Advertisement
E-Paper

আদালতের মান

আইনি তথা সাংবিধানিক বিচারের নিজস্ব পরিসরে সুপ্রিম কোর্টের রায় অবশ্যই শেষ কথা।

প্রশান্ত ভূষণ। ফাইল চিত্র।

প্রশান্ত ভূষণ। ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২০ ০০:০১
Share
Save

কখন কী উপলক্ষে কোন ব্যক্তি ইতিহাসের অনুঘটক হইয়া উঠিবেন, বলা কঠিন। আদালত অবমাননার অভিযোগ এবং তাহা লইয়া টানাপড়েন স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে অপরিচিত নহে। কিন্তু আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণের কাহিনি ইতিমধ্যেই একটি ভিন্ন মাত্রা অর্জন করিয়াছে, মনে করিবার কারণ আছে যে, নটে গাছটি এখনও বাড়িবে। আদালত অবমাননার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করিবার পরেও সুপ্রিম কোর্ট প্রশান্ত ভূষণকে ক্ষমা চাহিবার সুযোগ দিয়াছিল। কিন্তু তিনি সেই সুযোগ ফিরাইয়া দিয়াছেন। তাঁহার বক্তব্য: যে মন্তব্যের জন্য আদালত তাঁহাকে অপরাধী বলিয়া রায় দিয়াছে, তিনি তাহাই বিশ্বাস করেন, সুতরাং মার্জনা ভিক্ষা করিলে তাহা আন্তরিক হইবে না, বিধেয়ও হইবে না। স্পষ্টতই, এই যুক্তি উড়াইয়া দেওয়া কঠিন। মহামান্য বিচারপতিরা এই প্রতিক্রিয়ায় ব্যথিত হইয়াও শাস্তি ‘সংরক্ষিত’ রাখিয়াছেন। অপরাধী সাব্যস্ত করিবার পরেও বলিয়াছেন, কাহাকেও আঘাত দিয়া থাকিলে ক্ষমা চাহিয়া লইতে অসুবিধা কোথায়? ঐতিহাসিক বইকি।

আইনি তথা সাংবিধানিক বিচারের নিজস্ব পরিসরে সুপ্রিম কোর্টের রায় অবশ্যই শেষ কথা। কিন্তু একটি উদার গণতান্ত্রিক সমাজে তাহার পরেও আলোচনা এবং বিতর্কের যথেষ্ট অবকাশ থাকে। আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা রাখিয়া এবং অবমাননার তিলমাত্র অভিসন্ধি পোষণ না করিয়াও কেহ নীতিগত ভাবে তাহার রায়ের বিরোধী মত জানাইতে পারেন। এই মামলাটিতে তাহার কিছু তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টান্ত দেখা গিয়াছে। সমাজের বিভিন্ন স্তর হইতে আদালতের যুক্তি এবং বিচারের যৌক্তিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠিয়াছে। প্রবীণ এবং সম্মানিত আইনজীবীরা অনেকেই বাক্‌স্বাধীনতার সপক্ষে সওয়াল করিয়া আদালতকে সমালোচনার প্রতি সহিষ্ণু হইবার অনুরোধ জানাইয়াছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের অ্যাটর্নি জেনারেলের কণ্ঠেও শোনা গিয়াছে একই গোত্রের অভিমত। তাহা ‘সরকারের মত’ না হইলেও তাঁহার পদমর্যাদার কারণে এই অবস্থানটি তাৎপর্যপূর্ণ। এবং, প্রশান্ত ভূষণের বিরুদ্ধে অন্য একটি মামলার সূত্রে আদালত অবমাননা ও বাক্‌স্বাধীনতার সম্ভাব্য দ্বন্দ্ব পর্যালোচনার ভার একটি উপযুক্ত বিচারকমণ্ডলীর হাতে তুলিয়া দিবার সিদ্ধান্ত লইয়াছে সুপ্রিম কোর্ট। একটি বিশেষ অভিযোগের সূত্রে বৃহত্তর এবং সামগ্রিক এমন কিছু প্রশ্ন উঠিয়া আসিয়াছে, যাহা প্রকৃত গণতন্ত্রের মূল ধর্মের সহিত সম্পৃক্ত।

বিরূপ সমালোচনার প্রতি সহিষ্ণুতা সেই ধর্মের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সমকালীন ভারতে সেই অঙ্গটি বিপন্ন। গত কয়েক বছরে এই দেশে সরকার তথা শাসক গোষ্ঠীর অসহিষ্ণুতার দাপট অতিমাত্রায় প্রকট। এই পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নজরদারি এবং তিরস্কারই কিছু কিছু ক্ষেত্রে দুঃশাসনকে নিরস্ত বা প্রতিহত করিয়াছে। গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তা হিসাবে বিচারবিভাগের এই সদর্থক ভূমিকাতেই তাহার প্রকৃত সম্মান। কিন্তু সেই ভূমিকার দাবি সব ক্ষেত্রে পূর্ণ হইয়াছে কি? বিচারবিভাগের অনেক সিদ্ধান্ত বা সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিলম্বিত লয় এমন প্রশ্ন তুলিয়াছে এবং সংশয় সৃষ্টি করিয়াছে, যাহা গণতন্ত্রের পক্ষে স্বস্তিকর নহে। ভুলিলে চলিবে না, সুপ্রিম কোর্টের চার জন বিচারপতি সাংবাদিক সম্মেলন ডাকিয়া প্রধান বিচারপতি সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করিতেছেন— এমন অভাবনীয় দৃশ্যেরও জন্ম হইয়াছে। এই প্রেক্ষাপটেই প্রশ্ন এবং সমালোচনার প্রতি সর্বোচ্চ আদালতের সহিষ্ণুতার বিশেষ প্রয়োজন। বস্তুত, আদালত অবমাননার ধারণাটি লইয়াই প্রশ্ন আছে। এই বিষয়ে আইনের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, তাহাও তর্কাতীত নহে। কিন্তু আইন থাকিলেও, একান্ত প্রয়োজন ব্যতিরেকে তাহার প্রয়োগ না করাই বিধেয়। নতুবা শাস্তির ভয়ে নাগরিকরা আদালত সম্পর্কে মনের ক্ষোভ মনেই পুষিয়া রাখিলে, গণতন্ত্র লাঞ্ছিত হইবে। তাহাতেই আদালতের সর্বাধিক অপমান।

Supreme Court of India CJI SS Bobde Prashant Bhushan

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।