“কেউ কি জান সদাই কেন বোম্বাগড়ের রাজা—/ ছবির ফ্রেমে বাঁধিয়ে রাখে আমসত্ত্ব ভাজা?/ রানীর মাথায় অষ্টপ্রহর কেন বালিশ বাঁধা?/ পাঁউরুটিতে পেরেক ঠোকে কেন রানীর দাদা?”— রাজ্যসভায় আচমকা সুকুমার রায়ের আবোল তাবোল শোনা গেলে বাঙালি সাংসদদের মুখে যে হাসি ফুটবে, সে তো জানাই। রাষ্ট্রপতির বক্তৃতা নিয়ে আলোচনায় তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষের মুখে ‘বোম্বাগড়ের রাজা’র বর্ণনা শুনে মুগ্ধ কংগ্রেসের জয়রাম রমেশের মতো অবাঙালি নেতারাও। জয়রাম সেই আবৃত্তি সমাজমাধ্যমেও তুলে ধরেছেন। সাগরিকা মোদী সরকারকে কটাক্ষ করতেই বোম্বাগড়ের রাজার উদাহরণ টানেন। মোদী জমানায় স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাবের অভিযোগ তুলে ‘একুশে আইন’ থেকেও উদ্ধৃত করেছেন, “যে সব লোকে পদ্য লেখে,/ তাদের ধ’রে খাঁচায় রেখে,/ কানের কাছে নানান্ সুরে,/ নামতা শোনায় একশো উড়ে,/ সামনে রেখে মুদীর খাতা, হিসেব কষায় একুশ পাতা!” সবাই যাতে বোঝেন, তাই ইংরেজি তর্জমাও ছিল।

বঙ্গযোগ: রাজ্যসভায় বাজেট অধিবেশনে তৃণমূলের সাংসদ সাগরিকা ঘোষ
পালাবদলের পরে
ঋতুর সঙ্গে রাজনীতিও রং বদলায়। দিল্লিতে প্রতি বছরই শীতে অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি তাঁর বাড়িতে রাজনীতিবিদ থেকে সাংবাদিক বন্ধুবান্ধবদের মধ্যাহ্নভোজনে নিমন্ত্রণ করেন। গত শীতে তাঁর নিমন্ত্রণেই এক টেবিলে বসে মধ্যাহ্নভোজন করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে ও আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল, লোকসভা নির্বাচনে দুই দলের মধ্যে দিল্লিতে আসন সমঝোতা হতে চলেছে। হয়েছিল তা-ই। কিন্তু এই শীতে অন্য ছবি। দিল্লির ভোটে আম আদমি পার্টি হেরে গিয়েছে। কংগ্রেস আম আদমি পার্টির ভোট কেটেছে। সেই ভোটের ফলের পরেই সিঙ্ঘভির বাড়ির মধ্যাহ্নভোজনে দেখা গেল, কংগ্রেস নেতারা কেজরীওয়ালের হারে উল্লসিত। অন্য রাজ্যেও আঞ্চলিক দল সম্পর্কে রণং দেহি মনোভাব। যদিও তৃণমূলের সাংসদদের অনেকেই কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে হাসিমুখে রবিবারের দুপুরে মধ্যাহ্নভোজন সেরে গেলেন সিঙ্ঘভির সরকারি বাসভবনে।
মমতার পথে
সংসদ থেকে রেল মন্ত্রক ঢিল ছোড়া দূরত্বে। রাস্তার এ পার-ও পার। হাঁটতে বরাবরই ভালবাসেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই তিনি যখন রেলমন্ত্রী, প্রায়শই সংসদ থেকে রেল মন্ত্রক পায়ে হেঁটেই চলে যেতেন। সে কারণে রেল মন্ত্রকের পিছনের দিকের একটি দরজা সব সময়ে খুলে রাখা হত। মমতা দিল্লি ছেড়ে পশ্চিমবঙ্গে ফিরে গেলে বন্ধ হয়ে যায় ওই দরজা। প্রায় এক দশকের বেশি বন্ধ থাকার পরে ফের ওই দরজা খুলেছেন বর্তমান রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব। অধিবেশনের মাঝখানে রেলভবন যেতে হলে গাড়ির পরিবর্তে সংসদ থেকে বেরিয়ে দু’পা হেঁটে পৌঁছে যাচ্ছেন রেল মন্ত্রকে। সময় ও গাড়ির তেল বাঁচছে, দিনের হাঁটাটাও সেরে নিচ্ছেন। যেমনটি এক সময়ে করতেন তাঁর পূর্বসূরি।
কোল্ডপ্লে ও একা কুম্ভ
এ তো রথ দেখতে এসে কলা বেচা নয়, এ হল গান শোনাতে এসে কুম্ভস্নান। কোল্ডপ্লে ব্যান্ডের ভারত সফরের সময় লিড সিংগার ক্রিস মার্টিনের ইচ্ছে হয়েছিল কুম্ভস্নানের। তাঁর গানের সুরে এ দেশের ভক্তরাও মুগ্ধ। কিন্তু প্রয়াগরাজে তাঁর কুম্ভস্নানের ব্যবস্থা কে করবেন, কী ভাবে করবেন? ক্রিস মার্টিন আবার একা নন। সঙ্গে তাঁর প্রেমিকা, হলিউডের নায়িকা ডাকোটা জনসনও ছিলেন। ফোন গেল কেন্দ্রীয় বাণিজ্য মন্ত্রী পীযূষ গয়ালের কাছে। তিনি আবার তখন ব্রাসেলসে ছিলেন। তবে সেখান থেকেই পীযূষ ফোনাফুনি করে সব রকমের ব্যবস্থা করে দিলেন। ক্রিস মার্টিন আর ডাকোটা সঙ্গমে স্নান করে প্রফুল্ল হলেন। কোল্ডপ্লে-র ভক্তদেরও প্রিয় গায়কের কুম্ভস্নানের কাহিনি শুনে মুখে হাসি ফুটল। পীযূষের অবদান পর্দার পিছনেই থেকে গেল।

মূর্ছনা: ভারতের কনসার্টে ক্রিস মার্টিন।
বইয়ের গন্ধ নিয়ে
নয়া দিল্লির প্রেস ক্লাব মুখরিত থাকে সাংবাদিক সম্মেলনে। ছোট ছোট দল, সংগঠন, স্বেচ্ছাসেবী, মানবাধিকার কর্মীদের প্রিয় লাটিয়েন্স দিল্লির ক্লাবটির প্রশস্ত লন। রাতে অন্য মেজাজ। পুরনো দিল্লির কাবাবের অমৃতগন্ধ, বাংলাদেশের কাচ্চি বিরিয়ানি এমনকি বর্ষায় ইলিশ উৎসবের ঘাটতি নেই। গানবাজনাও হয়। এই প্রথম তিন দিনের বইমেলা হল প্রেস ক্লাব অব ইন্ডিয়ায়। হিন্দি, ইংরেজি প্রকাশনার পাশাপাশি রয়েছে বাংলার আনন্দ পাবলিশার্স। থাকছে বই নিয়ে আলোচনা, মুখরোচক ফুড স্টলও।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)