Advertisement
E-Paper

গড় পরমায়ু ও অবসরের বয়স

২০১২-১৬’র এসআরএস বেসড আব্রিজড লাইফ টেবলস, যার মধ্যবর্ষ ২০১৪ সাল, দেখলাম আমাদের গড় পরমায়ু বা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে হয়েছে ৬৮.৭ বছর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অরবিন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৯ ০০:০১
Share
Save

পঞ্চম কেন্দ্রীয় বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার সময়সীমা ৫৮ থেকে বেড়ে ৬০ হয় ১৯৯৮ সালের মে মাসে। যত দূর জেনেছিলাম এই অবসরের সময় সীমা বাড়ার একটি বড় কারণ নাকি আমাদের গড় পরমায়ু বা জন্মের সময় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যাওয়া। স্যাম্পল রেজিস্ট্রেশন সিস্টেমের (এসআরএস) মাধ্যমে, আমাদের জন্মের সময় সম্ভাব্য আয়ু যা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে গড় পরমায়ু বলে পরিচিত, হিসেব করা হয়। ১৯৯৫-৯৯ এর এসআরএস বেসড আব্রিজড লাইফ টেবলস, যার মধ্যবর্ষ ১৯৯৭ সাল, থেকে আমরা দেখতে পাই যে আমাদের জন্মের সময় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা তখন ছিল ৬১.৫ বছর। আমরা তো একেই গড় পরমায়ু বলেই জানি। তা হলে তো ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত চাকরি করার সুযোগ পাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। পশ্চিমবঙ্গ সরকারও দেরি করেনি তাদের কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৬০ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে। যা-ই হোক, বিষয়টা কিন্তু আমার মনে সেই সময় তেমন করে সাড়া ফেলেনি কারণ আমার অবসর নেওয়ার বয়স বেড়ে হয়েছিল ২০১৭ সাল। সে তো অনেক দূরে। কিন্তু তখন বুঝিনি জীবনে কোনও দূরই দূরে নয়। এ বার সত্যি সত্যিই আমার অবসর নেওয়ার সময় কাছে এসে গেল।

এ বার সপ্তম বেতন কমিশন বসেছে। ২০১২-১৬’র এসআরএস বেসড আব্রিজড লাইফ টেবলস, যার মধ্যবর্ষ ২০১৪ সাল, দেখলাম আমাদের গড় পরমায়ু বা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়ে হয়েছে ৬৮.৭ বছর। তা হলে তো আমাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়েছে। মনে মনে ভাবি এ বারও বেতন কমিশন অবসরের সময়সীমা ২ বছরের জন্য নিশ্চিত ভাবে বাড়িয়ে দেবে।

কিছু দিনের মধ্যে তার সুপারিশ প্রকাশিত হল। তখন আমি কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মী। যদিও এই সুপারিশে, অবসরের বয়স বৃদ্ধির ব্যাপারে তেমন কোনও আশার আলো ছিল না; তবুও, রোজই ভাবি আজই হয়তো ঘোষণা হবে। চারি দিকে নানা গুঞ্জন। আমার সহকর্মী যাঁরা প্রায় একই সময়ে আমার সঙ্গে অবসর নেবেন, তাঁরা কেউ কেউ প্রায় নিশ্চিত হয়ে বলছেন যে এ বার ৬২ হচ্ছেই। রোজই যেমন একটু একটু করে প্রত্যাশা বাড়ে, তেমনই অবসরের দিনও কাছে এগিয়ে আসে। এক দিন সত্যি সত্যিই ৬০ বছরেই চাকরি থেকে অবসর নিলাম। মনের গভীরে কোথায় যেন একটা আফশোস রয়ে গেল। আর একটা কথা ভাবলেই বুকের ভেতরটা কেমন যেন ফাঁকা হয়ে যেত, যদি হঠাৎ খবর পাই যে সরকার অবসরের সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়েছে! আমার ন্যায্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চনার এই আফশোস আমৃত্যু সঙ্গী হয়ে থাকত, যদি না আমি ভিক্টর ফুচের ‘হু শ্যাল লিভ’ বইটি পড়তাম। ভিক্টর ফুচ আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির এমেরিটাস অধ্যাপক। অধ্যাপক ফুচ লিখছেন যে আমাদের গড় পরমায়ু বা বেঁচে থাকার সম্ভাবনা গত দু’শো বছরে যে এতটা বেড়েছে, তা মূলত শিশুমৃত্যু হার কমার জন্য।

৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সি মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনার ক্ষেত্রে তুলনামূলক ভাবে তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। লেখাটি পড়তে পড়তেই মনের কোণের সুপ্ত ব্যথাটি আবার জেগে উঠল। ভাবলাম, দেখি তো ভারতবর্ষের অবস্থাটা। বসে পড়লাম ১৯৯৫-৯৯ (মধ্যবর্ষ ১৯৯৭) এবং ২০১২-১৬ (মধ্যবর্ষ ২০১৪) এই দুই পর্বের আব্রিজড লাইফ টেবল নিয়ে। অবাক হয়ে দেখলাম, মধ্যবর্ষ ১৯৯৭ থেকে মধ্যবর্ষ ২০১৪ এই ১৭ বছরে আমাদের দেশে জন্মের পর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৬১.৫ বছর থেকে বেড়ে হয়েছে ৬৮.৭ বছর। আমাদের রাজ্যে যা ৬৩.৭ বছর থেকে বেড়ে হয়েছে ৭০.৮ বছর। তবে তা মূলত শিশুমৃত্যুর হার উল্লেখযোগ্য হারে কমার জন্য।

এই একই সময়ে ৫৫ থেকে ৬০ বছর বয়সি অর্থাৎ যাঁরা আমার মতোই অত্যন্ত আশাবাদী হয়ে দিন গুনছিলেন যে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার বয়স অবশ্যই ৬২ বছর হবে, তাঁদের ক্ষেত্রে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে মাত্র ১.৭ বছর। কিছু রাজ্যের তো এই বৃদ্ধির হার খুবই করুণ। উত্তরপ্রদেশে কোনও বৃদ্ধিই ঘটেনি, হরিয়ানায় ০.৪, কর্নাটকে ০.৫, বিহার ও রাজস্থানে ১.৪ বছর। বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি তামিলনাড়ুতে— ৩.০। আমাদের রাজ্যের ক্ষেত্রে অবশ্য ২.৪ বছর। সংবিৎ ফিরল ওই পরিসংখ্যান দেখে। অসম্পূর্ণ তথ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে তোলা নিজের প্রাপ্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার যন্ত্রণায় মনটা এত দিন মাঝে মাঝেই বিষণ্ণ হয়ে যেত। কিন্তু আজ আর কোনও অনুতাপ নেই, কারণ পরমায়ু বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে মনে মনে যে প্রাপ্তির প্রত্যাশা জন্মেছিল, বুঝলাম তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।

Health Life Expectancy Retirement Age

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।