জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দুনিয়ার অর্থনীতির কতখানি ক্ষতি হতে পারে, এত দিন সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হত দেশের গণ্ডির ভিতরে। যেমন, কোনও দেশে খরা বা বন্যা হলে সেখানে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হত ঠিকই; কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য প্রান্তে যে-হেতু পরিস্থিতি স্বাভাবিক, তাই অন্য দেশ থেকে আমদানি করে সেই ঘাটতি সামাল দেওয়া যেত। কিন্তু, বিশ্ব উষ্ণায়নের এখন যে চেহারা দাঁড়িয়েছে, তাতে গোটা দুনিয়া জুড়েই বাড়ছে চরম আবহাওয়াজনিত বিপর্যয়, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বৈশ্বিক অর্থব্যবস্থা। অস্ট্রেলিয়ার ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস-এর গবেষকদের কাজ থেকে জানা যাচ্ছে, চরম আবহাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য, কমবে বৈশ্বিক জিডিপি। উষ্ণায়নের ফলে উত্তর ইউরোপ বা রাশিয়ার মতো অতিশীতল অঞ্চলে উৎপাদনশীলতা বেড়ে অন্য জায়গার ক্ষতি পুষিয়ে দেবে বলে ধরা হত। কিন্তু, এখন দেখা যাচ্ছে, মোট ক্ষতির পরিমাণ এতই বেশি যে, সে ঘাটতি পূরণ হবে না। এই শতকের শেষে যদি পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমারেখা ছাড়িয়ে যায়, তা হলে বিশ্বের অর্থনীতির ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ৪০ শতাংশে।

প্রতিকূল: পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়লে টান পড়বে সম্পদভান্ডারে।
রুটি কই
এমনিতেই গাজ়ায় মানবিক সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে দিন দিন। এখন আরও এক সমস্যা— পাউরুটির আকাল। ইজ়রায়েল প্রায় এক মাস গাজ়ায় খাবারদাবারের সরবরাহ ও অন্যান্য মানবিক সাহায্য স্থগিত রাখায় পাউরুটির কারখানাগুলিতে এখন ময়দা, জ্বালানি কিছুই নেই। মানুষ এ দোকান-ও দোকান ঘুরে নাকাল হচ্ছেন। খাদ্যসামগ্রী যা-ও বা আছে, তাতে টেনেটুনে চলবে আর বড়জোর দু’সপ্তাহ। ওষুধপত্রের অবস্থাও তথৈবচ। এ ভাবে চললে আগামী দিনে ভয়ঙ্কর খাদ্যসঙ্কট ও তীব্র স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার মুখেও পড়তে হবে গাজ়ার মানুষকে, আশঙ্কা রাষ্ট্রপুঞ্জের।
বিপদের কারণ
দক্ষিণ কোরিয়ার বিধ্বংসী দাবানলের উৎস সন্ধানে বছর পঞ্চাশের এক প্রৌঢ়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকল পুলিশ। গত সপ্তাহে দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাংশে দাবানলের জেরে পুড়ে গিয়েছে ৪৮,০০০ একর জমি, ভস্মীভূত প্রাচীন বৌদ্ধ উপাসনালয়-সহ হাজারো ঘর-বাড়ি, মৃতের সংখ্যা ৩০। তাঁদের অনেকেই বৃদ্ধ, আগুন থেকে পালাতে পারেননি। এই তাণ্ডবের মধ্যে হেলিকপ্টার ভেঙে এক বিমানচালকও মারা গিয়েছেন। পুলিশ জানাচ্ছে, ২২ মার্চ উত্তর কিয়ংসাং প্রদেশে এক প্রৌঢ় ধর্মীয় রীতি অনুসারে পারিবারিক সমাধিক্ষেত্র পরিষ্কার করছিলেন। কিছু ময়লা পোড়াতে আগুন জ্বালিয়েছিলেন। হাওয়ার দাপট ছিল তখন, হয়তো একটি ফুলকি থেকেই ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ বিপত্তি।
ত্রাণে যন্ত্রমেধা
প্রথমে লেন্স ঢেকে দিচ্ছিল মেঘ। মেঘ সরতেই শুরু হল প্রযুক্তির খেল। শনিবার কাকভোরে আকাশ থেকে শুক্রবারের কম্পনে বিধ্বস্ত মায়ানমারের মান্দালয় শহরের ছবি তুলল উপগ্রহ। মাইক্রোসফট-এর বিশেষ এআই সংস্থার কর্মীরা ধ্বংসস্তূপের ছবি-তথ্য সংশ্লেষ করে নির্ণয় করলেন, শহরটির ৫১৫টি বাড়ি ৮০-১০০% ক্ষতিগ্রস্ত, ১৫২৪টি বাড়িতে ক্ষতি ২০-৮০%। তথ্যগুলি রেড ক্রস প্রভৃতি গোষ্ঠীগুলিকে জানানো হল। কোথায় কতটা ক্ষতি, উপগ্রহ ও এআই-এর সহায়তায় তার একটা ধারণা পেলে ত্রাণকর্মীদের সুবিধা হয়। লিবিয়ার বন্যা, লস অ্যাঞ্জেলেস-এর দাবানলের সময়ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রয়োগে ক্ষতির পরিমাপ করা হয়েছিল। বিজ্ঞান দেবতা না দানব— সেই তর্কের ঊর্ধ্বে উঠে প্রযুক্তিকে কখনও কখনও মানবিক হতে হয় বইকি, বিশেষত প্রকৃতি যখন রুদ্ররোষে ফুঁসছে।

ধ্বসস্তূপ: মান্দালয়ে চলছে উদ্ধারকার্য।
আদালতে ‘রাম’
বব মার্লে আর উসেইন বোল্টের দেশে হইচই পড়েছে, রামের জিআই নিয়ে। মহাকাব্যের নায়ক নয়, এ রাম হল ‘জামাইকান রাম’, এই দ্বীপভূমির রেগে মিউজ়িক আর সুনীল সমুদ্রতটের মতোই যে পানীয়ের খ্যাতি বিশ্ব জুড়ে। জামাইকান রামের ‘জিআই’-পরিচিতি পোক্ত করতে কর্তৃপক্ষ আগেকার নিয়মে বদল এনেছেন। পানীয়কে স্বাদু করতে যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় রেখে দেওয়া হয় (এজিং), নতুন নিয়মে তা আর বিদেশের মাটিতে করা চলবে না, তা হলে আর তা ‘জামাইকান’ হল কই! এই নিয়েই মুশকিল, কারণ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোয় বিদেশি শেয়ারও আছে, তারা ছেড়ে কথা বলবে কেন! এক দিকে স্বদেশিয়ানা, অন্য দিকে বিশ্ব বাণিজ্য, আপাতত দুইয়ের যুদ্ধ চলছে আদালতে। এপ্রিল-শেষে পরের শুনানি।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)