Advertisement
E-Paper

মর্জিনার বুদ্ধি

ঝকমারির একাংশ পরিচিত, গতানুগতিক। দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন ভয়ানক বিদ্বেষবিষজর্জর উক্তি কোনও ভাবেই মানিয়া লওয়া যায় না— এই সমালোচনা নানা মহল হইতেই ক্রমাগত ধ্বনিত হইয়া চলিয়াছে।

শেষ আপডেট: ২৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০০:০০
Share
Save

আলিবাবা ও চল্লিশ চোরের কাহিনিতে দস্যুরা আক্রমণের নিশানা চিহ্নিত করিতে নির্দিষ্ট বাড়ির গায়ে মার্কা দিয়া গিয়াছিল। বুদ্ধিমতী মর্জিনা পল্লির তাবৎ বাড়ির গায়ে একই চিহ্ন দাগিয়া দেন। অতঃপর— বুঝ চোর, যে জানো সন্ধান। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিপরিচয় যাহাই হউক, তাঁহার পদাধিকার বিপুল, আরব্য রজনীর দুর্বৃত্তের সহিত তাঁহার তুলনা করিবার কথা স্বপ্নেও ভাবা চলে না। কিন্তু মার্কা দিতে গিয়া তিনিও যে ফাঁসিয়া গিয়াছেন, সেই কথাটি বোধ করি তিনি নিজেও পরে হাড়ে হাড়ে টের পাইয়াছেন। তাঁহার ‘পোশাক দেখিয়াই চিনিয়া লওয়া যায়’ সূত্রটি প্রায় দুই দশক পূর্বের সেই ‘নিউটনের তৃতীয় সূত্র’-এর মতোই লোকমুখে ফিরিতেছে, এবং কেবলই তাঁহার দিকে ফিরিয়া আসিতেছে। আকথা ছুড়িলে কুকথা খাইতে হয়, পোশাকি তত্ত্ব বিতরণের মুহূর্তে বোধ করি তাহা তিনি ভাবিয়া দেখেন নাই। ভোটে হারিবার চিন্তা মাথায় ঘুরিলে সব কথা ভাবিয়া দেখিবার অবকাশ থাকে না। সমস্যা হইল, নিক্ষিপ্ত তিরের মতোই উচ্চারিত বাক্যও প্রত্যাহার করা যায় না। অতএব, ঝকমারি।

ঝকমারির একাংশ পরিচিত, গতানুগতিক। দেশের প্রধানমন্ত্রীর মুখে এমন ভয়ানক বিদ্বেষবিষজর্জর উক্তি কোনও ভাবেই মানিয়া লওয়া যায় না— এই সমালোচনা নানা মহল হইতেই ক্রমাগত ধ্বনিত হইয়া চলিয়াছে। কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী সহসা পুনরাবির্ভূত হইয়া বাক্যবাণ নিক্ষেপ করিয়াছেন: ‘দুই কোটি টাকার স্বনামধন্য পোশাক দেখিয়া প্রধানমন্ত্রীকে সত্যই চিনিয়া লওয়া যায়!’ উক্তিটি দ্রুত লোকপ্রিয় হইয়াছে। কিন্তু এই সকল নিন্দাবাক্যে দোর্দণ্ডপ্রতাপ নরেন্দ্র মোদীর ইতরবিশেষ আছে বলিয়া মনে হয় না, এমন তিনি বিস্তর শুনিয়াছেন। কিন্তু অন্য এক ধরনের প্রতিক্রিয়াও এই উপলক্ষে দেখা যাইতেছে, যাহা কেবল অপ্রত্যাশিত নহে, অভিনবও বটে। মর্জিনার অসামান্য তরিকাটির মতোই অভিনব বুুদ্ধিদীপ্ত। প্রধানমন্ত্রীর পোশাক-দর্শনের পরেই ফেজ টুপি এবং হিজাবের মতো ‘মুসলমানি’ পোশাকের বাজারে চাহিদা বাড়িয়াছে। স্বাভাবিক বৃদ্ধি নহে, অ-স্বাভাবিক বৃদ্ধি, কারণ এমন অনেক মানুষ এই পোশাক কিনিতে আসিতেছেন যাঁহারা ধর্মে মুসলমান নহেন। তাঁহারা এই পোশাক কিনিয়া এবং পরিধান করিয়া প্রধানমন্ত্রীর কথার প্রতিবাদ করিতে চাহেন। এই ‘অন্য’ ক্রেতাদের আগ্রহ দেখিয়া বিক্রেতারা কেবল খুশি নহেন, চমৎকৃত। ভক্তবৃন্দ হয়তো বলিবেন, ইহাও তাঁহাদের আরাধ্য পুরুষের এক লীলা— এই ভাবেই তিনি মন্দার বাজারে জোয়ার আনিতেছেন, এই বার মন্দা কাটিবে, অচ্ছে দিন আসিবে। ফেজ টুপির কাটতি বাড়াইয়া চাহিদায় জোয়ার আনিলে আয়বৃদ্ধির যবন-দোষ ঘটিবে কি না, অর্থমন্ত্রী তাহা লইয়া ভাবিতে পারেন।

প্রকৃত চিন্তা অন্য। আলটপকা পোশাক দেখিয়া ধর্ম চিনিবার পথ বাতলাইতে গিয়া প্রধানমন্ত্রী বোধ করি নিজের এবং সতীর্থদের বড় সমস্যা ডাকিয়া আনিলেন। বিশেষ ধর্মের পরিচয়ে পরিচিত পোশাককে যদি এ বার অন্য ধর্মের অনুসারীরা, ধর্মে অবিশ্বাসী নাস্তিকেরা, এমনকি ‘আরবান নকশাল’রাও আপন পরিচয় করিয়া তোলে এবং সেই পোশাক পরিয়া প্রধানমন্ত্রীর অনুগতবৃন্দের সম্মুখে দাঁড়াইয়া ‘দেখো তো চিনিতে পারো কি না’ বলিয়া চ্যালেঞ্জ ছোড়ে, তবে তো সাজানো বাগানের বিষবৃক্ষেরা শুকাইয়া যাইবে! সত্যই তো, পোশাক বা অঙ্গসজ্জা যুগে যুগে দেশে দেশে কত ভাবেই না পরিচয়ের প্রতীক হইয়া উঠিয়াছে। এক দিকে পোশাক বরাবর বহু দেশ, বহু জাতির আদানপ্রদানের প্রকরণ ও প্রতীক। আত্মীকরণেরও। ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত স্বাভিমানী বাঙালি হয়তো ভাবেনও না যে, তাঁহার পোশাকটি কোনও জাতিসত্তার আদিরূপ নহে, ‘অপর’-এর সহিত সংযোগের সুফল। আবার, দৃষ্টি যাঁহাদের সঙ্কীর্ণ, হৃদয় যাঁহাদের ক্ষুদ্র, তাঁহারা পোশাকের পরিসরেও ক্ষুদ্রতার বন্দনা গাহিয়াছেন। তাঁহাদের ক্ষুদ্র ও সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিতে পোশাক দেখিলেই পরিচয় চিনিয়া লওয়া যায়। ক্ষুদ্র পরিচয়, নির্দিষ্ট সীমায় সীমিত পরিচয়। সেই ক্ষুদ্র পরিচয় কত হিংস্র হইতে পারে, দেশে দেশে কালে কালে মানুষ তাহাও দেখিয়াছে। দুনিয়া জুড়িয়া এখন সঙ্কীর্ণ ক্ষুদ্রতার অভিযান। সেই অভিযানের নায়কনায়িকারা ক্ষুদ্র পরিচিতিকেই সত্য পরিচয় বলিয়া প্রতিষ্ঠা করিতে তৎপর। এই বাজারে প্রধানমন্ত্রীর পোশাক-দর্শনের প্রেরণায় সকলেই যদি এখন সব পোশাক পরিতে মাতিয়া উঠে, তবে তাহা ক্ষুদ্রতাবাদীদের পক্ষে উদ্বেগের কারণ বইকি! সব দরজায় একই চিহ্ন থাকিলে দস্যুরা কী করে?

যৎকিঞ্চিত

সূর্যগ্রহণ সোজা ব্যাপার নয়, কর্নাটকে কয়েক জন প্রতিবন্ধী শিশুকে জৈব সারের ঢিপিতে গলা অবধি ডুবিয়ে রাখা হল পুরো সময়টা, তাতে নাকি তারা সুস্থ হয়ে যাবে। মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায়, গুচ্ছ লোক পরখ করতে লাগলেন, এই সময় ডিম দাঁড় করিয়ে দিলে তা সোজা দাঁড়িয়ে থাকবে কি না। আবার কোনও ভালমানুষ বিশেষ চশমা পরে গ্রহণ দেখতেই, জনতা রইরই করে চশমার দাম আন্দাজে ব্যস্ত। আরে বাবা, দামি চশমা না কিনলে, লাখখানেক ‘মিম’ কি ফ্রি পাওয়া যায়?

Narendra Modi Religious Discrimination

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।