ধ্বস্ত: শান্তির দাবি নিয়ে শিশুরাও সরব, ইম্ফল, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৩। ছবি: পিটিআই।
প্রশ্ন: ভারতে আপনার প্রথম বছর কেমন কাটল?
এরিক গারসেটি: এটুকু বলতে পারি, বাকি জীবন জুড়ে আমার হৃদয়ে থাকবে ভারত। আর এই বছরটা ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক। এখন এই সম্পর্ক অনেক গভীর, সুবিস্তৃত, বিশ্ব-গড়ার বিভিন্ন উদ্যোগে আমরা যৌথ ভাবে কাজ করছি যা সমুদ্রতল থেকে আকাশের নক্ষত্র পর্যন্ত ছড়ানো। হোয়াইট হাউসে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি সফর স্মরণীয়, নয়াদিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে আমাদের নেতারা যুক্ত ছিলেন গভীর ভাবে। যৌথ ভাবে জেট ইঞ্জিন উৎপাদনের ১৯০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের বাণিজ্য সম্পর্ক তো খেলা ঘোরানোর মতো ঘটনা। আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি ভারতীয় ছাত্রছাত্রী আমেরিকায় পড়তে আসছেন। ভারত-আমেরিকার অংশীদারিকে আরও বাড়ানোর সুযোগ তৈরি হচ্ছে। ভারতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি বেশ উত্তেজিত, এগুলো করতে পেরেছি বলে। তবে আরও বেশি উত্তেজিত, এই ভাবে এগোলে আরও কত কী করতে পারব ভেবে।
প্র: মণিপুর-সহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের উল্লেখ করেছে আমেরিকার সাম্প্রতিক রিপোর্ট। ভারত তো একে উড়িয়ে দিয়েছে ‘গভীর ভাবে পক্ষপাতদুষ্ট’ বলে। অভিযোগ, ভারত সম্পর্কে আধাখেঁচড়া ধারণাই প্রতিফলিত হয়েছে ওই রিপোর্টে। কী বলবেন?
উ: মণিপুরের পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত ভারত সরকার এবং এই দেশবাসীর বিষয়। তবে আমরা আশা করছি, হিংসা বন্ধ হবে এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে অভিন্ন প্রস্তাবে পৌঁছনো যাবে। যার ফলে শান্তি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলির মধ্যে বোঝাপড়া সম্ভব হবে। আরও ব্যাপক অর্থে বললে বরাবরই মানবাধিকার আমাদের বিদেশনীতির কেন্দ্রে। এই দায়বদ্ধতা আমেরিকার মৌলিক মূল্যবোধের প্রতিফলন। আন্তর্জাতিক স্তরে স্বীকৃত মানবাধিকারকেই তা আরও শক্তিশালী করে। প্রত্যেক বছর আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রক তথ্যসম্বলিত একটি রিপোর্ট কংগ্রেসকে জমা দেয়। উদ্দেশ্য, যাঁর কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে না, তাঁকে বলার সুযোগ দেওয়া এবং অভিযুক্তকে ছাড় দেওয়ার সংস্কৃতি বন্ধ করা।
প্র: কলাম্বিয়া-সহ আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্যালেস্টাইনপন্থী প্রতিবাদ আন্দোলন চলছে। তা দমনেরও চেষ্টা হচ্ছে। ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সম্প্রতি তা উল্লেখ করে জানিয়েছে, বাক্স্বাধীনতা এবং দায়িত্ববোধের ভারসাম্য থাকা প্রয়োজন। আরও বলা হয়েছে, আমরা দেশের ভিতরে কী করি তা দিয়েই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে যাচাই করা উচিত, বাইরে কে কী বলল, তা দিয়ে নয়। আপনার প্রতিক্রিয়া?
উ: এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশই এই প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছে বিভিন্ন সময়ে। আমাদের ছাত্র সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা এবং ভাল থাকার উপায় খুঁজে বার করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনই স্বাধীনতা সংক্রান্ত নীতিগুলিকে তুলে ধরাও জরুরি। সেগুলিই তো আমাদের এই জায়গায় এনেছে। তার মধ্যে রয়েছে বাক্স্বাধীনতা, জমায়েত হওয়ার অধিকার। যে কোনও গণতন্ত্রের সাফল্যের ভিত্তিই হল এই সব নীতি। এগুলিই সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলা একটি সমাজ গড়তে যথাযথ ভাবে সাহায্য করে, যেখানে প্রত্যেকের বক্তব্য শোনা যাবে। ভারত-সহ বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে মানবাধিকারের এই সমস্ত চ্যালেঞ্জিং বিষয় নিয়ে আমরা কাজ করি। একই সঙ্গে আমাদের নিজস্ব নীতির প্রতি দায়বদ্ধতা যদি অন্য কেউ মনে করিয়ে দেয়, তা হলে তাকেও আমরা স্বাগত জানাই।
প্র: ভারত এক দিকে ইজ়রায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক আরও মজবুত করছে, অন্য দিকে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানের জন্য সওয়াল করছে। এটা কি ভারসাম্যের কূটনীতি? আপনি কী ভাবে দেখছেন?
উ: ভারতের বিদেশনীতির বিষয়টি আমি ভারত সরকারের উপরেই ছেড়ে দিতে চাই। আমেরিকা, ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইনের মধ্যে স্থায়ী শান্তি ও নিরাপত্তার অগ্রগতি চায়, ইজ়রায়েলের পাশাপাশি প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র গঠনের জন্য বাস্তবোচিত সময়সীমার মধ্যে অপরিবর্তনীয় পদক্ষেপ জরুরি বলে মনে করে। ৭ অক্টোবর হামাস নামের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীটি যে ভাবে ইজ়রায়েলবাসীর উপর ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়েছিল, আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় তার নিন্দা করি। বাইরে থেকে আসা যে-কোনও রকম হিংসাত্মক আগ্রাসনেরই নিন্দা করি। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে সাধারণ নাগরিককে কখনওই নিশানা করা চলে না, তাঁদের সুরক্ষিত রাখতে হবে। ইজ়রায়েল এবং প্যালেস্টাইন উভয় পক্ষের কাছেই আমাদের আহ্বান, উত্তেজনা কমাতে যথাসাধ্য চেষ্টা করা হোক, এই ধরনের হিংসার জন্য দায়ী সব ব্যক্তিকে শাস্তি দেওয়া হোক।
প্র: ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার হিংসা থামাতে বাইডেন প্রশাসন ভারতকে মস্কোর সঙ্গে তার সুসম্পর্ককে কাজে লাগাতে বলেছে। ভারত সরকারের কাছ থেকে এ ব্যাপারে সাড়া পেয়েছেন?
উ: আমেরিকা এবং ভারত উভয়েই মনে করে স্থায়ী এবং ন্যায্য শান্তি, ইউক্রেনের জন্য জরুরি। ইউক্রেনবাসীর জন্য যে মানবিক সহায়তা ভারত করেছে, তাকে আমরা স্বাগত জানিয়েছি। আমরা বিশ্বাস করি, রাশিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ দিনের সম্পর্কের ফলে ভারত অনন্য একটি জায়গায় রয়েছে, যেখান থেকে প্রেসিডেন্ট পুতিনকে তারা বলতে পারে, এই বেআইনি যুদ্ধ বন্ধ করে ইউক্রেনের ভূখণ্ড থেকে রাশিয়ার সেনা ফিরিয়ে নিতে। স্থায়ী শান্তির জন্য ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব, ভৌগোলিক অখণ্ডতা এবং স্বাধীনতাকে মান্য করতেই হবে মস্কোকে। এই মূল্যবোধগুলি ভারতবাসীও সম্মান করেন এবং গভীর ভাবে অনুধাবন করেন।
প্র: চিন আমেরিকার সংস্থাগুলিকে নিশানা করছে। এর ফলে কি একটা সুযোগ এসেছে ভারত-আমেরিকা মুক্ত বাণিজ্যচুক্তি সম্পন্ন করার? অথবা মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সই যদি না-ও হয়, দুই দেশের কি পরস্পরের বাজারে আরও বেশি করে পৌঁছনোর চেষ্টা করা উচিত নয়? এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ‘প্রথম মিত্র’ হিসেবে পরস্পরকে গণ্য করার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে হয়?
উ: কোভিড অতিমারি থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাতের মতো একের পর এক ঘটনায় আমরা দেখেছি যে, কোনও বিশেষ একটি দেশ থেকেই পণ্য বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করা হলে পরিস্থিতি কতটা জটিল হয়ে যায়। বিভিন্ন পরিবর্ত, বিকল্প উপায় থাকলে সব দেশের মানুষই উপকৃত হবেন। ভারতে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত হিসেবে আমি তো চাইব ভারতের বাজার আরও শক্তিশালী হোক। চাইব, ভারত এই অঞ্চল তথা গোটা বিশ্বের জন্য উৎপাদন কেন্দ্র হয়ে উঠুক। ইতিমধ্যেই অনেক পণ্যের জন্য আমেরিকা ভারতের মুখাপেক্ষী। আমাদের জেনেরিক ওষুধপত্রের ৪০ শতাংশ এখানে তৈরি হয়। ভারতে তৈরি ই-বাহন, সৌর-সেল’এর মতো ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক প্রসারিত হলে ভাল। গত বছর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় বাণিজ্যসংক্রান্ত মতভেদ মিটেছে। আমেরিকার সংস্থাগুলি ভারতের মাটিতে সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে উদ্গ্রীব। বিরাট আয়তন, উৎপাদনের পরিমাণ, বিশেষ পারদর্শিতা সব মিলিয়ে ভারত অনন্য।
সাক্ষাৎকার: অগ্নি রায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy