রারেখা নির্মাণের ব্যাপারে লগ্নির সিদ্ধান্তকে বোঝায় না। সেই কারণেই তা বাণিজ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে বাজেটের দ্বারা সম্ভব করে তোলার একটি প্রয়াস দেখা যায়। মনে রাখতে হবে যে, ভারত পাঁচ বছর বা তার বেশি সময় স্বল্প উন্নতির বা উন্নতিহীন অবস্থাকে পরিবহণের প্রায় সব ক’টি ক্ষেত্রেই দেখতে পেয়েছে। একই সঙ্গে এ-ও মনে রাখতে হবে যে, পরিবহণ ক্ষেত্রে উন্নতি কিন্তু বিনিয়োগের সঙ্গে সাযুজ্যকে দৃশ্যমান করে তুলবে। নয়তো, সরকারের স্থাবর সম্পত্তির নগদীকরণের পরিকল্পনা আশানুরূপ ফল দেবে না। যাই হোক, আশাকে জীবিত রাখতে তো দোষ নেই!

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy