পরিবর্তনের পরে। অধ্যক্ষ ঘেরাও। কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ, ২০১১
সম্প্রতি রাজ্যে দুটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্বোধন হল। না, বিএড বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা বলছি না। সেটার একটা বিশেষ যৌক্তিকতা থাকতে পারে। বলছি দুটি ‘সাধারণ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা। একটির কথা অনেক দিন শুনেছি, ডায়মন্ড হারবারের মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়। অন্যটি বাঁকুড়ায়, তালিকায় নবতম সংযোজন।
হিসাব গুলিয়ে যায়, কিন্তু বর্তমান সরকার ইতিপূর্বে অন্তত দুটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, কোচবিহার ও আসানসোলে। বামফ্রন্ট সরকার অন্তিমকালে করেছিলেন তিনটি: মালদহ, বারাসত ও পুরুলিয়ায়। (প্রেসিডেন্সিকে এই হিসাবে ধরছি না।) সে তিনটির এত দিনে কিছু ভবন নির্মাণ হয়েছে; নতুনগুলি গৃহহীন, স্থানীয় কলেজের ঘর ধার করে চলছে। (কোচবিহারে প্রাণিবিদ্যার ক্লাস হয় স্থানীয় কলেজে।) স্থায়ী শিক্ষকসংখ্যা এখনও শূন্য, গ্রন্থাগার প্রভৃতি কার্যত অনুপস্থিত। গবেষণাগারের প্রশ্নই নেই, অতএব বিজ্ঞানশিক্ষা দূর অস্ত্। সাড়ে ছ’আনায় মানবিক বিদ্যা পড়ানোয় আমরা অভ্যস্ত, তাই বিজ্ঞানপাঠের সামাজিক প্রয়োজন ও ব্যক্তিগত চাহিদা জলাঞ্জলি দিয়ে ভাষা-ইতিহাসের একচেটিয়া প্রাধান্য। সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলি গড়ে তোলার পর্যাপ্ত অর্থ সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা।
এখানে একটা বিধিনিয়ম বুঝতে হবে। কোনও নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইউজিসি আইনের দুটি ধারায় অনুমোদন নিতে হয়। ২(এফ) ধারায় হয় প্রাথমিক স্বীকৃতি। কিন্তু কেবল ইউজিসি নয়, যে কোনও কেন্দ্রীয় সূত্র থেকে অর্থসাহায্য পেতে লাগে ১২বি ধারায় অনুমোদন। তার কিছু শর্ত আছে: এতগুলি বিভাগে এতগুলি শিক্ষক, অমুক-অমুক পরিকাঠামো ইত্যাদি। অর্থাৎ মঞ্জুরি কমিশন নিশ্চিত হতে চান, প্রতিষ্ঠানটি সত্যিই হয়েছে, টাকা দিলে তার সদ্ব্যবহার হবে। শর্তটা অযৌক্তিক নয়।
রাজ্য-বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল খরচ জোগান রাজ্য সরকার, কিন্তু উন্নয়ন ও শ্রীবৃদ্ধির জন্য প্রথম এবং প্রায়ই প্রধান ভরসা ইউজিসি। অতএব নতুন বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের আগে অন্তত ১২বি-র বৈতরণী পারের ব্যবস্থা ছকে নেওয়া সরকারের অবশ্যকর্তব্য। অথচ মালদা-বারাসতই আজ অবধি সেই পর্যায়ে পৌঁছয়নি, পরেরগুলি কোন ছার। তাদের পরিকাঠামো অপ্রতুল, শিক্ষকরা গবেষণা প্রকল্পের দরখাস্তই জমা দিতে পারেন না। অধীনস্থ কলেজগুলি আগে কলকাতা বা উত্তরবঙ্গের সঙ্গে যুক্ত বলে যে অনুদান পেত, তা বন্ধ হয়ে গেছে। হালের প্রতিষ্ঠানগুলি বলতে গেলে ঘোষণার পর্যায়ে। ঘোষণা শুনে জেলার মানুষ দু’দিন আহ্লাদিত হতে পারেন, শেষে নিজেদের ভাববেন প্রতারিত।
অথচ সমান লগ্নিতে, অনেক দ্রুত ও সুষ্ঠু ভাবে অনেক বেশি ছাত্রের কাছে উচ্চশিক্ষার দ্বার খুলে দেওয়া যেত, পূর্বতন বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে (বিশেষত মালদহ, বারাসত ও পুরুলিয়ায়) শিক্ষকসংখ্যা ও পরিকাঠামো বাড়িয়ে ও যথেষ্ট নতুন ছাত্রাবাস খুলে। এই তিন বিশ্ববিদ্যালয় তাতে আপনিই ১২বি ধারার আওতায় চলে আসত। উপরন্তু ছাত্রেরা অনেক বেশি বিভাগ ও বিষয়ে (বিশেষত বিজ্ঞানে) লেখাপড়ার সুযোগ পেত।
আয়তনের একটা প্রশ্ন ওঠে ঠিকই: কলকাতা, বর্ধমান বা উত্তরবঙ্গের বিশাল এক্তিয়ার অবশ্যই ভেঙে ছোট করা দরকার। কিন্তু নতুন প্রতিষ্ঠানগুলির তো তাদের সঙ্গে ন্যূনতম সামঞ্জস্য থাকা চাই। সে দিকে দৃষ্টি রেখে সেগুলি ধীরে ধীরে, দুু-তিন বছর উন্মেষ বা ইনকিউবেশনের সময় দিয়ে, সুষ্ঠু ভাবে গড়ে তোলা যেত। আগে এমনটা হয়নি বলে আজও হবে না, এমন কথা নেই।
আসলে কোনও ভোটনির্ভর সরকার কোনও দিন এত ধৈর্যের ধার ধারেন না, হয়তো পারেন না। পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শাসকেরা কিন্তু একটা নতুন অনিশ্চয়তা ডেকে এনেছেন। ক্ষমতায় এসেও তাঁদের যেন জুজুর ভয় রয়ে গেল, যত ক্ষণ না আগের জমানার রাজনীতির শেষ গন্ধটুকু পর্যন্ত মুছে দূর হচ্ছে। শিক্ষা থেকে রাজনীতি দূর করা অবশ্যই ছিল তাঁদের একটা মুখ্য নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। প্রতিশ্রুতি কত দূর রক্ষা হয়েছে তা আমার আলোচ্য নয়। রাজ্যবাসী দৈনন্দিন সংবাদ থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছবেন।
পূবের্কার বিধ্বংসী রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন নেই। আমি আশির দশকে প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়িয়েছি, সন্তোষ ভট্টাচার্য উপাচার্য থাকাকালীন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাত্যহিক তাণ্ডব দেখেছি। কিন্তু বামপন্থীদের এ ব্যাপারে অনেক মুনশিয়ানা ছিল। তাঁরা অভ্যস্ত নিয়মাবলি চট করে পালটাতেন না। বরং গভীর মনোযোগে তা আয়ত্ত করে রন্ধ্রে রন্ধ্রে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে ভিতর থেকে দলীয় স্বার্থে গ্রাস করতেন। তাঁদের রাজত্বে বিশ্ববিদ্যালয়-আইনে এক বারই বড় রকম বদল হয়েছে, তাও মূল কাঠামো মোটের উপর বজায় রেখে। ফলে কাকতালীয় ভাবে দীর্ঘ দিনের নিয়মগুলি অনেকটা রক্ষিত হয়েছে, পরবর্তী কালে তার সদর্থক প্রয়োগের সম্ভাবনাও বজায় ছিল।
নতুন সরকার কিন্তু এসেই, ইংরেজি প্রবাদের ভাষায় স্নানের জলের সঙ্গে বাচ্চাকেও নর্দমায় ভাসিয়ে দিলেন। তাঁদের পরামর্শে বা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে, তৎকালীন রাজ্যপাল তথা বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আচার্য প্রত্যেক উপাচার্যের কাছে এক অভূতপূর্ব ‘অনুরোধ’ পাঠালেন: কোনও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেবে না, রুটিন কাজকর্ম চালিয়ে যাবে কেবল। ফলে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থার সৃষ্টি হল।
উপলক্ষ অবশ্যই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়-সংক্রান্ত আইনগুলির আমূল সংস্কার। সেটা অধৈর্য ও অপটু ভাবে করতে নিয়ে নানা অসংগতি ও অকার্যকারিতার সৃষ্টি হল— নীতির কথা ছেড়েই দিলাম। এ দিকে কর্তারা বুঝলেন, এতে তাঁদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যও মিটছে না। (তিন বছরে উপাচার্য নিয়োগের পদ্ধতির তিনটি সংস্করণ বেরিয়েছে।) উপরন্তু তাঁরা হয় বোঝেননি, নয় সজ্ঞানে বিলম্বসাধনের উদ্দেশ্যে অগ্রাহ্য করেছিলেন যে, কেবল আইন পালটালেই যথেষ্ট নয়, তার খেই ধরে আরও তিন দফা নিয়মকানুন নতুন করে প্রণয়ন করা চাই। নতুন আইনের কিছু ধারার ফলে সে প্রক্রিয়াটাও হল চরম দীর্ঘায়িত।
এক কথায়, রাজ্যের সব বিশ্ববিদ্যালয় আড়াই থেকে তিন বছর যেন থমকে গিয়েছিল, কাজের কাজ করতে পারেনি। আজও অবস্থা পুরো স্বাভাবিক নয়। তাতে সবচেয়ে বড় ক্ষতি, প্রচুর শিক্ষক পদ খালি পড়ে আছে, বহু কষ্টে ইউজিসি থেকে আদায় করা নতুন পদ যথাসময়ে পূরণ না হওয়ায় তামাদি হয়ে গিয়েছে। ব্যতিক্রম প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে এই সব নিয়ম-নিষেধের বাইরে রাখা হয়েছে, অর্থও জোগানো হয়েছে একতরফা ভাবে।
রাজ্যের উচ্চশিক্ষার পূর্ণ প্রেক্ষাপটে প্রেসিডেন্সির অবস্থান নিয়ে অন্যত্র বলেছি, পুনরাবৃত্তি করব না। আশা করব, বাঙালির শিক্ষাভিমানের অভিজ্ঞান (আর বিশ্বাস করুন আর না-ই করুন, ব্যক্তিগত ভাবে আমার বড় কাছের) এই প্রতিষ্ঠানটি নতুন অবতারে তার যথাযোগ্য স্থান অর্জন করে নেবে। সংবাদমাধ্যমের অতি-প্রচারে সেই উদ্দেশ্য বিঘ্নিত হতে পারে। আর আক্ষেপ, সেই প্রচারের উলটো পিঠ হিসেবে রাজ্যের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অবহেলা ও অবমূল্যায়ন ঘটছে। তাদের কাজকর্ম, বিশেষ করে গবেষণার খতিয়ানের ঠিক চিত্র রাজ্যবাসী পাচ্ছেন না, সরকারও অতএব উদাসীন।
সুতরাং যেমন আগের জমানায়, তেমনই আজও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি সারস্বত প্রচেষ্টায় সক্রিয় সমর্থন পাচ্ছে না, প্রশাসন ও রাজনীতির দাবার ছক হিসেবে দেখা হচ্ছে কেবল। দৈবগুণে আজও সেখানে বেশ কিছু কৃতী শিক্ষক-গবেষক কাজ করে চলেছেন, ভিড় জমাচ্ছে ঝকঝকে ছেলেমেয়েরা। সকলেই কাজ করছে পরিপার্শ্বের সঙ্গে অল্পবিস্তর যুদ্ধ করে। দৈবের উপর আর কত দিন নির্ভর করা যায়?
এ দিকে আছে কেন্দ্রের উচ্চশিক্ষা নীতির উদ্বেগজনক প্রভাব। উদ্বেগ বাড়ে রাজ্যের নিদারুণ অর্থাভাবের জন্য: কেন্দ্রের না-হয় নয়ছয় করার টাকা আছে। সেখানকার উপর্যুপরি সরকারের মূলমন্ত্র, এক দিকে কেন্দ্রীয়, অন্য দিকে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রাধান্য কায়েম করা। বিশ বছর আগে যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব ছিল না, আজ সেখানে দেশের ষাট শতাংশের বেশি উচ্চশিক্ষার্থী পড়ে। প্রায় সবগুলিই অর্থকরী বিদ্যার মহার্ঘ বিপণনকেন্দ্র, সম্পূর্ণ গবেষণাবর্জিত, বহু ক্ষেত্রে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত (সবগুলি অবশ্যই নয়)। সম্প্রতি দু-চারটি সত্যিই ব্যাপক বিদ্যাচর্চার কর্মসূচি নিয়েছে, মানবিক বিদ্যাকে পর্যন্ত মর্যাদা দিয়েছে। (শুদ্ধ বিজ্ঞান নয় কিন্তু, পয়সা কোথায়?) কিছু বিশিষ্ট শিক্ষক সেখানে যোগ দিয়েছেন, কিছু সৎ উদ্যোগ অবশ্যই চলছে। তবু প্রশ্ন থেকে যায়, আর্থিক ও সাংগঠনিক দিক থেকে এদের ভবিষ্যৎ কী? কটি ছাত্র এদের প্রবেশের কড়ি জোগাড় করতে পারবে?
আমেরিকায় যা-ই হোক, ভারতে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূমিকা তাই মৌলিক ও অপরিহার্য, সেখানেই আমাদের বিদ্যাচর্চার প্রাণভোমরা বেঁচে থাকবে বা থাকবে না। এ ক্ষেত্রেও আশ্চর্য বিভাজন। রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় সংখ্যায় কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দশগুণ, তাতে পড়ে সরকারি প্রাঙ্গণের ৮৫ শতাংশ ছাত্র, কিন্তু ইউজিসি-র অনুদান জোটে বড়জোর ৩৫ শতাংশ। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলির চার-পাঁচটি ভারতের শ্রেষ্ঠ বিদ্যায়তনের তালিকায়, বাকিগুলি নিষ্প্রভ। বহু হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে নতুন যে ষোলোটি স্থাপিত হয়েছে, শিক্ষা-মানচিত্রে তারা বলতে গেলে অস্তিত্বহীন। এ দিকে এই বৈষম্যের ফলে প্রতিষ্ঠিত রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলির উৎকর্ষ বিপন্ন বা অস্তমিত। বহু চেষ্টায় গুটিকতক এখনও সেরার তালিকায় টিকে আছে, তাদের মধ্যে অন্তত দুটি এই পশ্চিমবঙ্গে।
ভবিষ্যৎ চিত্র আরও হতাশার। কেন্দ্রীয় সরকার ক্রমশ ইউজিসি-র বদলে রাষ্ট্রীয় উচ্চতর শিক্ষা অভিযান মারফত অর্থ বিলি করতে চায়। এই ব্যবস্থার প্রথম শর্ত: অর্থের এক তৃতীয়াংশ রাজ্যকে জোগাতে হবে। নিঃস্ব রাজ্য সরকারগুলির এতে হেলদোল নেই, নিজের মনসবে কর্তৃত্ব বিস্তার করতে পেলেই তারা খুশি। আমাদের সরকার যে অন্য রকম ভাবছে, বলার অবকাশ কই?
ছিল কিন্তু অবকাশ। কোনও বিশেষ সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের ছেলেমেয়েদের একটা অংশ পড়ার এখনও জন্যেই পড়তে চায়। হয়তো কেউ বদলাবার উদ্যোগ নেয়নি বলেই, পাঠ্যক্রমে আজও কিছু উপাদান আছে যা তাদের খোরাক মেটাতে পারে, কিছু আছে বৃহত্তর বাতাবরণে। সারা ভারতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির গবেষকদের একটা বড় অংশ বাঙালি। রাজধানী দিল্লির বাইরে একমাত্র কলকাতাতেই এখনও আছে মানবিকবিদ্যার কয়েকটি প্রাণবন্ত কেন্দ্র। তরুণ বাঙালিদের একটা মেধাবী অংশ আজও শিক্ষক হতে চায়। অন্য কোনও রাজ্যে এই লক্ষণগুলো বড় দেখা যায় না।
এখানেও কিন্তু তা নিষ্প্রভ হয়ে আসছে, প্রাণশক্তি মিলিয়ে যাচ্ছে অবহেলায় অপশাসনে। পরিচর্যা করলে জেগে উঠবে, ফেলে রাখলে একেবারেই যাবে মরে।
কোন বিকল্পটা বাছব, সে সিদ্ধান্ত শীঘ্র না নিলেই নয়।
(শেষ)
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে এমেরিটাস অধ্যাপক
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy