Advertisement
E-Paper

হয়রানিই তা হলে উদ্দেশ্য?

২০১৪ সাল থেকে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, আধার দিয়েই দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব, আধারই একমাত্র মাপকাঠি, যা দিয়ে সঠিক এবং ভুয়ো চিহ্নিত করা যায়।

—ফাইল চিত্র।

সুমন সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৪ ০৮:৫৬
Share
Save

আবার আধার সংক্রান্ত সমস্যা। এ বার রান্নার গ্যাসের সংযোগের সঙ্গে গ্রাহকদের আধারের বায়োমেট্রিক তথ্য যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছিল তেল মন্ত্রক। প্রত্যেক গ্রাহক যেন তাঁর আঙুলের ছাপ, চোখের মণি বা মুখের ছবি দিয়ে, তাঁর নামেই যে গ্যাসের সংযোগ আছে তা যাচাই করিয়ে নেন, তা বলা হয়েছিল সংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশিত খবরে। যদিও সরকারি কোনও বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি, তবুও নানান গ্যাসের ডিলারের সামনে দেখা গেল দীর্ঘ লাইন। খবরে প্রকাশ, খুব দ্রুত এই যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন করতে হবে, কিন্তু না করলে কি গ্যাসের ভর্তুকি বন্ধ হয়ে যাবে, কিংবা গ্যাসের সংযোগ বন্ধ হয়ে যাবে, তা সম্পর্কে কিছুই বলা হল না। বিভ্রান্তি নানা স্তরে, গ্যাসের ডিলার থেকে গ্রাহক সবাই অন্ধকারে। বলা হয়েছিল, এই যাচাইয়ের কাজ হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে, কিন্তু কিছু গ্রাহকের থেকে যে টাকা নেওয়া হচ্ছে, সেই সংক্রান্ত অভিযোগও শোনা যাচ্ছে। কোনও কোনও ডিলার, নিরাপত্তার জন্য, নতুন রবারের পাইপ জোর করে কিনতে বাধ্য করছেন, সেই খবরও পাওয়া যাচ্ছে। কোনও কোনও বণ্টনকারী সংস্থা মোবাইল ফোনের অ্যাপ্লিকেশনের মধ্যে দিয়ে এই কাজ করাচ্ছেন, কেউ বাড়িতে গিয়ে করাচ্ছেন, কিন্তু সর্বত্র এই প্রক্রিয়া চালু হয়নি। ফলত, রোজ গ্রাহকেরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

সরকার যথারীতি এই তথ্য সংগ্রহ নিয়ে কোনও স্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করেনি। বিষয়টা পরিষ্কার, তারা খুব ভাল করে জানে এই তথ্য সংগ্রহ করতে পারলে কার লাভ। যখন মাঝেমধ্যেই খবর পাওয়া যায় বিভিন্ন সরকারি সংস্থায় সংগৃহীত নাগরিকদের তথ্য চুরি হয়েছে, তখন সরকারের তরফে এই গ্যাসের গ্রাহকদের তথ্য আবারও নেওয়ার উদ্দেশ্য কী, সেই প্রশ্ন কি করা উচিত নয়? ভারতের মতো দেশের এত ব্যক্তিগত তথ্য, কোনও সুরক্ষা ছাড়া এই ভাবে নিলে কী বিপদ হতে পারে, তা কিছু দিন আগে বহু মানুষ কিন্তু হাড়েহাড়ে টের পেয়েছিলেন, যখন দেখা গিয়েছিল, তাঁদের ব্যাঙ্কের জমানো টাকা গায়েব হয়ে যাচ্ছে। বাদ যাননি কেউ, সাধারণ মানুষ থেকে টিভির সংবাদপাঠিকাও। তখনও কিন্তু সরকার কোনও দায়িত্ব নেয়নি, উল্টে নাগরিকদের বলা হয়েছে, নিজেদের সাবধানে থাকতে, নিজেদের বায়োমেট্রিক তথ্য সুরক্ষিত রাখতে, তা লক করে রাখতে। এর পর যদি দেখা যায়, এক জন গ্রাহকের সংযোগ ব্যবহার করে, তার ভর্তুকি অন্য গ্রাহকদের অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে, তখন সরকারের তরফ থেকে কি কোনও পদক্ষেপ করা সম্ভব হবে? প্রথম দিকে আধারের সঙ্গে গ্যাসের সংযোগ করার সময়ে, এয়ারটেল পেমেন্টস ব্যাঙ্কের মাধ্যমে এই রকম একটি দুর্নীতির খবর হয়েছিল। তখনও কিন্তু সরকার কোনও দায়িত্ব নেয়নি। এর পর যদি এই রকম কোনও ঘটনা ঘটে, তার দায়িত্ব সরকার নেবে তেমন নিশ্চয়তা আছে কি?

এই সংযোগ প্রক্রিয়াতে যখন বহু মানুষ ইতিমধ্যেই যথেষ্ট অসুবিধার মধ্যে পড়েছেন, তার মধ্যেই আরও একটা খবর পাওয়া গেছে, যা এই পুরো বিষয়টার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত না হয়েও সম্পর্কিত তো বটেই। সরকারের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ব্যাঙ্কের ‘কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট’ থেকে আর শুধু আধার নম্বর এবং আঙুলের ছাপ মিলিয়ে টাকা তোলা যাবে না। অর্থাৎ কার্যত সরকার মেনে নিচ্ছে, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে এক জন ব্যক্তিমানুষের জমানো টাকা চুরি হয়ে যেতে পারে, তাঁর অজানতেই। বায়োমেট্রিক লক করেও এই ব্যাঙ্ক জালিয়াতির থেকে যে নিস্তার নেই বা সাইবার ক্রাইমে গিয়েও যে এর সমাধান নেই, তা তো তা হলে সরকারের পক্ষ থেকে স্বীকার করেই নেওয়া হল। যদি তাই হয়, তা হলে আবার কেন গ্যাসের তথ্য যাচাইয়ের নাম করে, বিপুল সংখ্যক গ্রাহকদের থেকে বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে?

২০১৪ সাল থেকে আমাদের বোঝানোর চেষ্টা হয়েছে, আধার দিয়েই দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব, আধারই একমাত্র মাপকাঠি, যা দিয়ে সঠিক এবং ভুয়ো চিহ্নিত করা যায়। কিন্তু সাম্প্রতিক বেশ কিছু ঘটনা আধার নিয়েই বিপুল প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন করছেন, এই প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে দুর্নীতির নতুন দিক খুলে যাবে না তো? নাগরিককে ভরসা দেওয়ার বদলে, প্রতি দিন যদি তাঁকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ঠেলে দেওয়া হয়, সে কি সরকারের সুবিবেচনা? যে প্রাথমিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে বেশির ভাগ মানুষ আধার নম্বর পেয়েছিলেন সরকারের তরফ থেকে, সেই প্যানের সঙ্গে আধার সংযোগ না করানোর মাসুল হিসেবে বেশ কিছু করদাতাকে জরিমানাও করা হয়েছে। এর পর গ্যাসের সংযোগের সঙ্গে আধারের বায়োমেট্রিক তথ্য যুক্ত না করলে, কী ধরনের সমস্যা হতে পারে, তা এই মুহূর্তে আবছা।

সবচেয়ে বড় কথা, কোনও বিরোধী রাজনৈতিক দলই এই বিষয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করছে না। যেন এটা কোনও সমস্যাই নয়। তা হলে কি ধরে নেওয়া যায়, নির্বাচনী প্রচারেও এই বিষয়ে কথা হবে না? সমস্ত ব্যক্তিনাগরিক যে তিমিরে থাকার, সেই তিমিরেই থাকবেন?

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

aadhaar card Central Government

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}