—প্রতীকী ছবি।
আজকের ভারতের অবস্থা ব্রিটিশ শাসনের সময়ের থেকেও খারাপ, বলছে ওয়ার্ল্ড ইনইকোয়ালিটি ল্যাব রিপোর্ট। এখন ভারতের মাত্র এক শতাংশ বড়লোকের হাতে দেশের চল্লিশ শতাংশ সম্পদ! ভারত স্বাধীন হওয়ার সময়ে এক শতাংশ বড়লোকের হাতে ছিল দেশের মোট সম্পদের পনেরো শতাংশেরও কম। তা হলে স্বীকার করতেই হবে, সম্পদ বণ্টনের অসাম্য বেড়েছে। কোভিডের পরবর্তী বছর, মানে ২০২২-২৩, এই এক বছরেই ওই অতিধনী এক শতাংশের সম্পদ এক লাফে বেড়েছে বাইশ শতাংশেরও বেশি। যে সরকার এই সম্প্রদায়কে এমন সুযোগ করে দিয়েছে, তার দলপতির কথায় যে ওই অতিধনীরা প্রভাবিত হবেন, তাতে আশ্চর্য কী?
স্বাধীনতার পর থেকে ১৯৮০ সাল অবধি ধনবণ্টনের অসাম্য কিছুটা হলেও কমেছিল, জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদরাই। ১৯৮০-র পর থেকে আবার তা বাড়তে বাড়তে অসমান ব্যবস্থা চরমে যেতে শুরু করে ২০০০ সালের গোড়ার দিক থেকে।
দেশের প্রায় অর্ধেক সম্পদ মাত্র ১ শতাংশ বড়লোক কুক্ষিগত করে রেখেছেন, এই মুহূর্তে বিশ্বের প্রায় কোথাও এমন দেখা যাচ্ছে না। ইউরোপ, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলির কথা ছেড়েই দেওয়া যাক, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজ়িল, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কোথাও না। চরম অসমান ব্যবস্থা আছে যে সব দেশে, তাদের মধ্যে পেরু, ইয়েমেন প্রভৃতি মাত্র কয়েকটি দেশের নাম করা চলে। এখন তাদের সারিতেই চলে এসেছে ভারত।
বিশ্বায়নের অর্থনীতি থেকে সত্যিকারের সুবিধা যদি ধনী-নির্ধন সব ভারতবাসীকে পেতে হয়, তা হলে দু’টি কাজ করতে হবে, বলছে প্যারিসের ওই সংস্থার রিপোর্ট। প্রথম কাজ হল, আয় এবং সম্পত্তি উভয়কেই করের আওতায় আনতে হবে। আর দ্বিতীয় কথা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা আর পুষ্টি এই তিনটি খাতেই যথেষ্ট সরকারি বিনিয়োগ করতে হবে। ওই সমীক্ষা আরও বলেছে, যদি এ দেশের ১৬৭টি বিপুল ধনী পরিবারের রোজগারের উপর মাত্র দু’শতাংশ কর ধার্য করা যায়, তা হলে তা থেকে ০.৫ শতাংশ জাতীয় আয়ের সমতুল টাকা পাবে সরকার!
এ দেশের এক শতাংশ বিপুল ধনীদের মধ্যে যে হারে সম্পদ জমা হচ্ছে, তেমন হারেই সম্পদ বাড়তে দেখা যাচ্ছে ভারতের সর্বোচ্চ দশ শতাংশ ধনীর মধ্যেও। ১৯৫০ থেকে ১৯৮০, এই ত্রিশ বছরে কিন্তু ছবিটা অন্য রকম ছিল। তখন ওই শীর্ষের দশ শতাংশ ধনীদের মোট আয়ের অনুপাত কমছিল— ১৯৫০ সালে জাতীয় আয়ের চল্লিশ শতাংশ থেকে কমতে কমতে ১৯৮২ সালে ত্রিশ শতাংশ। ১৯৯১ সালে মুক্ত অর্থনীতির পরে ফের তাদের সমৃদ্ধির দিন শুরু— ২০২২ সাল নাগাদ তাদের আয়ের অনুপাত পৌঁছে গেল জাতীয় আয়ের ৬০ শতাংশে!
এই তীব্র অসাম্যের যে বিষময় ফল হওয়ার কথা, তা-ই হয়েছে। মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন স্পষ্টই বলেছেন, বেকারত্বের মতো সামাজিক ও আর্থিক সমস্যার সমাধান করা সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়।
কিছু দিন আগে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) এবং দি ইনস্টিটিউট ফর হিউম্যান ডেভলপমেন্ট ভারতের কর্মসংস্থান নিয়ে ‘ইন্ডিয়া এমপ্লয়মেন্ট রিপোর্ট-২০২৪’ প্রকাশ করেছিল। তাতে দেখা যাচ্ছে, দেশে বেকারদের মধ্যে এখন তিরাশি শতাংশই তরুণ-তরুণী বা যুবক-যুবতী। তাঁদের সিংহভাগই পড়াশোনা-জানা, বা শিক্ষিত। রিপোর্ট অনুযায়ী, বেকার তরুণদের মধ্যে শিক্ষিতদের ভাগ ২০০০ সালে ছিল পঁয়ত্রিশ শতাংশ, কিন্তু ২০২২ সালে তা পঁয়ষট্টি শতাংশ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই সব সামাজিক ও আর্থিক চ্যালেঞ্জের সমাধান করতে না পেরে, অব্যবস্থাটিকে মনোগ্রাহী রং করে বিপণন করতে চাইছেন কেন্দ্রের সরকারের কান্ডারি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আইএলও রিপোর্ট আরও জানিয়েছে, গ্রামে তরুণদের মধ্যে মাত্র সাড়ে সতেরো শতাংশ নিয়মিত চাকরির সঙ্গে যুক্ত। যাঁরা কাজ করছেন, তাঁদের মধ্যে মাত্র ছাব্বিশ শতাংশ শিল্প বা কারখানায় কর্মরত। ২০১২ থেকে এই হার একই জায়গায় থমকে রয়েছে। আর্থিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত তরুণদের হার ২০১২ সালে ছিল বিয়াল্লিশ শতাংশ। তা ২০২২-এ সাঁইত্রিশ শতাংশে নেমে এসেছে। বেকারত্বের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দেশের যুবশক্তির এই অপচয়, দেশের মানুষের মধ্যে এই অসাম্যই কি সরকারের গ্যারান্টি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy