Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Editorial News

সমাজ না পারলে প্রশাসনকে পারতে হবে

রাস্তায় বসে হনুমান চালিসা পাঠ করার কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। তিন তালাক বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ইশরত জাহান সেই কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং হনুমান চালিসা পাঠ করেন।

মঙ্গলবার ডবসন রোডে হনুমান চালিসা পাঠের আসরে ইসরত জহান। ছবি: সংগৃহীত।

মঙ্গলবার ডবসন রোডে হনুমান চালিসা পাঠের আসরে ইসরত জহান। ছবি: সংগৃহীত।

অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ১৯ জুলাই ২০১৯ ০০:২০
Share: Save:

স্বাধীন ধর্মাচরণ বা স্বাধীনভাবে ভাব প্রকাশের অধিকার কি সব দিক থেকেই আক্রান্ত হবে এ দেশে? এই স্বাধীনতাগুলো কি বিদায় নিয়ে নেবে ক্রমশ? সব তরফেই কট্টরবাদী বা মৌলবাদীদের দাপাদাপি যে ভাবে বাড়ছে, সে দাপাদাপিতে সমাজের বড় অংশ যে ভাবে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাতে স্বাধীনতাগুলোর পরিসর সঙ্কুচিত হয়ে আসার আশঙ্কা সাংঘাতিক ভাবে তৈরি হচ্ছে। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে প্রশাসনও প্রায় নির্বিকার অথবা ব্যর্থ।

রাস্তায় বসে হনুমান চালিসা পাঠ করার কর্মসূচি নিয়েছিল বিজেপি। তিন তালাক বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ইশরত জাহান সেই কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং হনুমান চালিসা পাঠ করেন। তার জেরেই আক্রান্ত হয়েছে ইশরতের বাড়ি। ইশরতের এক আত্মীয় এবং ইশরতের বাড়িওয়ালার নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ। সন্তানদের নিয়ে ইশরত জাহান বাড়ি ছাড়া।

বিজেপি যে কর্মসূচি নিয়েছিল, তা ঠিক না ভুল, সে বিতর্ক আলাদা। রাস্তায় বসে হনুমান চালিসা পাঠ করা আদৌ কোনও রাজনৈতিক কর্মসূচি কি না তা নিয়েও তর্ক চলতে পারে। কিন্তু মোটের উপর শান্তিপূর্ণ কোনও কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য একজন নাগরিককে এ ভাবে আক্রান্ত হতে হবে কেন? কেন বাড়ি ছাড়া হয়ে আত্মগোপন করে থাকতে হবে? ভারত যে স্বাধীন, গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, সেই কথাটা কি মনে থাকছে না অনেকের! নাকি ‘স্বাধীনতা’, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ অথবা ‘গণতন্ত্র’ শব্দগুলোকে নেহাত কথার কথা ধরে নেওয়ার দুঃসাহস পেয়ে গিয়েছেন কেউ কেউ! কে কোন মতে বিশ্বাস করবেন, কে কোন ধরণের ধর্মাচরণ করবেন, কে নিজের নাম সংস্কৃত শব্দে রাখবেন আর কে নিজের নামে আরবি শব্দ ব্যবহার করবেন, কে শাড়ি পরবেন, কে ধুতি, কে জামা পরবেন, কে হিজাব— সে সব বিষয়ে বাধ্যবাধকতা আরোপ করার অধিকার সমাজকে কেউ দেয়নি। যে কোনও প্রাপ্ত বয়স্ক নাগরিক এ সব বিষয়ে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই গ্রহণ করার অধিকার রাখেন। অতএব ইশরত জাহান হিজাব পরে হনুমান চালিসা পাঠ করলে তাঁকে বাড়ি ছাড়া করে দেওয়ার অধিকার কারও নেই।

ম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন

আরও পড়ুন: হিজাব পরে হনুমান চালিসা পাঠ! প্রাণনাশের হুমকিতে বাড়িছাড়া হাওড়ার ইসরত জহান

ইশরতের সম্প্রদায় ইশরতকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। অন্য কোনও সম্প্রদায় আবার দেশের অন্য কোনও প্রান্তে খাদ্যাভাসের কারণে অন্য কাউকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করছে। শুধু চিহ্নিত করেই এই সব স্বঘোষিত সমাজরক্ষকরা থামছেন না, শাস্তির ভারটাও নিজেদের হাতেই তুলে নিচ্ছেন। যাঁদেরকে অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, অপরাধী কিন্তু তাঁরা নন। যাঁরা চিহ্নিত করছেন, অপরাধী তাঁরাই। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, সমাজ লড়তে পারছে না এই অসামাজিকতার বিরুদ্ধে। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, সমাজের একটা বড় অংশ গা ভাসাচ্ছে এই অসামাজিকতার প্রবাহে। এই পরিস্থিতি আমাদের অচেনা নয়। রামমোহন এবং বিদ্যাসাগরের আমলেও সমাজ বা সমাজের প্রভাবশালী অংশ কুকর্মের পক্ষে ছিল। তাই কঠোর এবং নির্মোহ হতে হয়েছিল প্রশাসনকে। এখনও প্রশাসনকে সেই ভূমিকাই নিতে হবে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে খুব কড়া মূল্য চোকাতে হবে আমাদের প্রত্যেককে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy