Advertisement
E-Paper

দিনটা ভাই আর বোনের সমান

ভাইফোঁটাকে কেন্দ্র করে ভাই-বোনের অবস্থান এমনিতেই পরিপূরক, অর্থাৎ যে কোনও এক জন না হলেই এই অনুষ্ঠান অস্তিত্বহীন।

ভাইফোঁটা মোটেই ‘ভাইদের দিন’ নয়, বরং ‘ভাই এবং বোনেদের দিন’, যার পুরোভাগে বোনেরাই।

ভাইফোঁটা মোটেই ‘ভাইদের দিন’ নয়, বরং ‘ভাই এবং বোনেদের দিন’, যার পুরোভাগে বোনেরাই। ফাইল চিত্র।

রূপালী গঙ্গোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০২২ ০৫:২৭
Share
Save

আশ্বিনের শারদপ্রাতে যে মেয়ে বাড়ি আসবে বলে উৎসবের সূচনা হয়েছিল, বিজয়া দশমীতে সেই মেয়ে তো ফিরে গেল, কিন্তু বাঙালির উৎসব শেষ হল না। তা হলে সম্পদের অর্চনা, আলোর আরাধনা পেরিয়ে উৎসবের প্রান্তে এসে ভাইবোনের যে পারিবারিক মিলনমেলা, এই মেয়েটি সেই অনুষ্ঠানে কেন কোনও দিন এল না? তার কি ভাই-বোন নেই? যে মেয়ের বাবা-মা-স্বামী-সন্তানদের কাহিনি নিয়ে যুগে যুগে এত গল্প-গান-গবেষণা, যার ‘বাপের বাড়ি’ আসার উৎসব বিশ্ববিখ্যাত হয়ে গেল, মনে হয় না, যে তার একটা অন্তত যেমন-তেমন ভাই থাকা নিশ্চয়ই উচিত ছিল!

না কি, ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দেওয়ার মধ্যে দিয়ে ভাইকে (মানে পুরুষকে) বেশি গুরুত্ব দেওয়ার যে ইঙ্গিত, তা মাতৃশক্তির গৌরবায়নের পরিপন্থী হয়ে দাঁড়ায়, তাই দুর্গাকে বিজয়া দশমীতে একেবারে এক বছরের জন্য স্বামীর ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়! বেচারি কোনও দিন ভাইফোঁটা দিতেই পারলেন না। এখান থেকেই প্রশ্নটা উঠে আসে যে, ফোঁটাটা ভাইয়ের কপালে পড়ে— তাই কি সত্যিই ভাইফোঁটা ভাইকে বোনের তুলনায় বেশি গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে? তা হলে ভাইফোঁটার পরিপূরক হিসাবে কি বোনফোঁটাও চালু হওয়া উচিত?

আমার উত্তর হল, ‘না’। কারণ, ভাইফোঁটাকে কেন্দ্র করে ভাই-বোনের অবস্থান এমনিতেই পরিপূরক, অর্থাৎ যে কোনও এক জন না হলেই এই অনুষ্ঠান অস্তিত্বহীন। যে ফোঁটা দিচ্ছে, আর যে নিচ্ছে, দু’জনেই আসলে কিছু পাচ্ছে, দু’জনেই দু’জনের কাছে কৃতজ্ঞ; তা হলে আর ‘রিটার্ন’ কিসের! আর দেখতে গেলে ফোঁটা দেওয়াটা তো আচার মাত্র, এমনকি বিশেষ দিনটাও সে ভাবে গুরুত্বপূর্ণ নয়; আসল বিষয় হল ভাই-বোনের দেখা হওয়া। একটা দিন এক সঙ্গে কাটানো, যে যার সংসারে ব্যস্ত হয়ে পড়লে যা প্রায় ব্যতিক্রম হয়ে দাঁড়ায়। তাই বিভিন্ন পরিবারে ফোঁটার উপকরণ বিবিধ হলেও, শাস্ত্রমতে এক-এক দিন এক-এক উপকরণ নিষিদ্ধ হলেও, যে ফোঁটা দিচ্ছে আর যে নিচ্ছে তাতে তাদের কিছু এসে যায় না! মানে, এই সব কারণে ভাইফোঁটার আনন্দ অনুষ্ঠানটির কোনও ক্ষতিবৃদ্ধি ঘটে না।

দুর্গাপুজো যদি উৎসবের ‘টপ সিজ়ন’ তো ভাইফোঁটা একেবারেই ‘এন্ড অব সিজ়ন অফার’। জাঁকজমকের দিক থেকে পুজোর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তবু ব্যস্ত কর্পোরেট থেকে ব্যতিব্যস্ত গৃহবধূ এবং গৃহপরিচারিকারাও একটি দিনের ছুটি বাঁচিয়ে রাখেন নিজ নিজ বোন বা ভাইয়ের জন্য। কে কাকে নেমন্তন্ন করবে, কে কার বাড়ি যাবে, কী উপহার দেবে তা নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে চূড়ান্ত নাস্তিক ঘোর নারীবাদীও ভাইফোঁটার আগের দিন লোকাল ট্রেনে চেপে বসেন স্রেফ পরের দিন নতুন শাড়ি পরে ভাইয়ের সামনে পা মুড়ে বসে বাঁ হাতের কাঁপা কাঁপা কড়ে আঙুল দিয়ে ভাইয়ের কপালে ফোঁটাটি আঁকবেন বলে।

লোকাল ট্রেনের কথা যখন উঠলই, তখন বলি ভাইফোঁটার আগের দিন মহিলা কামরার চেহারা কেমন বদলে যায়। ভরদুপুরে হাওড়া থেকে ডাউন ট্রেনের কামরায় নানা বয়সের মহিলারা, পরনে প্রায় নতুন শাড়ি, হাতে-কাঁধে ঢাউস প্রায় ফেটে যাওয়া ব্যাগ, কারও সঙ্গে একটি-দু’টি বাচ্চা, মুখে একটু অন্য রকম আলো। এই ছবি রোজকার অফিস-যাত্রীদের ভিড়ে ঠাসা স্কুল-অফিসের গল্পগুজবে ঠাসা মহিলা কামরার চেয়ে আলাদা। এই ভিড়ের গায়ে ভাইফোঁটার গন্ধ লেগে থাকে, কারণ যে বোনেরা কিছুটা দূরের শহরে থাকেন তাঁরাই তো চলেছেন ভাইফোঁটা দিতে। মফস্‌সলের শহরগুলোতেও এ দিন সন্ধের পর রাস্তাঘাটের চেহারা বদলে যায়। রাস্তায়, দোকানে সে দিন শুধু হাসিমুখে বোনেদের ভিড়। হাতে নতুন উপহারের প্যাকেট, মিষ্টির বাক্স। ছোটখাটো মফস্সলি শহরে— যেখানে মানুষের গতিবিধি চেনাজানার ছোট বৃত্তের মধ্যেই অনেকটা ঘোরাফেরা করে, সেখানে সে দিন এক নরম আলো ছড়িয়ে থাকে। ভাই-বোনের দেখা হওয়ার আলোর সঙ্গে কিছু হারানো মুখ খুঁজে পাওয়ার আলো।

তাই নামে শুধু ‘ভাই’ থাকলেও, ভাইফোঁটা মোটেই ‘ভাইদের দিন’ নয়, বরং ‘ভাই এবং বোনেদের দিন’, যার পুরোভাগে বোনেরাই। তাই কে কাকে ফোঁটা দিল, তাতে কী-ই বা আসে যায়! যার ভাই নেই আর যার বোন নেই, আজকের দিনে দু’জনেরই একই অবস্থা; তাই আর যে অনুষ্ঠানই হোক, ভাইফোঁটা কদাপি পিতৃতান্ত্রিক নয়। বরং ভাইফোঁটাই সেই অনুষ্ঠান, যা নানা ভাবে ছোটবেলাকে ফিরিয়ে দিতে পারে। সারা বছর কোনও মন্ত্র না-বলা মেয়েটিও তাই ভাইয়ের কপালে আঙুল রেখে মনে মনে উচ্চারণ করেই ফেলে “ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা…” ইত্যাদি।

সিস্টার নিবেদিতা ইউনিভার্সিটি

Bhai Phota Women

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।