Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪
Prasab sathi

Prasab sathi: সন্তান প্রসব একটি স্বাভাবিক ঘটনা, মায়ের পাশে ‘প্রসবসাথী’ বাবার থাকা উচিত

বাচ্চার জন্মের পর মায়ের সঙ্গে তার একমাত্র সংযোগ ‘আম্বেলিক্যাল কর্ড’ বা নাড়িটি কাটার দায়িত্ব নেন চিকিৎসক। বাবা ওই নাড়ি কাটলে তার থেকে ভাল আর কী হতে পারে!

—প্রতীকী চিত্র।

গৌতম খাস্তগীর
গৌতম খাস্তগীর
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২২ ০৯:০০
Share: Save:

প্রায় ৩০ বছর আগে প্রথম কলকাতা থেকে বিলেতে গিয়েছিলাম। সেখানকার হাসপাতালে কাজ করতে গিয়ে তো অবাক! প্রসবের সময় সেখানে প্রসূতির সঙ্গে তাঁর স্বামীকেও হাসপাতালের ‘ডেলিভারি রুমে’ আসতে দেওয়া হয়!

আমাদের দেশে কখনও এমন দেখিনি। খুবই অবাক হয়ে এক সহকর্মীকে কারণ জিজ্ঞাসা করায় তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, স্বামীদের ‘ডেলিভারি রুমে’ থাকতে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা। এখনও মনে আছে দিনটা। সেই সহকর্মী বলেছিলেন, সন্তান হওয়ার সময়টা সারা জীবনের জন্য দারুণ এক অভিজ্ঞতা। অন্তঃসত্ত্বা হওয়া তো এক যৌথ প্রচেষ্টার ফসল। তাই প্রসবের সময় শিশুটিরক বাবা সেখানে না-থাকলে সন্তান হওয়ার মুহূর্তের অভিজ্ঞতা তো তাঁর কাছে অধরা থেকে যাবে। ওই মুহূর্তটায় তো তাঁরও থাকা উচিত।

পরে আমিও বিষয়টা উপলব্ধি করেছি। গোটা গর্ভকালীন সময়ে এক জন পুরুষ তাঁর সঙ্গিনীর যত্ন নিয়েছেন। হয়তো কাজের জায়গা থেকে তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছেন। সঙ্গিনীকে নানা কাজে সাহায্য করেছেন। হয়তো খাইয়ে দিয়েছেন। ফলে সন্তানের জন্মকালে তাঁর থাকাটা অত্যন্ত জরুরি। প্রথম বিশ্বে এই ব্যাপারটি চালু আছে। আমাদের এখানে ‘প্রসবসাথী’ চালু করার কথা শুনে বিলেতের দিনগুলো মনে পড়ে গেল।

মনে রাখতে হবে, প্রসব কোনও অসুখ নয়। এটা জীবনের অত্যন্ত স্বাভাবিক একটা বিষয়। প্রসবের ঘটনাটা তো আর গলব্লাডার, অ্যাপেনডিক্স বা অন্যান্য অস্ত্রোপচারের মতো বিষয় নয়। ওগুলো অসুখ সারানোর জন্য। আর বাচ্চা হওয়াটা জীবনের স্বাভাবিক অঙ্গ। শুধুমাত্র হাসপাতাল ভীতি কাটানোর জন্যও যদি স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে থাকেন ‘ডেলিভারি রুমে’, তা হলে মায়ের নর্ম্যাল ডেলিভারির সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেক গুণ। প্রসূতিকে বোঝাতে হবে, এটা একটা ‘নন মেডিক্যাল সিচুয়েশন’। স্বামী একটু উৎসাহ দিলেন, স্ত্রীর মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন, আলতো করে হাতে চাপ দিলেন। তাতেই অনেকটা কাজ দেয়। মায়ের মানসিক জোর অনেকটা বেড়ে যায়।

বিদেশে ‘সিজারিয়ান ডেলিভারি’র সময়েও স্বামীকে থাকতে দেওয়া হয়। আমরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ‘স্পাইনাল অ্যানাস্থেশিয়া’ করে ‘সিজারিয়ান ডেলিভারি’ করি। অর্থাৎ প্রসূতি সজ্ঞানে থাকে। বাচ্চা জন্মাল, বাচ্চা কাঁদল— সবই তিনি শুনতে পান। তা হলে বাবা কেন সেই মুহূর্তে সেখানে থেকে ওই জন্মানো বা কাঁন্না দেখবেন না! শুনবেন না! তাঁরও তো অধিকার আছে।

বাচ্চার জন্মের পর মায়ের সঙ্গে তার একমাত্র সংযোগ ‘আম্বেলিক্যাল কর্ড’ বা নাড়িটি কাটার দায়িত্ব নেন চিকিৎসক। বাবা ওই নাড়ি কাটলে তার থেকে ভাল আর কী হতে পারে! এটা কিন্তু বিদেশে হয়। বাচ্চার নাড়ি কাটছে তার বাবা।

সম্প্রতি কেউ কেউ এখানেও ‘ডেলিভারি রুমে’ থাকার অনুরোধ করছেন বটে। তবে সংখ্যাটা অত্যন্ত কম। অথচ ৩০ বছর আগে এটা বিদেশে দেখেছি। বিশ্বায়নের জন্য এখন সব কিছুই আপনার হাতের মুঠোয়। সবাই নেটমাধ্যমে সবটা দেখছে। ইউটিউবে ভিডিয়ো দেখছে। তার ফলেই অনুরোধের সংখ্যা একটু একটু করে বাড়ছে। নাড়ি কাটার অনুরোধও বেশ কয়েকটা পেয়েছি। তবে সবটাই উচ্চশিক্ষিত এবং অবাঙালি পরিবারের অনুরোধ।

‘প্রসবসাথী’ উদ্যোগ ভাল। অনেক সময় দেখেছি, অনেক বাবা আবেগে চলে আসেন। কিন্তু ডেলিভারি রুমে সব দেখেশুনে তাঁর শরীর খারাপ লাগে। অনেকে বাইরে চলে যান ডাক্তারবাবুকে বলে। কারণ, এর মধ্যেও একটা শিক্ষার ব্যাপার থাকে। আমাদের তো ছোট থেকে শেখানোই হয়নি, প্রসবকালে স্ত্রীকে কী ভাবে সাহায্য করতে হয়। আমি তাই সেই সব অনুরোধ রাখি বটে। তবে বাবাদের একটা পর্দার আড়ালে রাখি। তিনি স্ত্রীর অস্ত্রোপচার দেখতে পারেন না, তবে তাঁর হাতটা ধরতে পারেন। কথা বলতে পারেন, মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে পারেন। স্ত্রীকে তিনি সহানুভূতি দেখালেন। আবার পরিস্থিতি চাক্ষুষ করতে হল না। আসলে বাবা-মাকে একটা ‘অ্যান্টেনেটাল’ বা গর্ভাবস্থায় কিছু শারীরিক ব্যায়ামের শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন। মা কোন পজিশনে থাকবেন, কী কী করবেন, বাবাদের সেই সময় কী-কী করা উচিত, সবটাই শিখতে হয়।

তবে আরও একটা কথা। অনেক সময় প্রসূতিকে ‘জেনারেল অ্যানাস্থেশিয়া’ করা হয়। সে ক্ষেত্রে তাঁর কোনও সাড় থাকে না। কথাও বলেন না। সেই রকম পরিস্থিতিতে বাবাকে রেখে কোনও লাভ হবে না। অনেক ক্ষেত্রে প্রসবের সময় পরিস্থিতি একটু জটিল হতে পারে। প্রচুর রক্তপাতও হয় অনেক ক্ষেত্রে। বাচ্চা জন্মানোর পর তার গলায় টিউব দেওয়া হতে পারে কোনও কোনও সময়ে। অনেক বাবা এ সব দেখে ঘাবড়ে যেতে পারেন। সেই সময় তাঁদের ভিতরে আসতে না দেওয়াই ভাল। উচিতও। আমি এই সব ক্ষেত্রে তাঁদের বাইরে অপেক্ষা করতে বলি।

বাবারা থাকুন। মায়েদের পাশেই থাকুন। কিন্তু জরুরি অবস্থায় তাঁদের বাইরেই রাখা উচিত। মনে রাখতে হবে বাচ্চা হওয়া মানে কোনও অসুস্থতা নয়, এটা জীবনের স্বাভাবিক ঘটনায় মায়েদের পাশে বাবাদেরও থাকা উচিত। জরুরি।

(লেখক স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞমতামত নিজস্ব)

অন্য বিষয়গুলি:

Prasab sathi Health Healthcare
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy