পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কে দুই দেশের মনোভাবে বিস্তর ফারাক
বারোই মে ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন যে কোভিড পরিস্থিতি সামলাতে কুড়ি লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। তার পর গোটা সপ্তাহ জুড়ে চলল সেই হিসেবনিকেশ। দেশের একটা বড় অংশের সচেতন এবং শিক্ষিত মানুষ আশা করেছিলেন যে— এই ঘোষণাগুলিতে নিম্নবিত্তের জীবন এবং জীবিকা সংক্রান্ত কিছু ইতিবাচক খবর থাকবে। কিন্তু রাষ্ট্রের সমস্ত ঘোষণা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে দেশের খেটে খাওয়া মানুষদের জন্যে বিশেষ আশার আলো দেখা যাচ্ছে না। পুরোটাই বড় ব্যবসায়ীরা ঠিক কী ভাবে ঋণ পাবেন, বেসরকারিকরণের পথে দেশ কী ভাবে এগোবে, বিদেশি পুঁজির বিনিয়োগের ঊর্ধ্বসীমা কী হবে এই সমস্ত আলোচনা।
পুঁজিবাদী ব্যবস্থা মানেই সবটা শ্রমিকদের উপর অত্যাচার নয়। তুলনায় অনেক তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক দেশে শ্রমিকদের মানবাধিকার নেই বললেই চলে। সেই হিসেবে কোভিড পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ হিসেবে রাষ্ট্রের শাসককুল সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিতেই পারেন। কিন্তু প্রাথমিক ভাবে মানুষের বেঁচে থাকার জন্যে যে ধরনের মানবিক চিন্তাভাবনা করা উচিত, তা মোটেও দেখা গেল না কেন্দ্রের ঘোষণায়।
একেবারে শেষে, গত ১৭ মে শোনা গিয়েছে যে একশো দিনের প্রকল্পে আরও চল্লিশ হাজার কোটি টাকা ধার্য করেছেন কেন্দ্রীয় সরকার, যাতে পরিযায়ী শ্রমিকেরা নিজের অঞ্চলে ফিরে কিছুটা কাজ করার সুযোগ পান। অবশ্যই এই সিদ্ধান্ত হতদরিদ্রের কিছুটা সুবিধে করে দেবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরের দিনই এ কথা বলতে পারতেন নির্মলা সীতারামন মহাশয়া। অনেক দেরিতে এই ধরণের ঘোষণার অর্থ বিষয়টিকে খুব বেশি গুরুত্ব না দেওয়া। এর মধ্যে তাই সংবেদনশীলতার অভাব প্রত্যক্ষ করতে খুব অসুবিধে হয় না।
এটাই কি পুঁজিবাদের চরিত্র? নাকি একেবারেই আমাদের দেশজ রাজনীতি, যেখানে নিম্নবিত্ত মানুষের প্রয়োজন শুধু নির্বাচনের সময়। কারণ তখন উচ্চবিত্ত এবং নিম্নবিত্তের ভোটের মূল্য সমান। প্রথম বিশ্বের দেশগুলিতে মোটেই এমনটা ঘটে না। সেখানেও ধনতন্ত্র আছে, বেসরকারি ব্যবসা আছে, বহুজাতিক সংস্থা আছে, বিদেশি বিনিয়োগ আছে। সঙ্গে শ্রমের মূল্যটুকুও ধরা থাকে। সোজা কথায় ইউরোপের বেশিরভাগ দেশই কল্যাণকামী। এর সঙ্গে পুঁজিবাদের দ্বন্দ্ব নেই। শ্রমিককে সেখানেও খাটতে হয়, সঙ্গে তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে বিবেচিত হয়। সেই জন্যেই তো তৃতীয় বিশ্বের দেশ থেকে মানুষ ছোটেন এই সমস্ত জায়গায়, উন্নত জীবনযাত্রার সন্ধানে।
আরও পড়ুন: যাঁদের ব্যালকনি নেই, তাঁদের জন্য কিছু কথা
