Advertisement
E-Paper

শুধুই রাজনীতি

রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতিতে যে ভরসা করিয়াছিল, কেন্দ্রের বর্তমান অবস্থান সরাসরি সেই বিশ্বাসকে ভঙ্গ করিতেছে।

জিএসটি কাউন্সিলের সাম্প্রতিকতম বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও অন্যান্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা। ছবি পিটিআই।

জিএসটি কাউন্সিলের সাম্প্রতিকতম বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও অন্যান্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা। ছবি পিটিআই।

শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২০ ০১:০১
Share
Save

জিএসটি কাউন্সিলের সাম্প্রতিকতম বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ও অন্যান্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীরা। ছবি পিটিআই।

ফের মধ্যরাত অবধি গড়াইল বৈঠক। ফের মীমাংসাসূত্র অধরাই থাকিল। ইহাই হইল জিএসটি কাউন্সিলের সাম্প্রতিকতম বৈঠকের সারাৎসার। বিরোধটি যে এখন সম্পূর্ণ রাজনৈতিক, এবং সেই রাজনীতির মূল হোতা যে কেন্দ্রীয় সরকার, তাহাতে আর রাখঢাক করিবার বালাইটুকুও নাই। বিজেপি বা তাহার বন্ধুভাবাপন্ন দলশাসিত একুশটি রাজ্য বাজার হইতে টাকা ধার করিয়া লইতে প্রস্তুত। অন্য দশটি রাজ্য জানাইয়াছে, জিএসটি ক্ষতিপূরণের টাকার জন্য যদি ধার করিতে হয়, তবে তাহা কেন্দ্রীয় সরকারকেই করিতে হইবে— দেনার দায় রাজ্যগুলির উপর চাপাইয়া দেওয়া চলিবে না। এই তর্কে কোন পক্ষের অবস্থান ন্যায্য, আর কোন পক্ষের অন্যায্য, তাহা প্রশ্নাতীত রকম স্পষ্ট। জিএসটি ব্যবস্থা চালু করিবার সময় রাজ্যগুলি তাহাদের পরোক্ষ কর আদায়ের অধিকারটি ছাড়িয়া দিয়াছিল এই প্রতিশ্রুতির ভরসায় যে, কেন্দ্রীয় সরকার সেই রাজস্ব ক্ষতি পুষাইয়া দিবে। ইহা সামান্য কোনও চুক্তি ছিল না— এই বোঝাপড়াটি দাঁড়াইয়া ছিল যুক্তরাষ্ট্রীয়তার ধর্মের কেন্দ্রস্থলে। এখন কেন্দ্রীয় সরকার যদি সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, তাহা প্রকৃত প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রীয়তার ধর্মের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা। রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিশ্রুতিতে যে ভরসা করিয়াছিল, কেন্দ্রের বর্তমান অবস্থান সরাসরি সেই বিশ্বাসকে ভঙ্গ করিতেছে। তাহার তাৎপর্য শুধু জিএসটির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নহে, যুক্তরাষ্ট্রীয়তার ভবিষ্যৎকেই তাহা প্রশ্নের মুখে দাঁড় করাইয়া দেয়।

কেন্দ্র যদি জিএসটির টাকা আদায় করিতে না পারে, তবে রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ দিবার কী ব্যবস্থা হইবে? এই প্রশ্নটিই গত এক মাস যাবৎ অমীমাংসিত থাকিয়া গিয়াছে। অথচ, উত্তরটি সরল— পশ্চিমবঙ্গের ন্যায় রাজ্যগুলি যাহা দাবি করিতেছে, তাহাই সমাধানসূত্র, অর্থাৎ রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্ক হইতেই হউক, অথবা বাজার হইতে, টাকা ধার করিবে কেন্দ্র, এবং রাজ্যগুলিকে তাহাদের প্রাপ্য মিটাইয়া দিবে। যুক্তিটিও সরল— কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণের টাকা দিবে, ইহাই চুক্তি ছিল, এবং যুক্তরাষ্ট্রীয়তার স্বার্থেই কোনও পরিস্থিতিতে এই চুক্তির খেলাপ হইতে পারে না। যাহা আরও বিপজ্জনক, তাহা হইল, কেন্দ্রীয় সরকার এই চুক্তির খেলাপ করিতে চাহিতেছে নেহাতই সংখ্যার জোরে, কোনও দার্শনিক অবস্থানের ভিত্তিতে নহে। কাউন্সিলে বিজেপির জোর বেশি, সেই জোরেই রাজ্যগুলির উপর কেন্দ্রের একতরফা সিদ্ধান্ত চাপাইয়া দেওয়া হইবে— ইহা যুক্তরাষ্ট্রীয়তার মূল শর্তটিকেই বিনষ্ট করিতে চাহে। যে সরকার যুক্তরাষ্ট্রীয়তাকে সম্মানই করে না, তাহার কথায় ভরসা করিয়া রাজ্যগুলি বাজারের ঋণের দায় স্কন্ধে লইবে কেন? এমনিতেই তাহাদের আর্থিক সমস্যার তো কোনও অভাব নাই।

ভারতের বর্তমান শাসকদের প্রকৃত দূরদৃষ্টি আছে, এমন দাবি করিবার মতো কারণ গত ছয় বৎসরে বিশেষ মিলে নাই। তাঁহারা ক্ষণিকের ক্ষুদ্র স্বার্থেই মগ্ন। ফলে, তাঁহারা ভুলিয়াছেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কাল না হউক পরশুর পরের দিন তাঁহারা ক্ষমতাচ্যুত হইতেই পারেন। তাঁহাদের সংখ্যার জোর কমিতে পারে। তখন তাঁহাদের মত চাপাইয়া দিবার মতো জোর থাকিবে না, কিন্তু এই গা-জোয়ারির অভ্যাসটি ব্যবস্থার মজ্জাগত হইয়া যাইবে। এই কারণেই কিছু নীতিকে, কিছু প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক ক্ষুদ্রতার ঊর্ধ্বে রাখিতে হয়। প্রতিষ্ঠানকে, ব্যবস্থাকে নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে ব্যবহার করিবার অভ্যাসটি ব্যাঘ্রের পৃষ্ঠে সওয়ার হইবার সমতুল— নামা আবশ্যক হইলে সেই ব্যাঘ্র হইতে নিস্তার পাওয়া কঠিন। জিএসটির ন্যায় অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নকে শেষ অবধি ক্ষুদ্র রাজনীতির কানাকড়িতে পরিণত করিবার অর্থ যে দেশের মানুষের স্বার্থ লইয়া ছেলেখেলা, তাহাও স্মরণে রাখা বিধেয়।

GST GST Council

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।