Advertisement
E-Paper

করের হার কমলে রাজস্ব বাড়ে?

ঋষি বলছেন যে, এখন কর কমালে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, কারণ লোকেদের হাতে বেশি টাকা আসার দরুন জিনিসপত্রের জোগানের তুলনায় চাহিদা বাড়বে।

পরন্তপ বসু

পরন্তপ বসু

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০২২ ০৫:১০
Share
Save

বরিস জনসনের পরিবর্ত হিসেবে টোরি পার্টির সাংসদরা প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য যে আট জন প্রার্থীকে বেছে নিলেন, তাঁদের মধ্যে এখন দু’জন চূড়ান্ত প্রতিযোগী— প্রাক্তন চ্যান্সেলর অব এক্সচেকার ঋষি সুনক এবং সেক্রেটারি অব স্টেট ফর ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট অ্যাফেয়ার্স লিজ় ট্রাস (ছবি)।

অতিমারির পর রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ আর তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে ব্রিটেনের অর্থব্যবস্থা পর্যুদস্ত। মূল্যবৃদ্ধির হার ১০%। এই পরিপ্রেক্ষিতে দু’জন প্রতিদ্বন্দ্বী দু’রকমের পথনির্দেশ দিচ্ছেন। লিজ় বলছেন আয়কর আরও কমাতে। ঋষি চ্যান্সেলর থাকার সময় শিল্পে আয়করের হার ১৯% থেকে বাড়িয়ে ২৫% করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সেটি কার্যকর হওয়ার কথা ২০২৩ সালে। লিজ় বলছেন, এই ধরনের কর অর্থব্যবস্থার ক্ষতি করবে— এতে বিনিয়োগ কমবে, উৎপাদন কমবে, বৃদ্ধি কমবে, ফলে মূল্যবৃদ্ধির হার আরও বেড়ে যাবে। এই মুহূর্তে তেলের দাম বাড়ার ফলে ব্রিটেনে জ্বালানির খরচ অনেক বেড়েছে; তার উপরে চেপেছে ‘সবুজ প্রকল্প’গুলিকে অনুদান দেওয়ার জন্য আলাদা কর। লিজ় এই ‘সবুজ কর’ বন্ধ করার কথাও বলেছেন। বিলেতের জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ক্রমবর্ধমান ব্যয় দেশের লোকের উপরে কর ধার্য করে চালানো হয়। এ বছরের এপ্রিলে এই কর বেড়েছে। লিজ় প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন এই কর কমানোর। এ ছাড়াও বলছেন নিয়মকানুন শিথিল করার কথা, যাতে শিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ে।

এই প্রেক্ষাপটে ঋষি বলছেন যে, ব্রিটেনে কর কমানোর এখনও সময় আসেনি। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে এলে তবেই কর কমানো হবে। তবে তিনি বলছেন, শিল্পকর বাড়ানো হবে অভিনব ভাবে। সরকারি সংস্থার বেতন একটি নিরপেক্ষ পে কমিশনের সুপারিশে ধার্য করা হবে। তবে, তিনিও আইনকানুন শিথিল করে বাণিজ্যের পথ সুগম করবেন বলেছেন।

মূল তর্ক তা হলে কর কমানো বা না-কমানো নিয়ে। কর কমিয়ে অর্থব্যবস্থাকে চাঙ্গা করার নির্দেশিকা কতটা কার্যকর? আশির দশকে আমেরিকায় রোনাল্ড রেগনের আমলে কর কমিয়ে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এই নীতির মূল কথা হল, কর কমালে বিনিয়োগ এবং উৎপাদন বাড়বে। তার ফলে দেশের জাতীয় আয় বাড়বে, চাকরি বাড়বে। কিন্তু সরকারি রাজস্ব কি বাড়বে? সরকারি রাজস্ব হল গড় করের হার আর জাতীয় আয়ের গুণফল। দেশে যত উৎপাদন বাড়বে, জাতীয় আয়ও বৃদ্ধি পাবে। যদি গড় আয়কর দশ শতাংশ কমে আর উৎপাদন মাত্র পাঁচ শতাংশ বাড়ে, রাজস্ব পাঁচ শতাংশ কমবে। সুতরাং, রাজস্ব বাড়াতে হলে আয়কর যে হারে কমছে, তার থেকে দেশের উৎপাদন অধিক হারে বাড়ানো প্রয়োজন।

অর্থশাস্ত্রের তত্ত্ব বলে, গড় আয়কর যদি খুব বেশি হয়, তবে করের হার কমাতে থাকলে একটা নির্দিষ্ট হার অবধি রাজস্ব বাড়বে। করের হার তার চেয়েও কমালে রাজস্ব কমতে শুরু করবে। আয়করের হার যদি খুবই চড়া হয়, তবে শিল্পপতিদের বিনিয়োগ আর উৎপাদনের স্পৃহা কমে যায়, মানুষের কাজ করার প্রবণতাও কমে। কী হবে খাটাখাটনি করে উৎপাদন বাড়িয়ে, যদি সরকার আয়ের সিংহভাগই কেড়ে নেয়? আবার, করের হার খুব কম হলে উৎপাদন বাড়লেও রাজস্বের পরিমাণ কমে।

রেগনের আমলে কর কমানোর নীতি কাজ করেছিল। ১৯৮১ এবং ১৯৮৬ সালে দু’টি ঐতিহাসিক বিলে রেগন উচ্চতম প্রান্তিক কর ৭০% থেকে কমিয়ে ৩৮.৫% করেছিলেন। মূলধনি আয়ের উপরও কর কমিয়েছিলেন। ১৯৮০ থেকে ১৯৯০ সালের মধ্যে রাজস্ব প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। তবে, একই সঙ্গে অর্থনৈতিক বৈষম্যও বেড়েছিল।

এই মুহূর্তে ব্রিটেনে আয়করের চারটি স্তর আছে। বার্ষিক ১২৫৭০ পাউন্ডের নীচে যাঁরা উপার্জন করেন, তাঁরা করমুক্ত। ১২৫৭১-৫০২৭০ পাউন্ডের মধ্যে যাঁদের উপার্জন, তাঁদের প্রান্তিক আয়করের হার আয়ের ২০%। ৫০২৭১-১৫০,০০০ পাউন্ডের মধ্যে আয় হলে করের হার ৪০%। এর উপরে করের হার ৪৫%। আমেরিকায় ২০২২ সালে সর্বোচ্চ প্রান্তিক করের হার ৩৭%। সুতরাং, ব্রিটেন সেই তুলনায় একটি উচ্চ করের দেশ। কাজেই, করের হার হ্রাস পেলে রাজস্ব বাড়ার সম্ভাবনা হয়তো আছে।

ঋষি বলছেন যে, এখন কর কমালে মূল্যস্ফীতি বাড়বে, কারণ লোকেদের হাতে বেশি টাকা আসার দরুন জিনিসপত্রের জোগানের তুলনায় চাহিদা বাড়বে। কথাটা উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। তবে, ব্রিটেনে বর্তমান মূল্যবৃদ্ধির কারণ ব্রেক্সিটের ফলে জোগান-শৃঙ্খলের বিশৃঙ্খলা, আর যুদ্ধের জন্য তেলের মূল্যবৃদ্ধি। এই মুহূর্তে ব্রিটেনের নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত মানুষ কষ্টে রয়েছেন। অনেক মানুষ অতিমারির সঙ্কটে কাজ হারিয়েছেন। এই সমস্ত ক্ষতিগ্রস্ত শাখাগুলিতে অনুদানের ভীষণ প্রয়োজন। উঁচু আয়ের লোকেদের উপর কর বাড়িয়ে মধ্য এবং নিম্ন আয়ের এই মানুষদের অনুদান দেওয়া খুব জরুরি। এ সব ব্যাপারে ঋষি প্রকাশ্যে কিছু নির্দেশিকা দিচ্ছেন না এখনও অবধি।

লিজ়ের কর কমানোর নীতি টোরি পার্টির অর্থনৈতিক দর্শনের সঙ্গে মেলে। অন্য দিকে, ঋষি সাবধানি পথ নিচ্ছেন। কর বাড়াবেন না কমাবেন, সে সম্বন্ধে সুস্পষ্ট কিছু বলছেন না। চ্যান্সেলর থাকাকালীন তিনি আয়কর বাড়িয়েছিলেন, যা অনেক টোরি সদস্যকে অসন্তুষ্ট করেছে। লিজ় না ঋষি, কে হবে ব্রিটেনের কর্ণধার? সেটি দেশের টোরি পার্টির ১৬০,০০০-এর বেশি সমর্থক ভোট দিয়ে নির্ধারণ করবেন সেপ্টেম্বর মাসে।

অর্থনীতি বিভাগ, ডারহাম ইউনিভার্সিটি

Rishi Sunak UK economy

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।