অন্য দিকে ভারতের ক্ষেত্রে এই অভূতপূর্ব কোভিড পরিস্থিতিতে দেশের নিম্নবিত্ত মানুষদের কাছে খাদ্য এবং অর্থ জোগানের সংস্থান থাকলেও, রাষ্ট্রব্যবস্থা তাতে উৎসাহী নয়। লকডাউনের চতুর্থ পর্ব ঘোষণা হয়ে গেল। দেশ যাতে সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচে তার জন্যে প্রচুর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু জনগণের পেটে খাবার পৌঁছনোর তাগিদ সরকারের নেই। মাসিক মাথাপিছু পাঁচ কেজি চাল আর পরিবারপিছু এক কেজি ডালের ঘোষণায় সেই দায়সারা ভাবটাই স্পষ্ট। তার সঙ্গে আমাদের দেশের দুর্নীতির অঙ্কটাও কষে রাখতে হবে। সেই খাবার কতটা মানুষের হাতে পৌঁছবে তা সত্যিই অজানা। উদাহরণ স্বরূপ পশ্চিমবঙ্গের গণবণ্টন ব্যবস্থার দুর্নীতির কথা বলছেন রাজ্যের ক্ষমতাসীন দলের নেতানেত্রীরাই। অন্য রাজ্যও এর থেকে খুব আলাদা হওয়ার কথা নয়। ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ তাই উগ্র জাতীয়তাবাদের স্লোগানের সঙ্গে মেলে ভাল, প্রান্তিক মানুষের ঘরে মসৃণ ভাবে খাবার পৌঁছে দেওয়ায় তার কার্যকারিতা সীমিত।
অন্যান্য দেশে কী হচ্ছে তার সঙ্গে তুলনার দায় থাকে। আমাদের বেশ কাছেই সিঙ্গাপুর। আয়তন বা জনসংখ্যায় ভারতের সঙ্গে তুলনাই হয় না। কিন্তু জনঘনত্ব যথেষ্ট। পুরো ব্যবস্থাই পুঁজিবাদী, শাসনব্যবস্থা প্রায় সামরিক। নিয়মানুবর্তিতা প্রচণ্ড, আইন না মানলে চাবুকের আঘাত সহ্য করতে হয়। রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে সমালোচনা করার অধিকার প্রায় নেই বললেই চলে। অর্থাৎ আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যমে সরকারের যে ধরণের সমালোচনা করা যায় সে সুযোগ সিঙ্গাপুরে নেই। সিঙ্গাপুর মডেলটা আমাদের এখন বোঝা দরকার মূলত দুটি কারণে। এক হল আমাদের শহরাঞ্চলে যে ধরণের পরিযায়ী শ্রমিকেরা কাজ করেন সিঙ্গাপুরেও সেই বিষয়টি আছে। তাঁদের একটা বড় অংশ ভারত, পাকিস্তান বা বাংলাদেশ থেকে যাওয়া। দুই, যথেষ্ট জনঘনত্বের এই দেশ থেকে শিক্ষা নিলে আমাদের শহরাঞ্চলে তা কাজে দিতে পারে। সেখানকার শ্রমিকেরা এক একটি ঘরে আট দশ জন পর্যন্ত থাকেন, ট্রেনের বাঙ্কের মত ব্যবস্থা আছে। এই লেখা যারা পড়বেন তাঁরা অনেকেই হয়ত সিঙ্গাপুরে গিয়েছেন। মূলত যে অঞ্চলটায় এই পরিযায়ী শ্রমিকেরা থাকেন তার নাম লিটল ইন্ডিয়া। জায়গাটি অবশ্যই সিঙ্গাপুরের অন্যান্য এলাকার তুলনায় অনেক বেশি ঘনবসতিপূর্ণ এবং অপরিচ্ছন্ন। ভারতের পরিযায়ী শ্রমিকেরা দেশের নাগরিক। কিন্তু সিঙ্গাপুরে যাঁরা কাজ করতে গিয়েছেন তাঁদের বেশির ভাগই সে দেশের নাগরিকত্ব পান না। এই কোভিড পরিস্থিতিতে তাঁদের সঙ্গে ঠিক কী ব্যবহার করছে সেখানকার সরকার? এক কথায় সহমর্মিতায় কোনও খাদ নেই সেখানে।
সমাজবিজ্ঞানে তো আর অঙ্কের মত উপপাদ্যের প্রমাণ হয় না। ফলে উদাহরণই দিতে হবে বেশ কিছু। কোভিড পরিস্থিতির মধ্যে কেটেছে এ বারের মে দিবস। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং সে দিন যে বক্তব্য রেখেছেন তা সহজেই খুঁজে পাবেন আকাশপাতায় (https://www.gov.sg/article/pm-lee-may-day-message-2020)। পড়তে দশ-বারো মিনিট সময় লাগবে। বিজেপির কাছে মে দিবসের গুরুত্ব যে কম তা বোঝাই যায়। আর এ মোটেই আমাদের বাম জমানার মে দিবসের ব্রিগেড বক্তৃতা নয়। একেবারে পরিষ্কার রূপরেখা, যার শিরোনাম “সিঙ্গাপুরের সকল কর্মী ও অর্থনীতির উপর কোভিড-১৯ এর প্রভাব এবং আগামীর পরিকল্পনা।” গোটা লেখাটি পড়লে গায়ে কাঁটা দেবে যে একটি দেশের প্রধানমন্ত্রী ঠিক কতটা সহানুভূতিশীল সাধারণ মানুষের প্রতি। “মে দিবস সকল শ্রমিকের উদযাপনের দিন, তার মধ্যে পরিযায়ী (অভিবাসী) শ্রমিকরাও আছেন। বিশেষ করে আমার শুভেচ্ছা অভিবাসী শ্রমিকদের প্রতি, এই দেশ গড়ার কাজে আপনাদের অবদানের জন্য”।
আরও পড়ুন: জামলো, পায়েল আর সাইউবদের গল্প
এখানে একটু বিশদে বলতেই হয় যে ‘মাইগ্র্যান্ট’ বলতে আমরা ভারতবর্ষে বুঝি ‘পরিযায়ী’। যাঁরা কিনা এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে গিয়েছেন। সকলেই এ দেশের নাগরিক। সিঙ্গাপুরে তাঁরা একই সঙ্গে ‘পরিযায়ী’ এবং ‘অভিবাসী’। বাস্তব কি বোঝেননি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী? পরিষ্কার বলেছেন, “ব্যবসা চালু রাখতে গেলে মজুরি হয়ত কিছুটা কমবে। মালিকপক্ষকেও অবশ্যই তাদের কর্মীদের কাজে রেখে দেওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালু রাখতে হবে এবং এই কঠিন সময়ে কর্মীদের দিকে বাড়িয়ে দিতে হবে সহায়তার হাত। সমস্যার শুরুতেই কর্মী ছাঁটাই করা যাবে না।”
একই কথা বলেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রীও। কিন্তু সে কথায় জোর নেই মোটেই। বিভিন্ন রাজ্যে উৎপাদন বন্ধ হওয়া মাত্র অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিকদের চাকরি গিয়েছে বিনা নোটিসে। বেসরকারি মালিকপক্ষ, কিংবা সরকার, সে কেন্দ্রই হোক বা সংশ্লিষ্ট রাজ্য, একেবারে চোখ বুঁজে থেকেছে। কয়েকটি রাজ্যে শ্রম আইন লঘু করার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। তারপর পরিযায়ী শ্রমিকেরা কতটা পথ পেরোলেন আর কত জন মরলেন, সে খবর নিয়ে নতুন করে আলোচনা আর নাই বা করলাম। একটা দেশ শ্রমিকদের ওপর অবিচার করে কখনোই তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্বের তকমা পায় না। আজকে যারা উন্নত, পুঁজিবাদ যেখানে অনেকাংশে সফল, তারাও এক সময় পিছিয়ে ছিল। কিন্তু শ্রমকে মূল্য না দেওয়ায় যুগে যুগে পিছিয়েছে ভারত। অক্সফ্যামের তথ্যে এক শতাংশ ভারতীয় উচ্চবিত্তের হাতে তিয়াত্তর শতাংশ সম্পদ তাই দেশের অনুন্নয়নেরই খতিয়ান। কোভিড পরিস্থিতিতে বিজেপির পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক কার্যকলাপে সেই বৈষম্য যে বাড়বে তা বলাই বাহুল্য।
এ বার আসা যাক সিঙ্গাপুরের কোভিড পরিসংখ্যানে। অত্যন্ত কঠোর কিছু ব্যবস্থা নেওয়া সত্ত্বেও তারা কোভিড সংক্রমণ কিছুটা সময় নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। তবে এখন তা আবার নীচের দিকে।
এ বার মূল প্রশ্ন হল সিঙ্গাপুরের সংক্রমণ ঠিক কোথায়? তা হল মূলত অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে। আগেই বলেছি এঁরা থাকেন খুব ঘিঞ্জি অঞ্চলে, যেখানে জীবনযাত্রার মান ততটা ভাল নয়। অবশ্যই তা ভারতীয় উপমহাদেশের অবস্থার থেকে ভাল, না হলে তাঁরা আর সিঙ্গাপুরে গেলেন কেন? কিন্তু একই ঘরে অনেকে থাকায় সংক্রমণ মুক্তির পথ নেই। এই জায়গাতেই বুঝতে হবে যে মুম্বই কিংবা কলকাতার নিম্নবিত্ত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় কোভিড সংক্রমণ হলে তা রোধ করা খুবই কঠিন, যদি না প্রাকৃতিক বা শারীরিক প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে আমরা বেঁচে যাই।
সিঙ্গাপুরে আলাদা করে রাখা হয়েছে এই শ্রমিকদের। বহু ক্ষেত্রে যে ঘরে তাঁরা থাকছিলেন সেখানেই। কিছু ক্ষেত্রে সরানো হয়েছে কোনও ক্যাম্পে। কিন্তু বিশেষ ভাবে আলাদা করে রাখা হয়েছে যাঁরা সংক্রমিত তাঁদের।
সিঙ্গাপুর সরকারের খরচে প্রচুর পরীক্ষা করা হচ্ছে প্রতিদিন। যাঁরা অন্তরীণ তাঁদের প্রত্যেকের কাছে নিয়মিত খাবার পৌঁছচ্ছে। এমন খবরও পাওয়া যাচ্ছে যে— বিমানে পরিষেবা দেওয়া সংস্থাকে কাজে লাগানো হয়েছে এই শ্রমিকদের কাছে খাবারের প্যাকেট পৌঁছে দেওয়ার জন্যে। কোথাও খাবারের জন্যে হাহাকার নেই। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই কাজ না থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকদের মাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছে, যাতে তাঁরা দেশে নিজের বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারেন। সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষকে খুঁজে নেওয়া হয়েছে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে। হ্যাঁ, কলকাতা থেকে যাওয়া বাঙালি গবেষক বাংলায় টেলিফোনে কথা বলছেন বাংলাদেশের পরিযায়ী শ্রমিকের সঙ্গে, প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিচ্ছেন, উত্তর দিচ্ছেন বিভিন্ন প্রশ্নের।
সঙ্গে নিয়মের বজ্রআঁটুনি অবশ্যই আছে। পুঁজিবাদের চিরাচরিত নিয়মেই এই শ্রমিক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ঠিকমত কাজ না করলে তাকে অবশ্যই বিদায় করবে সিঙ্গাপুরের সরকার কিংবা বেসরকারি কোম্পানি। সেখানে মেকি সমাজবাদ কাউকে বাঁচাতে যাবে না। কিন্তু অতিমারির দিনে তারা শ্রমিকদের সমুদ্রের জলে ডিঙি নৌকায় ভাসিয়ে দেয়নি। রীতিমত বুকে আগলে রেখেছে।
১৭ মে দুপুর বারোটায় সিঙ্গাপুর সরকারের এজেন্সি ওয়েবসাইট যে পরিসংখ্যান দিয়েছে, তাতে সে দিন নতুন সংক্রমণের প্রমাণ মিলেছে ৬৮২টি। তার মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিক চার জন, একজন দীর্ঘস্থায়ী বাসিন্দা। চার জন অভিবাসী যাঁদের আলাদা থাকার সামর্থ আছে। আর বাকি ৬৭৩ জন অভিবাসী থাকেন ডরমিটরিতে, একই ঘরে অনেকে ভাগাভাগি করে। অর্থাৎ সংক্রমিতদের প্রায় নিরানব্বুই শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিক। ঠিক এমনটাই পরিসংখ্যান গত তিন সপ্তাহ ধরে। কোথাও তো নাক কুঁচকানো নেই, কোথাও কেউ জিজ্ঞেস করছেন না ধর্ম কী, কোথাও কেউ ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলছেন না যে এই অন্য দেশ থেকে ঢুকে পড়া লোকগুলোর জন্যে সিঙ্গাপুরের এই অবস্থা।
উপসংহারে
সিঙ্গাপুরের সংক্রমণ প্রায় পুরোটাই অভিবাসী শ্রমিকদের, যাদের জীবনযাত্রার মান খুব সুবিধের নয়। কোভিড পরিস্থিতি থেকে সে দেশ মুক্তি পেলে আবার তাঁরা কাজে নামবেন। পুঁজিবাদের সরল নিয়মেই কমবেশি শোষণের শিকার হবেন। কিন্তু সেই রাষ্ট্রব্যবস্থায় ভয়ঙ্কর এক অতিমারির দিনে তাঁদের কেউ ছুঁড়ে ফেলে দেবে না, অস্বীকার করবে না দায়িত্ব। ভারতের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের পার্থক্য এখানেই। ঠিক একই কারণে আলাদা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর ভারত রয়ে যাবে সেই পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশের মানেই, হয়ত বা এর পর তুলনায় আসবে অভিশপ্ত আফ্রিকার দেশগুলি। কোভিড পরিস্থিতিতে যেখানে সরকার সারা দেশের নিম্নবিত্ত মানুষের আশীর্বাদ পেতে পারত খুব সহজে, সেখানে এখন সব্জির লরিতে চলছে দুই রাজ্যের সীমানায় মানুষ পাচার। পূর্ণিমার চাঁদ রেল লাইনে গড়াগড়ি খাচ্ছে। পরিযায়ী নয়, নিজের দেশেই ভারতের শ্রমিকেরা অভিবাসী। পুঁজিবাদের নয়, এই ব্যর্থতা একেবারেই যাঁরা সরকার চালাচ্ছেন তাঁদের সঙ্কীর্ণ মানসিকতার। নরেন্দ্র মোদী কিংবা নির্মলা সীতারামনের ব্যক্তিগত সততা নিয়ে কোন প্রশ্নই উঠতে পারে না। কিন্তু কোন রাজনীতির সম্মোহনে তাঁরা এমন অদ্ভুত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন সেটা একেবারেই বুঝছেন না দেশের অধিকাংশ মানুষ। আজকের সংস্কার হোক নিম্নবিত্তকে বাঁচিয়ে রেখেই, সিঙ্গাপুরের মডেলে। মহারাষ্ট্র বা গুজরাটে সংক্রমণ বিপুল, সেখানে কাজে লাগতে পারে সিঙ্গাপুরের শিক্ষা। প্রস্তুত হতে পারে কলকাতাও। আমাদের দেশের শহরাঞ্চলগুলিকে সুবিধে মতো ভাগ করে রুখে দেওয়া হোক সংক্রমণ। ধর্মের ভিত্তিতে ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ নয়, পুঁজিবাদের সফল প্রয়োগ হোক ‘ডিভাইড অ্যান্ড কঙ্কার’-এ। বিপুল জনমত নিয়ে ক্ষমতায় আসা সরকারের কাছে সেটাই কাম্য। কুড়ি লক্ষ কোটি টাকার ভাগাভাগিটা কি আর এক বার ফিরে দেখবেন শাসককুল?
(লেখক ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক, মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy