গুপ্তিপাড়ার রেশন দোকানে সিসিটিভিতে নজর। —নিজস্ব চিত্র
আগেই হুগলির রেশন দোকানগুলিতে পুলিশি নজরদারি শুরু হয়েছে। এ বার গ্রাহকদের অসন্তোষ মেটাতে কিছু এলাকায় আরও নানা উদ্যোগ সামনে আসছে।
ক’দিন আগে চণ্ডীতলা-২ ব্লক অফিসে রেশন সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ জানানোর জন্য চালু হয়েছে ‘টোল ফ্রি’ হেল্পলাইন। সেই নম্বরে ফোন করে অভিযোগ জানালেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন বিডিও কৃষ্ণচন্দ্র মুন্ডা। বলাগড়ের গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে আবার এলাকার তিনটি রেশন দোকানে সিসিক্যামেরা বসানো হয়েছে বৃহস্পতিবার। তবে, গত রবিবারের পর থেকে এ পর্যন্ত রেশন নিয়ে আর নতুন করে কোনও অভিযোগ বা অশান্তির কথা সামনে আসেনি বলে দাবি করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ামক অসীমকুমার নন্দী।
লকডাউনে গরিব মানুষদের রেশনে খাদ্যসামগ্রী বিলির শুরু থেকেই হুগলির নানা প্রান্ত থেকে নানা অভিযোগ সামনে আসছিল। কোথাও কম পরিমাণে চাল-গম বিলি, কোথাও আটা না-দেওয়ার অভিযোগ উঠছিল ডিলারদের বিরুদ্ধে। দুর্নীতির অভিযোগে গত রবিবার পুরশুড়ার এক ডিলারকে মারধর এবং তাঁর বাড়ি-গাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগও উঠেছিল গ্রাহকদের একাংশের বিরুদ্ধে। এ পর্যন্ত ১৫ জন ডিলারকে শোকজ় করা হয়েছে। জেলা খাদ্য দফতর সাসপেন্ড করেছে পান্ডুয়া এবং পোলবার দুই ডিলারকে। পুরশুড়ার গোলমালের পর থেকেই জেলা জুড়ে রেশন দোকানগুলিতে পুলিশি নজরদারি শুরু হয়।
আগামী মাসের শুরু থেকেই গ্রাহকদের মাথাপিছু ৫ কেজি করে চাল নিখরচায় দেওয়া শুরু হচ্ছে। তার আগেই অবশ্য এলাকার তিন রেশন দোকান থেকে খাদ্যসামগ্রী বিলিতে স্বচ্ছতা বজায় রাখতে উদ্যোগী হয়েছে গুপ্তিপাড়া-১ গ্রাম পঞ্চায়েত। উপপ্রধান বিশ্বজিৎ নাগ জানিয়েছেন, পঞ্চায়েতে কুড়ি হাজারেরও বেশি মানুষের বসবাস। কয়েকদিন আগে এখানকার এক রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে সঠিক পরিমাণে খাদ্যসামগ্রী না দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। তখনই পঞ্চায়েতে আলোচনা করে সিসিক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মনিটর এবং হার্ড-ডিস্ক তিনটি রেশন দোকানেই
থাকবে। পঞ্চায়েতের প্রতিনিধিরা দেখভাল করবেন। কোনও অভিযোগ উঠলে সেই ফুটেজ দেখে খাদ্য দফতর ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিটুল দাস নামে সেখানকার এক ডিলার বলেন, ‘‘দোকানে সিসিক্যামেরা বসায় আমরাও খুশি। খাদ্যসামগ্রী বিলি বা দোকানে ভিড়ের সব ছবি উঠে যাবে। কোনও অশান্তি হবে না।’’ গুপ্তিপাড়া-১ পঞ্চায়েতের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বিডিও সমিত সরকার বলেন, ‘‘আমি ব্লকের অন্য পঞ্চায়েত প্রধানদের কাছেও আবেদন করব, তাঁরাও যেন রেশন দোকানে সিসিক্যামেরা বসান।’’
চণ্ডীতলা-২ এবং তারকেশ্বর ব্লক এলাকার বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, রেশনের চাল-গম বিলিতে অনিয়ম হচ্ছে। যাঁদের ডিজ়িটাল রেশন কার্ড হাতে আসেনি, সরকারি কর্মীদের দিয়ে তাঁদের জন্য কুপন বিলিরও দাবি তুলেছেন তাঁরা। সব মিলিয়ে মোট ১১ দফা দাবিতে বুধবার চণ্ডীতলা-২ ব্লক অফিসে স্মারকলিপি দেয় বিজেপি। বৃহস্পতিবার একই রকম স্মারকলিপি দেওয়া হয় তারকেশ্বর ব্লক অফিসেও। প্রকৃত গরিব মানুষ যাতে বঞ্চিত না হন, সেই দাবিও তুলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। কুপন বিলিতে শাসকদলের বিরুদ্ধে দলবাজির অভিযোগও তুলেছেন তাঁরা। তৃণমূল অভিযোগ মানেনি। চণ্ডীতলা-২ ব্লকের বিডিও কৃষ্ণচন্দ্র মুন্ডা জানান, অভিযোগ জানানো জন্য হেল্পলাইন খোলা হয়েছে। কোনও অভিযোগ পেলে সমাধান করা হচ্ছে।
বৈদ্যবাটী পুরসভার ২৩টি ওয়ার্ডের বহু মানুষ আবেদন করেও এখনও ডিজ়িটাল রেশন কার্ড বা তার পরিবর্তে বিশেষ ‘খাদ্য কুপন’ও পাননি। তাঁরা হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সরকারি চাল-গম পাওয়ার জন্য। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বেশ কিছু ডিজ়িটাল কার্ড তৈরি হয়ে গিয়েছে। ৩০ এপ্রিলের মধ্যে তা বিলি করা হবে। বৈদ্যবাটী পুরসভার চেয়ারম্যান অরিন্দম গুঁইন জানিয়েছেন, প্রচুর দরিদ্র মানুষ ডিজ়িটাল রেশন কার্ডের জন্য আবেদন করেছেন। এলাকার দুঃস্থ মানুষদের পুরসভার পক্ষ থেকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে আবার দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার সকালে রেশনের দাবিতে পোলবা-দাদপুর ব্লক অফিসে গিয়ে বরুনান পাড়ার পাঁচটি পরিবার অবস্থান-বিক্ষোভ করে। বিক্ষোভকারীদের মধ্যে মনোজ রায়ের অভিযোগ, ‘‘আমাদের রেশন কার্ড নেই। তাই ডিলার খাদ্যসামগ্রী সরবরাহ করছেন না। আমাদের খাওয়া-দাওয়া জুটছে না।’’ এ দিন প্রশাসনের তরফে তাঁদের খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়। বিডিও সন্তু দাস অভিযোগ তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন বিক্ষোভকারীদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy