Advertisement
২১ ডিসেম্বর ২০২৪
Financial Fraud

জালিয়াতির ফাঁদ পাতা ভুবনে

কয়েক দিন আগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বীরভূমের একাধিক সমবায় ব্যাঙ্কে হানা দিয়ে দু’টি পর্যায়ে তিনশোরও বেশি ভুয়ো অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছে।

 People are being trapped in several financial fraud cases

সাইবার অপরাধে প্রতি মুহূর্তে এমন নতুন নতুন পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে যে, পুরোপুরি নিরাপত্তা হয়তো সম্ভব নয়। প্রতীকী ছবি।

তূর্য বাইন
শেষ আপডেট: ০১ মার্চ ২০২৩ ০৪:৩২
Share: Save:

সম্প্রতি কলকাতার এক ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে খোয়া গেল মোটা অঙ্কের টাকা। তিনি কারও সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত কোনও তথ্য, যেমন আধার নম্বর, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর বা মোবাইলে আসা ওটিপি শেয়ার করেননি। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেল, ওই ব্যবসায়ীর মোবাইল ফোন হারিয়ে গিয়েছে, এই মর্মে থানায় ডায়েরি করে তার ভিত্তিতে অপরাধীরা ডুপ্লিকেট সিম কার্ড সংগ্রহ করে। নিশ্চয় পরিচয়জ্ঞাপক অন্যান্য নথি এবং ব্যাঙ্কের তথ্য তারা আগেই হাতিয়েছিল। এর পরের কাজটুকু খুব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে নেওয়া হলেও তাঁর মোবাইলে ব্যাঙ্কের এসএমএস পৌঁছয়নি। কারণ, তত ক্ষণে তাঁর সিম কার্ডটি ডিঅ্যাক্টিভেটেড হয়ে নতুন সিম চালু হয়ে গিয়েছিল। এমন উদাহরণ প্রচুর। বইমেলায় উপহারের প্রলোভনে কুপনে নিজের নাম এবং ফোন নম্বর লিখে দিয়ে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষাধিক টাকা পর্যন্ত খোয়াবার একাধিক অভিযোগও সামনে এসেছে। এ সব ব্যক্তিগত তথ্য নাকি বিক্রি করা হয়েছে জামতাড়া গ্যাং-এর কাছে।

কয়েক দিন আগে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বীরভূমের একাধিক সমবায় ব্যাঙ্কে হানা দিয়ে দু’টি পর্যায়ে প্রায় তিনশোরও বেশি ভুয়ো অ্যাকাউন্টের হদিস পেয়েছে। এই অ্যাকাউন্টগুলো থেকে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। অথচ যাঁদের নামে সেই অ্যাকাউন্টগুলো খোলা হয়েছে, তাঁরা এই সব অ্যাকাউন্টের কথা জানেনই না, লেনদেন করা তো দূর অস্ত্। কেউ কেউ দাবি করেছেন, ব্যাঙ্কের নথিতে স্বাক্ষরটি আদৌ তাঁদের নয়।

ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট খুলতে হলে যে সব ব্যক্তিগত পরিচয়জ্ঞাপক নথি, যেমন আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড প্রভৃতি আবশ্যিক, সেগুলো কী ভাবে ব্যাঙ্কে গেল? আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই সামনে এসেছে নাগরিকদের ব্যক্তিগত নথির নিরাপত্তাহীনতার কথা। যাঁদের নামে ওই অ্যাকাউন্টগুলি খোলা হয়েছিল, তাঁরা জানিয়েছেন, সরকারি দফতরে বা ‘দুয়ারে সরকার’ ক্যাম্পে লক্ষ্মীর ভান্ডার, বিধবা ভাতা, রেশন কার্ড, জাতিগত শংসাপত্র বা প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো নানা সরকারি প্রকল্পের আবেদনপত্রের সঙ্গে আধার, ভোটার কার্ড বা প্যান কার্ডের প্রতিলিপি জমা দিয়েছিলেন। ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলার জন্যে হয়তো ওই নথিগুলোকেই ব্যবহার করা হয়েছিল। তা হলে, মোবাইলের সিম কার্ড তোলা থেকে শুরু করে জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে সাধারণ মানুষ প্রায়শই যে সব ব্যক্তিগত নথি কিংবা তথ্য দিতে বাধ্য হন, পরবর্তী কালে সেগুলি যে অপব্যবহৃত হয়ে বিপদ ডেকে আনবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?

সম্প্রতি শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী দলগুলি যে তদন্ত করছে, তাতে একটা চমকপ্রদ তথ্য সামনে এসেছে। ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অব প্রাইমারি এডুকেশন-এর নামাঙ্কিত একটি ওয়েবসাইটে ২০১৪ সালের টেটের বেশ কিছু পরীক্ষার্থীকে সফল দেখানো হলেও পরে সেই নামগুলি অদৃশ্য হয়ে যায়। অভিযোগ, এটা ছিল আসলে টাকা আদায়ের ফাঁদ। এ ক্ষেত্রে অসফল প্রার্থীকে টাকার বিনিময়ে সফল দেখিয়ে পরে নামগুলো মুছে দেওয়া হয়। ওয়েবসাইটটি সত্যিই পর্ষদের, না কি ভুয়ো, তা এখনও নিশ্চিত করে জানা যায়নি। তবে শুধুমাত্র চাকরিবাকরি নয়, অনলাইন লেনদেন এখন আমাদের প্রাত্যহিকতার অঙ্গ। আর তা করতে গিয়ে মাঝেমধ্যেই প্রতারিত হচ্ছেন অসংখ্য মানুষ। বিশেষ করে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলিতে লেনদেন বা পরিষেবা গ্রহণের সময় যে প্রতারণার ঘটনা ঘটছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার অভ্যন্তরের কর্মীদের একাংশের যোগসাজশ রয়েছে।

এ সব প্রতারণা থেকে মুক্তির কি কোনও উপায় নেই? সাধারণ মানুষ যাতে সাইবার জালিয়াতির শিকার না হন, তার জন্যে বিগত কয়েক বছর ধরে জনসচেতনতামূলক প্রচারে নেমেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাইবার সিকিয়োরিটি সেন্টার অব এক্সেলেন্স। বেশ কিছু প্রচারপুস্তিকাও প্রকাশ করেছে তারা। তাতে ইন্টারনেট ব্রাউজ়িং, ওয়াইফাই ব্যবহার, পাসওয়ার্ড ব্যবস্থাপনা, ইমেল, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের সুরক্ষিত ব্যবহার-সহ আন্তর্জালের সুরক্ষার উপর নানা সতর্কতামূলক পরামর্শ রয়েছে। এমনকি রয়েছে সাইবার ক্রাইমের শিকার হলে প্রতিকারের জন্য কোথায় কী ভাবে জানাতে হবে, তার সুলুকসন্ধানও।

তবে সাইবার অপরাধে প্রতি মুহূর্তে এমন নতুন নতুন পদ্ধতির ব্যবহার হচ্ছে যে, পুরোপুরি নিরাপত্তা হয়তো সম্ভব নয়। বিশেষ করে যেখানে সর্ষের মধ্যেই ভূত, সেখানে এ ধরনের সংগঠিত অপরাধ নিশ্ছিদ্র ভাবে বন্ধ করা সত্যিই দুরূহ। তাই অপরাধীদের দ্রুত শনাক্তকরণ এবং দ্রুততর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের পরিকাঠামো গঠন করা প্রয়োজন। বিদ্যালয় পাঠ্যক্রমে আন্তর্জাল সুরক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় কি না, সেটাও ভেবে দেখা দরকার। তবে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন নাগরিক সচেতনতার। আত্মসচেতনতার চেয়ে বড় সুরক্ষাকবচ আর কী বা হতে পারে?

অন্য বিষয়গুলি:

Financial Fraud Scam Cyber Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy