Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Cyclone Amphan

দুর্যোগের পরে

আমপান মোকাবিলায় কেন্দ্রের অনুদান যেন কৃপণ গৃহস্থের ভিক্ষাদান।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৮ নভেম্বর ২০২০ ০০:৩৮
Share: Save:

ছয় মাস পার হইল, আমপানের ক্ষত সারিল না। কেন্দ্র সামান্য অর্থ দিয়াছে, রাজ্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনের সামান্যই করিয়াছে। ভাঙা ঘর মেরামত হয় নাই, পানের বরজ নূতন করিয়া গড়িয়া উঠে নাই, পুকুর ও খেত পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করিবার কাজ অতি অল্প স্থানেই সম্পন্ন হইয়াছে। অভাবের ক্ষতকে বিষাইয়া তুলিয়াছে দুর্নীতি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং ঘোষণা করিয়াছিলেন, অভিযুক্ত নেতাদের পদ হইতে অপসারণ করা হইবে, আত্মসাৎ করা টাকা উদ্ধার হইবে। কয়েক জন অভিযুক্ত টাকা ফিরাইয়া সংবাদের শিরোনামেও আসিয়াছেন। ছয় মাস পরে সাংবাদিকের অনুসন্ধান দেখাইল, দুর্নীতিতে অভিযুক্ত বহু জনপ্রতিনিধি স্বপদে বহাল রহিয়াছেন। বহু গ্রামে ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারি অনুদানের কুড়ি হাজার টাকার মধ্যে মাত্র পাঁচ হাজার টাকা পাইয়াছেন। বরাদ্দের এক-চতুর্থাংশে গৃহ পুনর্নির্মাণ অসম্ভব, অতএব ত্রিপল-প্লাস্টিকের আচ্ছাদন আজও দুর্গতদের আশ্রয়। ইতিমধ্যেই বহু গ্রামবাসী ফের ভিন‌্‌রাজ্যে পাড়ি দিয়াছেন। অতিমারির প্রাদুর্ভাবে বহু কষ্ট সহিয়া, বহু অর্থদণ্ড দিয়া গৃহে প্রত্যাবর্তনের ফল— পুনরায় রিক্ত হস্তে, মৃত্যুভয় লইয়া কর্মস্থলে ফিরিয়া যাওয়া। যে ঘরে সুস্থ জীবনযাপন ও ন্যূনতম জীবিকার সুযোগ নাই, কে সেই ঘরে থাকিতে পারে?

আক্ষেপ, ইতিহাসের পুনরভিনয় ঘটিতেছে। আয়লা-পরবর্তী সকল বিপত্তি ফের ঘটিতেছে আমপানের পরে। মাঝে একটি দশক কাটিয়া গিয়াছে, কিন্তু দুর্যোগে সর্বস্বান্ত মানুষগুলিকে সম্মুখে রাখিয়া রাজনীতি ও প্রশাসনের যে কুনাট্য দেখিয়াছিলেন রাজ্যবাসী, তাহার পরিবর্তন হয় নাই। ত্রাণ ও পুনর্বাসনে কী পদ্ধতিতে ধনীর হস্ত কাঙালের ধন চুরি করিয়া থাকে, তাহাতে রাজকোষের কী বিপুল টাকা অপচয় হইতে পারে, তাহা সম্যক জানিয়াও প্রতিকার করা সম্ভব হইল না। আবারও নদীর বাঁধ সারাইবার, দরিদ্রের কুটির সারাইবার টাকা নয়ছয় হইল। পুকুর-খেত পুনরুদ্ধার করিয়া জীবিকার ব্যবস্থা করিবার কাজটি উপেক্ষিত রহিল। ফলে এক দিকে ঠিকাদারের হাত ধরিয়া পরিযায়ী শ্রমিকের রাজ্যত্যাগের ধারা বহাল রহিয়াছে। অপর দিকে, নিরন্ন মানুষের কাঁকড়া বা মধুর সন্ধানে জঙ্গলে প্রবেশ ও বাঘের থাবায় মৃত্যুর ঘটনা বাড়িয়াছে। এমন ব্যাপক সঙ্কটের সম্মুখে রাজ্য সরকারের উত্তর, রেশনে চাল তো মিলিয়াছে। কুড়াইয়া-আনা কাঠে চাল ফুটাইয়া প্লাস্টিক আচ্ছাদনের নীচে আহার, এই জীবনই কি সরকার তাহার নাগরিকের জন্য বরাদ্দ করিয়াছে?

আমপান মোকাবিলায় কেন্দ্রের অনুদান যেন কৃপণ গৃহস্থের ভিক্ষাদান। দুই দফায় তিন হাজার সাতশো কোটি টাকা রাজ্যকে দিয়াছে কেন্দ্র। রাজ্য সরকারের দাবি, রাজ্য ইতিমধ্যে যে টাকা খরচ করিয়াছে, ইহা তাহার অর্ধেকও নহে। কেন্দ্রের নিকট রাজ্য যাহা দাবি করিয়াছিল, তাহার তিন-চার শতাংশ। আমপান-বিধ্বস্ত এলাকা পুনর্গঠন করিতে হইলে রাস্তা, সেতু, পানীয় জল সরবরাহের প্রকল্প, বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, সকলই মেরামত করিতে হইবে। জমি ও জল লবণমুক্ত করিতে হইবে, আটাশ লক্ষেরও অধিক ভাঙা বাড়ি সারাইতে হইবে। নাগরিক যদি বা নিজের গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করিতে পারেন, পরিকাঠামো পুনর্গঠনের দায় একান্তই সরকারের। সংবেদনহীন, দায়িত্বহীন রাজনীতিই জাতির জীবনে প্রকৃত দুর্যোগ।

অন্য বিষয়গুলি:

Cyclone Amphan Recovery
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy