প্রতীকী ছবি।
লজ্জাজনক। আধুনিক চিকিৎসার ক্ষেত্রে গর্ভবতী অবস্থায় বা সন্তানের জন্ম দিবার সময় মাতৃমৃত্যুর ক্ষেত্রে এই বিশেষণটিই প্রযুক্ত হয়। কোভিড-কালে নিরন্তর সেই লজ্জাজনক ঘটনারই সাক্ষী হইতেছে এই রাজ্য। পরিসংখ্যান হইতে স্পষ্ট, এই আর্থিক বৎসরে এখনও পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুর হার গত বৎসরের তুলনায় প্রায় ৫-৭ শতাংশ বেশি। শুধুমাত্র এপ্রিল হইতে সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সংখ্যাটি দাঁড়াইয়াছে ৬০২। এই হার বৃদ্ধির জন্য দায়ী অতিমারি পরিস্থিতি, নিঃসন্দেহে। স্বাভাবিক সময়েই যে বেহাল স্বাস্থ্য পরিকাঠামো রোগীর ভারে ধুঁকিতে থাকে, অতিমারির ধাক্কায় তাহা আরও খানিক জরাজীর্ণ হইতে বাধ্য। তদুপরি, গত ছয়-সাত মাস এই একটি রোগকে কেন্দ্র করিয়া সমগ্র ব্যবস্থাটি আবর্তিত হওয়ায় অন্য রোগীরা বিপদে পড়িয়াছেন। ক্যানসার, ডায়াবিটিসের পাশাপাশি আসন্নপ্রসবাদের চিকিৎসাও অবহেলিত হইয়াছে। অথচ, এই সময় গর্ভবতীদের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত বিশেষ নজরদারির প্রয়োজন ছিল। তাহা হয় নাই। বরং রেফার-এর শিকার হইয়া অনেকে পথপার্শ্বে, অনেকে গৃহে প্রসব করিতে গিয়া মারা পড়িয়াছেন।
অথচ, চেষ্টা করিলে এই পরিণতি রোধ করা যাইত। আফ্রিকার উদাহরণ হাতের নিকট মজুত ছিল। ইবোলা যখন সেখানে হানা দেয়, দেখা গিয়াছিল, ইবোলায় মৃতদের তুলনায় মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা ঢের বেশি। কারণ, প্রয়োজনীয় পরিষেবাগুলি তাঁহারা পান নাই। কিন্তু সেই অভিজ্ঞতা হইতে এই রাজ্য যে শিক্ষা লয় নাই, প্রসূতিমৃত্যুর সংখ্যাধিক্যই তাহার প্রমাণ। অথচ, গর্ভবতী, ক্যানসার-আক্রান্ত’সহ অন্য রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিত করিবার জন্য কী করণীয়, তাহা অজানা ছিল না। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও হাসপাতালগুলিকে নির্দেশ দিয়াছিলেন, প্রসূতিদের ফেরানো যাইবে না। কিন্তু, সংক্রমণের ঝড় আসিলে দেখা গেল, এই সকল ব্যবস্থা, নির্দেশ কিছুই কাজ করিতেছে না। কোভিড-হাসপাতাল হইতে প্রসূতিদের অন্য হাসপাতালে রেফার করা হইল। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত পরিকাঠামো আছে কি না, তাহা দেখা হইল না। কখনও হাসপাতালে আনিবার অ্যাম্বুল্যান্সটুকুও জুটিল না। অর্থাৎ, এক প্রকার জানিয়া-বুঝিয়াই এই মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ঠেলিয়া দেওয়া হইল কিছু প্রাণকে। দুর্ভাগ্যজনক।
এই হার ভবিষ্যতে যাহাতে অব্যাহত না থাকে, তাহার জন্য অবিলম্বে কিছু পদক্ষেপ করা প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর্মীর সংখ্যা বহু গুণ বৃদ্ধি এবং তাঁহাদের নির্দিষ্ট কাজে নিযুক্ত করিতে হইবে। যিনি জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি দেখিবেন, তিনিই প্রসূতি ও শিশুর দেখাশোনা করিবেন, আবার প্রয়োজনে সংক্রামক ব্যাধিরও কাজ করিবেন— ইহা চলিবে না। আশাকর্মীদের ক্ষেত্রে ঠিক ইহাই হইয়াছে। তাঁহারা প্রসূতি ও শিশুর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত কার্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলেন। কিন্তু অতিমারির সময় তাঁহাদের উপর সেই দায়িত্বও চাপিয়াছে। কোভিড হাসপাতাল নির্দিষ্ট করিবার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের বিভিন্ন সমস্যায় তাঁহারা কোথায় যাইবেন, তাহা নির্দিষ্ট করা প্রয়োজন। সর্বোপরি, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধি করিতে হইবে। জিডিপির দেড় শতাংশে নির্মিত পরিকাঠামোয় সমস্ত রোগের চিকিৎসা হইবে, এবং অতিমারির মোকাবিলাও হইবে— তাহা হয় না। অতিমারি-কালেও এই ব্যয়বরাদ্দ অপরিবর্তিত থাকিলে অন্যান্য রোগ অবহেলিত হইবে, প্রসূতিমৃত্যুও ঠেকানো যাইবে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy