Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
শ্রমিক অসন্তোষের অভিযোগ কারখানা কর্তৃপক্ষের

নর্থব্রুক চটকল বন্ধ, বিপাকে ৫০০০ শ্রমিক

চন্দননগরের গোন্দলপাড়া এবং শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া চটকল বেশ কিছু দিন ধরে বন্ধ। ওই দুই চটকল বন্ধের জন্য শুধু শ্রমিক পরিবারগুলি ভুগছে তাই নয়, স্থানীয় অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়েছে। এ বার, নর্থব্রুকও বন্ধ হওয়ায় এখানকার শ্রমিক মহল্লাও একই আশঙ্কায় ভুগছে। 

ব্যস্ত: তালা কারখানার গেটে। ছবি: তাপস ঘোষ

ব্যস্ত: তালা কারখানার গেটে। ছবি: তাপস ঘোষ

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ০০:২১
Share: Save:

ফের হুগলি জেলার একটি চটকলে তালা ঝুলল। শ্রমিক অসন্তোষের কারণ দেখিয়ে মঙ্গলবার ভদ্রেশ্বরের নর্থব্রুক চটকলে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর বিজ্ঞপ্তি ঝোলালেন কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তে মিলের প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক বিপাকে পড়লেন।

চন্দননগরের গোন্দলপাড়া এবং শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া চটকল বেশ কিছু দিন ধরে বন্ধ। ওই দুই চটকল বন্ধের জন্য শুধু শ্রমিক পরিবারগুলি ভুগছে তাই নয়, স্থানীয় অর্থনীতিতেও তার প্রভাব পড়েছে। এ বার, নর্থব্রুকও বন্ধ হওয়ায় এখানকার শ্রমিক মহল্লাও একই আশঙ্কায় ভুগছে।

মালিকপক্ষের একতরফা সিদ্ধান্তের জন্য এই পরিস্থিতির অভিযোগ তুলে অবিলম্বে মিল খোলার দাবি জানিয়েছেন শ্রমিকরা। চন্দননগরের ডেপুটি লেবার কমিশনার কিংশুক সরকার জানান, ‘‘ওই চটকলে বেশ কিছুদিন ধরেই শ্রমিক এবং মালিকপক্ষের মধ্যে একটা সমস্যা চলছিল। শ্রম দফতরের তরফে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা হয়েছিল। চটকলটি যাতে দ্রুত খুলে যায় তার জন্য সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে আমরা বৈঠক ডাকা হবে। আলোচনার মাধ্যমেই মীমাংসার চেষ্টা করা হবে।’’

মিল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, শ্রমিকদের দুপুরে টিফিনের জন্য সময় বরাদ্দ ছিল আধ ঘণ্টা। কয়েক মাস আগে তা কমিয়ে ২০ মিনিট করা হয়। এই নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। তাঁদের বক্তব্য, এত কম সময়ের মধ্যে বাড়ি থেকে খাওয়াদাওয়া সেরে মিলে ঢোকা সম্ভব হয় না। দেরি হলে নানা কৈফিয়ত দিতে হয়। ওই সময় বাড়িয়ে ৫০ মিনিট করার দাবি জানানো হয়।

এর মধ্যেই মাস খানেক ধরে শ্রমিকরা অভিযোগ তোলেন, তাঁদের অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে বাধ্য করা হচ্ছে। মেশিনপিছু প্রয়োজনের তুলনায় কম শ্রমিককে দিয়ে কাজ করানো হচ্ছে। এই নিয়ে শ্রমিকরা আন্দোলন করছিলেন। তাঁদের দাবি, শান্তিপূর্ণ ভাবেই কাজ চালিয়ে আন্দোলন করা হচ্ছিল। কিন্তু অনৈতিক ভাবে শ্রমিকদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে মিল বন্ধ করা হয়েছে।

ওই চটকলের ওয়াইন্ডিং বিভাগের শ্রমিক কানাইলাল রাজভড় বলেন, ‘‘মালিকপক্ষ বাড়তি মুনাফার জন্য শ্রমিকদের অতিরিক্ত খাটতে বাধ্য করা হচ্ছে। মাঝেমধ্যেই সাপ্তাহিক বেতনের টাকাও নির্দিষ্ট সময়ে দেওয়া হচ্ছে না। বাধ্য হয়েই আমাদের আন্দোলনে নামতে হয়েছে। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতির দায় শ্রমিকদের উপরে চাপানো হচ্ছে। এটা ঠিক নয়। অবিলম্বে মিল খোলা হোক। শ্রমিকদের উপরে জুলুম বন্ধ

করা হোক।’’

মালিকপক্ষের অবশ্য অভিযোগ, বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনের নামে শ্রমিকদের একাংশ ইচ্ছেখুশি মতো কাজ করছিলেন। মাঝেমধ্যেই তাঁরা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছিল। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির জন্যই তাঁরা মিল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। মিলের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজেশ্বর পাণ্ডে বলেন, ‘‘কিছু শ্রমিক অন্য শ্রমিকদের প্রভাবিত করে কাজের পরিবেশ নষ্ট করছেন। ওঁরা কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মানছেন না। শ্রমিকরা কাজ না করায় দীর্ঘদিন উৎপাদন ব্যাহত হলে মিল বন্ধ করা ছাড়া কোনও উপায় থাকে না।’’

গোলমালের আশঙ্কায় এ দিন মিলের গেটের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি অবশ্য হয়নি।

অন্য বিষয়গুলি:

Jute Meal Job Cut North Brook
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE