বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের উদ্দেশে জাতপাত তুলে কটাক্ষের অভিযোগ। —ফাইল চিত্র।
কলঙ্কের এক নতুন অধ্যায়। লজ্জায় মাথা মাটিতে মিশে যেতে চাইছে যেন। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে সঙ্কট উপস্থিত হয়েছে, এবং সে সঙ্কটের নেপথ্যে যে কারণের কথা শোনা যাচ্ছে, তা শুনতে আমরা অভ্যস্ত নই। আর কত অধোগতির সাক্ষী হতে হবে আমাদের সমাজকে, আমরা কেউই বোধহয় নিশ্চিত ভাবে জানি না তা আজ। এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতি আর কী-ই বা হতে পারে!
অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ উঠেছে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। এক শিক্ষিকাকে জাত তুলে গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদে একের পর অধ্যাপক তথা বিভাগীয় প্রধান ইস্তফা দিতে শুরু করেন। তাতেই খুলে যায় প্যান্ডোরার বাক্স। জানা যায়, শুধু ওই শিক্ষিকা নন, এর আগেও একাধিক শিক্ষক এ ধরনের বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন, গায়ের রঙ নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করা হয়েছে। জাতিবিদ্বেষমূলক, বর্ণবিদ্বেষমূলক এই সব মন্তব্য কারা করেছেন? শিক্ষার্থীরা। কাদের উদ্দেশে করেছেন? শিক্ষকদের উদ্দেশে। এর চেয়ে জঘন্য ঘটনার কথা আমরা আর কটা শুনেছি!
যে শিক্ষার্থীরা এই সব ঘটনা দিনের পর দিন ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ, তাঁরা কোন ছাত্র সংগঠন বা কোন রাজনীতির সঙ্গে জড়িত, তা বড় প্রশ্ন নয়। শাসক দলের ছাত্র সংগঠন হোক বা বিরোধী দলের, অপরাধের মাত্রায় তারতম্য ধটে না। অভিযুক্ত পড়ুয়ারা কোনও রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কি না, তাতেও কিছু যায় আসে না। একবিংশ শতাব্দীর ভারতে কলকাতার মতো শহরের বুকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা শিক্ষকদের অপমান করছেন জাতিবিদ্বেষী এবং বর্ণবিদ্বেষী মন্তব্য করে— বিষ্ময়ে, অপমানে, লজ্জায়, কলঙ্কে স্তম্ভিত হয়ে যাওয়ার জন্য এইটুকু অভিযোগই যথেষ্ট। কিন্তু রাজ্যের শাসক দলের ছাত্র সংগঠন এই ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে যদি অভিযোগ ওঠে, তাহলে অভিযোগ অন্য মাত্রা পায় তো বটেই!
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
আবার বলছি, এ ধরনের অভিযোগের মুখোমুখি হতে আমরা অভ্যস্ত নই। নবজাগরণের বাংলা, ভারতের সেরা চিন্তাবিদদের বাংলা, সমগ্র জাতিকে এক সময়ে পথ দেখিয়ে আসা বাংলা। সেই মাটিতে অলক্ষ্যেই অঙ্কুরিত হয়ে গিয়েছে এমন মারাত্মক বিষবৃক্ষের বীজ, দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারি না আমরা। কঠোরতম ভঙ্গিতে এ বিষের মোকাবিলা করা জরুরি। বিভাগীয় প্রধানদের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের পদস্থ কর্তাদের ইস্তফার খবর পেয়ে শিক্ষামন্ত্রী গিয়েছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বৈঠক করেছেন তিনি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছেন। এই আশ্বাসে আশ্বস্ত হতে পারছি না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য বা ক্ষোভের আগুন প্রশমিত করার জন্য রাজনীতিকরা এ ধরনের আশ্বাস অহরহ দিয়ে থাকেন। আঁচ ঝিমিয়ে গেলেই সব কিছু ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়ে যায় তলায় তলায়। এ ক্ষেত্রেও তেমন কিছু ঘটানোর পরিকল্পনা যদি নেওয়া হয়ে থাকে, তা হলে কোনও নিন্দাই যথেষ্ট হবে না। সরকার তথা প্রশাসন কোন পথ নেবে, সেটা সরকারের কর্তারাই স্থির করুন।
আরও পড়ুন: জাত তুলে কটাক্ষ! রবীন্দ্রভারতীতে পর পর ইস্তফা অধ্যাপকদের, সঙ্কট সামলাতে আসরে পার্থ
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy