আরে, জনগণের কথায় পার্টি চলে না কি? জনগণ তো গাধা, না না, গাধা নয়, ভেড়ার পাল, মিডিয়ার ছপ্টির ঘায়ে এক বার এ দিক ঝুঁকছে, এক বার ও দিক। খবরকাগজগুলো হেডলাইন করল, তৃণমূল ভাল, সবাই বলবে হ্যঁা হ্যঁা ভাল। আবার শয়তানগুলো চ্যানেলে বলল তৃণমূল খারাপ, পাবলিক মুড়ি খেতে খেতে সিদ্ধান্ত নিল, সত্যিই খুব খারাপ। এদের আবার কেউ ভয় পায়? ভয় পাওয়ায়। ভোটের দিনকতক আগে থেকে র্যান্ডম চড় মারো লাথি ঝাড়ো বন্দুক নিয়ে টেররাইজ করে রাখো, যারা বিরোধী-মাইন্ডেড তাদের ভোট দিতেই দিয়ো না, মারতে মারতে বুথের দশ মাইল দূরে ফেলে এসো, আর এক্সট্রা ত্যান্ডাইম্যান্ডাই দেখলে, গুড়ুম। মিটে গেল। পার্টির সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক হবে চাবুকের সঙ্গে পাছার সম্পর্ক। কথায় কথায় থ্রেট থাকবে, এক দিন চড়াও হব, ব্যস, কাগজে ডেডবডির কালার-ছবি বেরবে। তা না, সেই জনগণের কাছে কী ইমেজ হচ্ছে, এই ভয়ে আমায় ছ’বচ্ছর সাসপেন্ড করে দিল!
কী জগ-টা ছুড়েছিলাম সেই টিচারটার দিকে! ওঃ, অন্য দেশ হলে আমায় অলিম্পিকে নিয়ে যেত! ইভেন্টের নাম ‘জগিং’! তা ছাড়া, বোম না ছুড়ে জাস্ট জগ ছুড়েছি, সেই জন্যে আমার সংযমের বাহাদুরি দে! জগ খুলে জলও তো ছুড়তে পারতাম! তা হলে মেয়েটার কাপড় ভিজে যেত। কী ইজ্জত-লস হত! তা কিন্তু করিনি। মাথা আমার একদম সাফ। আরে, তাজা ছেলে আমি। আমার মধ্যে একটা তেজ সব সময় রাগী ভাতের হাঁড়ির মতো ফুটছে। এরাই তো পৃথিবীকে চেঞ্জ করে! চ্যালেঞ্জ দেখলে লাফিয়ে পড়ে, পাহাড় দেখলে লং জাম্প দেয়, সমুদ্র দেখলে তার মধ্যে চান করতে করতেই বাথরুম সেরে নেয়। এরা কিচ্ছুকে পরোয়া করে না। পাঙ্গা নিতে এলেই হাতের কাছে যা দেখে স্ট্রেট ছুড়ে মারে। পেপারওয়েট থাকলে ছুড়ব, জগ তো তা-ই সই, কিছু না পেলে একটা টিচারকেই তুলে আর একটা টিচারের দিকে ছুড়ে মারব। এরা ভীম ভাসমান মাইন। ছোটা ভীম নয় কিন্তু।
আগুন নিয়ে খেলা করা এই সব পাবলিকই পার্টিকে জেতায় আর ক্ষমতায় রাখে। সমস্ত পার্টির গুন্ডা থাকে। যে পার্টির গুন্ডা যত নিপুণ নিষ্ঠুর নিরক্ষর, সে পার্টির জোর তত বেশি। কত ন্যাকা লোক খবরকাগজে কী সব হাবিজাবি অ্যনালিসিস করে, কোন দল কেন জিতল। আরে ভাই, কংগ্রেসের আগে ভাল ভাল গুন্ডা ছিল, তার চেয়ে সিপিএমের গুন্ডা বেটার হয়ে গেল, তো ওরা জিতে গেল। তার পর তৃণমূলের গুন্ডা আরও ভাল হল, আমরা জিতে গেলাম। এই তো ব্যাপার। এতে ভাবার কী আছে? অ্যাকচুয়ালি, ভাবাভাবি যত বেশি হবে, জীবনে তত বখেড়া। আরে, পুলিশকে পেটাবার সময়ও আমি আগুপাছু কিচ্ছু ভাবিনি। পড়াশোনা করিনি তো, তাই আমার মাথায় কোনও বাড়তি বস্তা নেই। ফাঁকা খুলিতে চড়াত্ চড়াত্ ইলেকট্রিক খেলছে। যারা আমার মতো হতে চায়, আমাকে পুজো করে, তাদের প্রতি আমার উপদেশ: বেশি ভেবে সময় নষ্ট কোরো না। কাজ করো। মানে, যার ওপর খার উঠবে, সটান মেরে দাও। থানায় ঢুকে আমি তাণ্ডব করেছি। আবার শত্রু-দলের একটা লোক, গলায় গামছা দিয়ে হাঁটে, তাকেও বেধড়ক্কা মেরেছি। ইশকুলে ঢুকে অর্ডার দিয়েছি, পরীক্ষা দিচ্ছে যে ফুলের মতো ছেলেমেয়েগুলো, তাদের টুকলি করতে দিন। তবে তো ওরা আমার মতো হয়ে উঠবে। শেষে কি পড়ায় মন দিয়ে আসল কাজগুলো নেগলেক্ট হবে? আসল কাজ কী? শের হওয়া। শের। গিধ্ধড় নয়। তুমি যেখান দিয়ে হাঁটবে, লোকে সেলাম ঠুকে রাস্তা ছেড়ে পাঁইপাঁই সরে যাবে, থরথরিয়ে কাঁপবে। সে অন্য দলের হোক, আর নিজের দলের। মারামারির সময় কোনও আমরা-ওরা ভেদাভেদ রেখো না। ছিঃ। ভেদ করতে নেই। নিজের দলের লোক ঝামেলি করলে, তাকেও জানে মেরে দেবে। আমার হাতেপায়ে আপনিই এ সব ডিপ থট এসে যায়, তাই তো আমি দামাল। ইংরিজিতে বলে the মাল!
জানি, এই সাহস দেখে বহুত লোকের চোখ টাটায়। হবেই, এটা তো বাঙালি জাতের ল্যান্ড। আর এই জাতটা ম্যাদামারা। সারা দিন শুধু ভয় খায় আর মেয়েছেলের মতো গান গায়। সেখানে এই রকম একটা দাপুটে সিংহম্ হাঁটছে দেখলে, তার পায়ের স্টেপে হুগলি ব্রিজ অবধি কেঁপে ওঠে, কিউবিক্লের ভেতর ক্যাবলাদের হাঁটু লড়বড় করে। আর আছে কয়েকটা শেয়াল পণ্ডিত, সারা দিন পিনপিন প্যানপ্যান করে আঁতেল বক্তিমে মারে, শালাদের কব্জিগুলো সরু আর চেহারা সিড়িঙ্গে, মদমাংস দেখলে পালায় আর বাড়ি থেকে টিপিনকারি খুলে ঢ্যঁাড়সের ঝোল খায়, আর হাত নেড়ে নেড়ে শক্ত বাংলা ওয়ার্ড বলে। এই গরমকালে মাফলার জড়ানো ব্যাটারাই যত আলফাল আইডিয়া ঢোকাচ্ছে পার্টির মগজে। আরে, একটা মারমুখো থাবা-রেডি মেম্বার থাকলে লোকে সেই দলকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করে রে! বিজেপি এখন সারা বাংলায় কন্ট্রোল নিতে চাইছে, আমি আছি জানলে ওরা কোথাও ঢোকার আগে দশ বার ভাববে। আমাকে সাসপেন্ড করে কার পিঠ-চাপড়ানি পাবি? বড়জোর বিরোধী দলগুলোর, যারা হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে, সচিন তেন্ডুলকরকে ড্রেসিং রুমে রেখে এই বোকা দলটা খেলতে নামছে বলে।
আবার ছ’বছর! রাম তবু চোদ্দো বছর বনবাসে ছিল, তার একটা ওয়েট আছে, ডবল ফিগার। ছ’বছরটা কোত্থেকে এল? আমি থোড়াই অদ্দিন বসে থাকব! অন্য পার্টি জয়েন, বা ফ্রিল্যান্সও করতে পারি। মোটা ফি নিয়ে এমন ভাঙচুর, বৈদিক যুগের রুইন! আবার কে বলতে পারে, আমার কাঁদোকাঁদো ক্ষমাচিঠি (ট্যাকটিক্স, বস) দেখে লিডাররা অ্যায়সা ফোঁপাল, ফের বহাল হয়ে গেলাম। সেই ঘোটালায় কেউ সাহস করে আসলি কোশ্চেনও বাগিয়ে ফেলতে পারে: আমাকে বাদ দিলে, পার্টি ছ’বচ্ছর টিকবে তো?
লেখাটির সঙ্গে বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার মিল থাকলে তা নিতান্ত অনিচ্ছাকৃত, কাকতালীয়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy