Advertisement
E-Paper

ঘোরতিমিরঘন

ধর্মাচরণের স্বাধীনতার মোড়কে নাগরিক স্বাধীনতার উপর খাঁড়ার কোপ পড়িতেছে। বলপূর্বক ধর্মান্তরণের বিষয়টিকে প্রধান্য দেওয়া হইয়াছে।

শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২০ ০২:৪৯
Share
Save

উত্তরপ্রদেশ প্রমাণ করিতেছে, কী ভাবে একটি ভয়ঙ্কর আইন পাশ করাইয়া তাহার ভয়ঙ্করতর ব্যবহার সম্ভব। যোগী আদিত্যনাথের তত্ত্বাবধানে সে রাজ্যে চালু হইয়াছে লাভ জেহাদ-নিবারণী আইন। অদ্যাবধি সেই আইনে যতগুলি মামলা দায়ের হইয়াছে, কার্যত প্রতিটির ক্ষেত্রেই অভিযোগ— আইনটিরও সীমার বাহিরে গিয়া তাহার ‘অপব্যবহার’ হইতেছে। প্রশ্ন উঠিতে পারে, যে আইন মূলগত ভাবেই এমন ভয়ঙ্কর, পশ্চাৎপদ, দানবিক— কেমন করিয়া তাহার ‘অপপ্রয়োগ’ সম্ভব? তাহার কারণ নিহিত আছে আইনটির সহিত ভারতের সংবিধানের সম্পর্কে। যদিও আইনটি স্পষ্টতই সংবিধানের মূলনীতিটি অগ্রাহ্য করে, যে মর্মে ইতিমধ্যে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলাও উঠিয়াছে— সংবিধানের ফাঁক খুঁজিবার চেষ্টাও এই আইনে নিহিত। প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিককে স্বেচ্ছায় জীবনসঙ্গী বাছিবার অধিকার ভারতের সংবিধান দেয়— পাত্র ও পাত্রীর সম্মতিই সেখানে যথেষ্ট; ধর্ম, জাত, পারিবারিক অনুমোদনের ন্যায় অন্য কোনও বিষয় বিবেচ্য নহে। স্বেচ্ছায় ধর্ম পরিবর্তনেও কোনও বাধা নাই। গৈরিক জাতীয়তাবাদীদের শত ইচ্ছা সত্ত্বেও যে হেতু এখনও দেশের সংবিধানটিকে বাতিল কাগজের ঝুড়িতে নিক্ষেপ করা সম্ভব হয় নাই, ফলে যোগী আদিত্যনাথের নূতন আইনটিকেও সংবিধানের ফাঁক খুঁজিতে হইয়াছে, মধ্যযুগীয় বর্বরতাকে গুঁজিয়া দেওয়ার কৌশল করিতে হইয়াছে। বলা হইয়াছে, যদি বিবাহার্থে কাহাকেও বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করা হয়, তবে তাহা এই আইনে দণ্ডনীয়। অর্থাৎ, ধর্মাচরণের স্বাধীনতার মোড়কে নাগরিক স্বাধীনতার উপর খাঁড়ার কোপ পড়িতেছে। বলপূর্বক ধর্মান্তরণের বিষয়টিকে প্রধান্য দেওয়া হইয়াছে। অথচ, কার্যক্ষেত্রে, উত্তরপ্রদেশে আইনটি বলবৎ হওয়া ইস্তক এই শর্তটি অগ্রাহ্য করিয়া, হিন্দু পাত্রীর সহিত মুসলমান পাত্রের বিবাহমাত্রেই ‘বলপূর্বক ধর্ম পরিবর্তন’ বিবেচনা করা হইতেছে— এমনকি আদৌ কেহ ধর্মান্তরিত না হইলেও। তবে কি এই অপব্যবহারের উদ্দেশ্যেই আইনটি প্রণীত? সাংবিধানিক সীমা পারাইবার জন্যই এত রকম ব্যবস্থা?

যোগী আদিত্যনাথ মার্কা হিন্দুত্ববাদের উদ্দেশ্য ও বিধেয় লইয়া কখনও সংশয় ছিল না। কিন্তু এই আইন প্রণয়ন এবং তাহার স্পর্ধিত অপব্যবহারের বন্যা ভারতে হিন্দুত্ববাদী শাসনকে এক নূতন পর্যায়ে লইয়া যাইতেছে। ভারতে যেখানে আইন প্রণীত হইলেও তাহার প্রয়োগে পুলিশ-প্রশাসনের গড়িমসি প্রবাদপ্রতিম, সেখানে উত্তরপ্রদেশে পুলিশ আইনের আগে দৌড়াইয়া অপরাধী ধরিতে ব্যস্ত! পুলিশ ও প্রশাসনের অন্তর্নিহিত সাম্প্রদায়িকতাই ইহার প্রধান প্রণোদনা। খাকি উর্দি গায়ে চাপাইলেই কিংবা সাংবিধানিক আসনে বসিলেই সংবিধান-বর্ণিত রীতিনীতি মানিয়া চলিতে হয় না, আজিকার ভারত তাহার সাক্ষাৎ সাক্ষী। হাথরসের পুলিশ যখন ধর্ষিতা মেয়ের মৃতদেহ রাতের অন্ধকারেই জ্বালাইয়া দিয়াছিল, তখনকার সেই মানসিকতাই আজও সে রাজ্যের প্রশাসনকে লাভ জেহাদের মহোৎসাহী চৌকিদার করিয়া তুলিয়াছে। রাজ্যে শাসকরা যদি অন্ধকারের যাত্রী হন, পুলিশ তবে অন্ধকারের উদ্গ্রীব অগ্রদূত।

এই অন্ধকার শুধু উত্তরপ্রদেশেরই নহে, উত্তরাখণ্ডেরও নহে। ইতিমধ্যেই বিজেপি-শাসিত আর দুইটি রাজ্য, কর্নাটক ও মধ্যপ্রদেশে, লাভ জেহাদ-নিবারণী আইন প্রস্তুতির পথে। বিহারেও হইবে, এমন আশঙ্কা প্রবল। অন্য বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিও পিছাইয়া থাকিবে, বিশ্বাস করিতে ভরসা হয় না। উত্তরপ্রদেশ আইনের যে অপব্যবহার করিতেছে, এই রাজ্যগুলিও হয়তো ক্রমশ তেমন করিবে। ধর্মনিরপেক্ষতা বা উদারবাদের বদলে ধর্মান্ধ অতিজাতীয়তাবাদকে বাছিয়া লইলে কত ভয়ানক মূল্য চুকাইতে হয়, লাভ জেহাদ নামক বর্বরতা তাহারই প্রমাণ।

Love Jihad Uttar Pradesh Yogi Adityanath Religion

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।