উদ্বেগ। জলঙ্গিতে। ছবি: সাফিউল্লা ইসলাম
একটা বড় গাড়ি কিংবা কোনও অচেনা মুখ দেখলেই চমকে উঠছেন ডোমকল, জলঙ্গির মানুষ। রোজকার বাজার বা অন্য কোথাও যাওয়ার পথেও সতর্ক থাকছেন। খোঁজ নিচ্ছেন, এলাকায় সব কিছু স্বাভাবিক রয়েছে কি না। তাতে দোষেরও কিছু নেই। দিন দশেকের মধ্যে এলাকার ১০ যুবককে গ্রেফতার করা হয়েছে জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে। তার মধ্যে ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে এনআইএ। এক জনকে এসটিএফ। রবিবার জলঙ্গির বিশ্বাসপাড়ার মুন্না সরকারকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে ভিজ়ুয়াল মিডিয়ায় দেখানো হচ্ছিল। তবে এসটিএফ সে কথা সমর্থন করেনি।
জলঙ্গির চোঁয়াপাড়া পঞ্চায়েত প্রধান রাকিবুল ইসলামের কথায়, ‘‘পরিস্থিতি থমথমে। যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের সকলকেই এলাকার মানুষ ভাল ছেলে বলেই চিনতেন। তার পরেও জঙ্গি যোগের কথা উঠেছে। তাতেই অনেকে ভয় পাচ্ছেন।’’ রাকিবুল বলেন, ‘‘এমনিতেই করোনা আবহে মানুষ নানা অসুবিধায় পড়ে রয়েছেন। অনেকের হাতে টাকা নেই। তার মধ্যে একটার পর একটা উৎসব চলে গিয়েছে নিরানন্দ ভাবে। তাই এমনিতেই মানুষের মন ভাল নেই। তার সঙ্গে এমন ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছেন না।’’
শামিম আনসারি গ্রেফতার হওয়ার পরে পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়েছে। শামিমের বন্ধু আল মামুন কামালকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেফতার করা হয়েছে। এলাকার লোকের বক্তব্য, যাদের ধরা হয়েছে তারা তো ছোটবেলা থেকেই এই এলাকাতেই মানুষ। তাই তাদের বন্ধুবান্ধব তো থাকবেই। ফলে সেখানেও ভয় বেড়েছে অনেকের।
তবে সব থেকে বেশি ভয় কেরলের সঙ্গে সম্পর্কের। মোশারফ হোসেন, মুর্শিদ হাসান এবং ইয়াকুব বিশ্বাসকে কেরল থেকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। তিন জনেই ডোমকলের বাসিন্দা। কিন্তু এই তিন জনের সঙ্গে ডোমকলের যাঁরা থাকতেন, তাঁদের কারও সঙ্গে এখনও যোগাযোগ করা যায়নি।
অনেক পরিযায়ী শ্রমিক কেরল যাওয়ার কথা থাকলেও তাঁদের বাসের অগ্রিম বুকিং করা টিকিট বাতিল করেছেন বলেও জানা যাচ্ছে। জলঙ্গির এক পরিযায়ী শ্রমিক বলছেন, ‘‘যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাতে এই মুহূর্তে বাইরে যাওয়াটা খুব দুশ্চিন্তার। পরিবারের সদস্যরাও বারবার বলছে আরও ক'টা দিন দেখে রওনা দিতে।’’ ডোমকলের পরিযায়ী শ্রমিক রাশিদুল বিশ্বাস বলেছেন, ‘‘গত শুক্রবার কথা ছিল বাসে করে কেরলে যাওয়ার, কিন্তু জঙ্গি কাণ্ডে একের পর এক পরিযায়ী শ্রমিকের নাম যে ভাবে জড়িয়ে পড়ছে তাতে আর সাহস পাচ্ছি না ভিন রাজ্যে রওনা দেওয়ার।’’ পরিবার থেকে তাদের আত্মীয়রা বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এক পরিযায়ী শ্রমিকের বাবা বলছেন, ‘‘ছেলে ভিন রাজ্যে কাজ না করলে আমাদের সংসার চলবে না। দুবেলা দু’মুঠো ভাতের জোগাড় হয় ছেলের জন্য। কিন্তু এই সময়ে ভয় করছে ছেলেটাকে নিয়ে, বুঝতে পারছি না কী করব।’’ রানিনগরের কালিনগর গ্রামে আবু সুফিয়ানের বাড়ির দরজায় এদিনও বাইরে থেকে তালা ঝুলতে দেখা যায়, গোটা গ্রাম এখনও থমথমে।
মুর্শিদ হাসানের বাড়িতে এখনও হাহাকার করছে মা আম্বিয়া বিবি। তার এক কথা, ‘‘আমার ছেলে নির্দোষ, ওকে চক্রান্ত করে ফাঁসানো হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy