Advertisement
২৭ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus Lockdown

সত্য সুকঠিন

প্রশ্ন হইল— সেনা যখন আসিলই, এত দেরিতে আসিল কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ মে ২০২০ ০০:০৫
Share: Save:

রাজধানী কলিকাতা এমন নাগরিক বিক্ষোভ সম্প্রতিকালে দেখিয়াছে কি? সম্ভবত নহে। নাগরিকের এমন সঙ্কটও তাহার ভাগ্যাকাশে সম্প্রতি দেখা যায় নাই, এমনকি স্মরণযোগ্য অতীতেও নয়। দিকে দিকে মানুষ ক্ষোভে উত্তাল, বিদ্যুৎ নাই, জল নাই, ফোন-সংযোগ নাই, গাছ পড়িয়া রাস্তায় চলাচলের উপায় নাই, লকডাউনের জন্য অন্য কোথাও চলিয়া যাইবার বা অন্য কোথাও হইতে সহায়তা আনিবার উপায় নাই, করোনাতঙ্কে ঘর হইতে বাহির হইবার সাহস নাই। এমত সর্বব্যাপী দুর্দশা ও অসহায়তায় নগরবাসী অভ্যস্ত নহেন, তাঁহাদের সহনশীলতার সীমা পার হইয়াছে। বয়স্ক ও শিশুরা অসুস্থ বোধ করিয়াছেন, মধ্যবয়সিরা উপায়ান্তরবিহীন ভাবে প্রিয়জনের যন্ত্রণা মানিতেছেন, কিংবা মানিতে না পারিয়া অবরোধে বসিতেছেন। পুলিশ, সরকারি কর্মী, বিশেষত সিইএসসি-র কর্মীরা আক্রান্ত হইতেছেন। শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনার গতিপ্রকৃতি দেখিয়া স্বাভাবিকতা ফিরাইবার কাজে সেনা নামাইবার সিদ্ধান্ত লইলেন। তাহাতে কাজে পূর্বাপেক্ষা গতি আসিল ঠিকই, কিন্তু রবিবার পর্যন্ত যত দূর কাজ আগাইল তাহাকে স্বস্তিদায়ক বলা চলে না। এখনও বহু মানুষ দুর্ভোগে গ্রস্ত হইয়া আছেন। সত্বর তাঁহাদের স্বস্তিতে ফিরাইয়া আনা প্রশাসনের এক নম্বর দায়িত্ব।

প্রশ্ন হইল— সেনা যখন আসিলই, এত দেরিতে আসিল কেন? মুখ্যমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত শনিবার লইলেন, বাহাত্তর ঘণ্টা আগে তাহা লইলেন না কেন? একটি সম্ভাব্য উত্তর নিশ্চয়ই ঘটনাবলির অভাবনীয় ব্যাপকতার মধ্যে নিহিত। মুখ্যমন্ত্রী স্বভাবতই আশা করিয়াছিলেন যে তাঁহার প্রশাসন পরিস্থিতি সামলাইতে পারিবে। কিন্তু কাজ যত আগাইল দেখা গেল, মাইলের পর মাইল ওভারহেড তার ছিঁড়িয়া এবং অসংখ্য তারসংযোগ বিনষ্ট হইয়া বিদ্যুৎ ফিরাইবার কাজটি অস্বাভাবিক জটিল ও সময়সাপেক্ষ হইতেছে, এমনকি দ্রুত বিদ্যুৎসংযোগ ফিরাইবার চেষ্টা করিলে অগণিত মানুষকে তড়িৎস্পৃষ্ট করিবার ঝুঁকিও থাকিতেছে। বস্তুত, এত বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করিয়া বিদ্যুৎকর্মীরা গত চার-পাঁচ দিন যে ভাবে ক্লান্তিহীন কাজ করিয়াছেন, তাহা কুর্নিশযোগ্য। তৎসঙ্গে ইহাও সত্য, তাঁহাদের এই প্রবল পরিশ্রমেও যথেষ্ট ফল ফলে নাই। শহরে অনেক অঞ্চলই সোমবার বিদ্যুৎবিহীন ষষ্ঠ দিনে পা দিয়াছে।

ফলত প্রশ্নের একটি গভীরতর উত্তর না খুঁজিয়া গত্যন্তর নাই। প্রশাসনের দিক হইতে সিদ্ধান্তে বিলম্ব ঘটিয়াছে, যাহার ফল হইয়াছে মারাত্মক। যথেষ্ট সতর্কবার্তা থাকা সত্ত্বেও আগাম বৈঠক করা হয় নাই, ঝড়ের পরও বৈঠক বিলম্বিত হইয়াছে, সিইএসসি-র সহিত আলোচনায় বড় মাপের ঘাটতি থাকিয়াছে। ঝড়ের আকার অভাবিত ছিল বলিয়া যে যুক্তি, তাহার দিকে ফিরিয়া দাঁড়াইতেছে প্রতিযুক্তি— ভাবনাশক্তির সীমা ও প্রস্তুতির এহেন অনুপস্থিতিই কি অক্ষমণীয় নয়? মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছা ও আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত ঠিকই। কিন্তু ইহাও সংশয়াতীত যে তাঁহার নেতৃত্ব ও প্রশাসনিক পরিচালনায় কিছু মৌলিক সমস্যা আছে। তাঁহার প্রশাসন কেবল তাঁহারই মুখাপেক্ষী, তাঁহারই অঙ্গুলিচালিত। অন্যান্য স্তরগুলি হয় যথেষ্ট প্রত্যয়ী ও স্বাধীন নহে, নয়তো যথেষ্ট সক্রিয় নহে। তাই জরুরি কাজও বিলম্বিত হইয়া পড়ে। এত বড় মাপের সঙ্কটে এই সব মৌলিক ত্রুটিই বিশাল ও ভয়াল আকার ধারণ করে। সমস্যা অন্যত্রও। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের তুলনায় তৃণমূল সরকারের বিরাট দুর্বলতা— শহরে গ্রামে মফস্সলে এই সরকারের পিছনে দলীয় সংগঠনের কোনও আঁটোসাঁটো অস্তিত্ব নাই, যাহারা স্থানীয় প্রয়োজনে সর্বশক্তি দিয়া ঝাঁপাইয়া পড়িতে পারে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজ্য আপাতত তাঁহার এই দ্বিফলা দুর্বলতায় ভুগিতেছে। আশা রহিল, সেনা ও প্রশাসনের যুগ্ম প্রয়াসে ভোগান্তি কাটিবে। কলিকাতা ও দক্ষিণবঙ্গ দ্রুত বিপন্মুক্ত হইবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Cyclone Amphan Cyclone
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy