ধোঁয়াশা : কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাইয়ে ঢাকা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক। —নিজস্ব চিত্র।
তিন কোটির নতুন লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। নতুন বছর পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই সংস্থা পাঁচ বছরের এই লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে। কী সেই লক্ষ্যমাত্রা? আরও এক কোটি মানুষকে সর্বজনীন স্বাস্থ্য পরিষেবার আওতায় আনা। দ্বিতীয় লক্ষ্য, আরও এক কোটি মানুষকে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আপৎকালীন অবস্থায় সুরক্ষিত করা। তৃতীয় লক্ষ্য, এক কোটি মানুষকে উন্নততর স্বাস্থ্য এবং ভাল ভাবে বেঁচে থাকার ব্যবস্থা করা।
কেন এই লক্ষ্যমাত্রা? তার কারণ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) মনে করছে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ১০টি বিষয় বিশ্ব জুড়ে সমস্যা তৈরি করবে। তার জন্য বিশ্ব জুড়েই সচেতনতা প্রয়োজন। কোন ১০টি সমস্যাকে গুরুত্ব দিচ্ছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?
বায়ু দূষণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন
২০১৯ সালের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যাগুলোর তালিকায় প্রথমে রাখা হয়েছে বায়ু দূষণকে। ‘হু’এর রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতিদিন বিশ্ববাসীর প্রতি ১০ জনের মধ্যে ন’জন দূষিত বায়ু শ্বাসের সঙ্গে গ্রহণ করছে। বায়ু দূষণই স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় পরিবেশগত ঝুঁকি। বাতাসের আণুবীক্ষণিক দূষিত কণা শ্বাসযন্ত্র এবং সংবহন তন্ত্রের ক্ষতি করে। ক্ষতি হয় ফুসফুস, হৃদযন্ত্র এবং মস্তিষ্কের। বিশ্বে প্রতি বছর ৭০ লক্ষ মানুষ মারা যান ক্যানসার, স্ট্রোক, হৃদযন্ত্র এবং ফুসফুসের রোগে। মৃতদের ৯০ শতাংশ নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত আয়ের দেশগুলোর বাসিন্দা। শিল্প, পরিবহণ এবং কৃষি ক্ষেত্রে দূষণ এই রোগ সৃষ্টির কারণ। আবার গৃহস্থালীর নোংরা রান্নার স্টোভ এবং জ্বালানিও বহু রোগ সৃষ্টির কারণ।
বায়ু দূষণের প্রাথমিক কারণগুলোই আবার জলবায়ু পরিবর্তনের পথ পরিষ্কার করে। এই পরিবর্তনও বিভিন্ন ভাবে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলে। ২০৩০-৫০ সালের মধ্যে প্রতি বছর অতিরিক্ত ২৫ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যার কারণে। মৃত্যুর কারণ হবে অপুষ্টি, ম্যালেরিয়া, ডায়রিয়া এবং তাপমাত্রাজনিত সমস্যার কারণে। পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া, কোলাঘাট, পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগরপুর এবং ঝাড়গ্রামের জিতুশোল বিভিন্ন রকম দূষণে আক্রান্ত।
ক্রনিক কিছু রোগ
ডায়াবেটিস, ক্যানসার, হদরোগের মতো কিছু রোগে প্রতি বছর বহু রোগী মারা যান। হু-র হিসেব বলছে, বিশ্বে যত জন রোগে ভুগে মারা যান তাঁদের মধ্যে ৭০ শতাংশের বেশি মৃত্যু হয় এই রোগগুলোর কারণে। পরিসংখ্যান বলছে, বিশ্বে চার কোটি ১০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় এইসব রোগে। এঁদের মধ্যে এক কোটি ৫০ লক্ষ রোগীর মৃত্যু হয় ৩০-৬৯ বছর বয়সে। অপরিণত বয়সে মৃতদের ৮৫ শতাংশ নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত আয়ের বাসিন্দা।
কেন এই ধরনের রোগ এবং মৃত্যু? তামাকজাতীয় দ্রব্য খাওয়া, শারীরিক ভাবে সক্রিয়তা না থাকা, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং দূষণ এর কারণ। অর্ধেক মানসিক রোগের জন্ম হয় ১৪ বছরের মধ্যে। কিন্তু বেশির ভাগই বোঝা যায় না এবং চিকিৎসাও করানো হয় না। ১৫-১৯ বছর বয়সিদের মৃত্যুর ক্ষেত্রে আত্মহত্যা দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ।
ইনফ্লুয়েঞ্জা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইনফ্লুয়েঞ্জা নিয়ে বেশ সতর্ক। কারণ কখন এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে এবং তা কতটা মারাত্মক হবে তা বোঝা যায় না। রোগ ঠেকানোর একমাত্র উপায়, আপৎকালীন অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার পরিষেবা। বিশ্বের ১১৪টি দেশের ১৫৩টি সংস্থা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশে রোগ নির্ণয়, প্রতিষেধক এবং অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা বাড়ানো হচ্ছে।
বাসস্থানের সমস্যা
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ খরা, দুর্ভিক্ষ, জনসংখ্যায় ভারাক্রান্ত এবং সংঘর্ষপ্রবণ এলাকায় বসবাস করে। এই সব এলাকায় স্বাস্থ্য পরিষেবা স্বাভাবিক ভাবেই ভাল হয় না। প্রাথমিক পরিষেবাটুকুও মেলে না। ফলে নানা সমস্যা হয়। বাড়ে রোগভোগ। কিছুদিন আগেই সিরিয়ায় অপুষ্টিতে ভোগা এক শিশুর ছবি ভাইরাল হয়েছিল।
প্রতিরোধী ভাইরাস
রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে বেশ কিছু উন্নত ওষুধ আবিষ্কার হয়েছে। অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিম্যালেরিয়া এখন খুবই কার্যকর। কিন্তু রোগজীবাণুও পাল্টা শক্তি সঞ্চয় করছে। ব্যাকটেরিয়া, পরজীবী, ভাইরাস এবং ছত্রাকও ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তুলছে। ফলে এই ওষুধগুলো কাজে লাগে না তখন। শক্তিশালী এই জীবাণুগুলো একটা আশঙ্কা তৈরি করেছে। একসময় নিউমোনিয়া, যক্ষ্মা, গনোরিয়ার মতো রোগের চিকিৎসা সম্ভব হত না। রোগ প্রতিরোধী জীবাণু সেই যুগে ফিরিয়ে দিতে পারে।
অনুন্নত প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা
বিশ্বের বহু দেশের মানবসম্পদ নষ্ট হয় প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা ঠিক ভাবে না পাওয়ার জন্য। প্রতিটি দেশের উচিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার ব্যবস্থা করা।
প্রতিষেধক নেওয়ায় অনীহা
প্রতিষেধক নিতে না চাওয়া ভারতীয় উপমহাদেশের একটা বড় সমস্যা। সচেতনতার অভাবই এর বড় কারণ। অথচ প্রতিষেধক রোগ প্রতিরোধের সবথেকে কার্যকরী উপায়। প্রতিষেধক ২০-৩০ লক্ষ মৃত্যু ঠেকায় প্রতি বছর। তবুও প্রতিষেধকে অনীহা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উদাহরণ দিয়ে হামের টিকার। হু-র রিপোর্ট অনুযায়ী, লাগাতার প্রচারে প্রতিষেধক নেওয়ার প্রবণতা ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
ডেঙ্গি
কয়েক দশকের সমস্যা ডেঙ্গি। উপসর্গ ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। কিন্তু বেশ প্রাণঘাতী মশাবাহিত এই রোগ। বর্ষাকালেই রোগের প্রকোপ বাড়ে। বিশেষ করে ভারত এবং বাংলাদেশে। বিশ্বের ৪০ শতাংশ মানুষের ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার খড়্গপুরে প্রতি বছরই ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাব ঘটে।
এইচআইভি
ভাইরাস ঘটিত রোগটি এখন মহামারী। বিশ্বের সাত কোটি মানুষ এখনও পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত। তিন কোটি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যৌনকর্মী, জেলবন্দি, পুরুষ সঙ্গী রয়েছে এমন ব্যক্তি এবং রূপান্তরকামীদের এইচআইভি আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অনেক সময়েই দেখা যায়, এই গোষ্ঠীভুক্ত মানুষেরা চিকিৎসা পরিষেবার বাইরে থেকে যান। হু এবং আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন এ বিষয়ে যৌথ ভাবে কাজ করে চলেছে।
ইবোলা
ভারতে এই রোগে আক্রান্তের সন্ধান মেলেনি। বিদেশ থেকে আসা ভারতীয় নাগরিকের দেহে জীবাণুর সন্ধান মিলেছে। তবে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এই রোগের প্রাদুর্ভাব চিন্তায় ফেলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy