খানা তল্লাশি
লেখক: পিনাকী ভট্টাচার্য
২০০.০০
আনন্দ পাবলিশার্স
বাঙালিকে ভোজনবিলাসী বলা আর মনুষ্যজাতিকে মরণশীল বলার মধ্যে খুব একটা ফারাক আছে বলে মনে হয় না। শুধু বাঙালি কেন, দেশ-শ্রেণি-গোত্র-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত মানুষই এর আওতায় পড়বে। তবে আমরা যতটা খাদ্যরসিক, ঠিক ততটাই উদাসীন খাবারের সুলুক সন্ধান নিয়ে। সে-দিক থেকে আলোচ্য বইটি নতুন দিশা দেখাবে— ময়দার চাপাটি প্রথম তৈরি হয়েছিল নাকি পারস্যে। ফারসি ‘চাপাট’-এর মানে থাপ্পড় বা চড়। ময়দার লেচি নিয়ে হাতের তালুতে মেরে যেহেতু বানানো হয়, তাই এই নাম। এই রুটি ভারতের নাগরিকত্ব পেয়েছিল আওধ পৌঁছে, কারণ সেখানেই ময়দার বদলে আটা দিয়ে রুটি তৈরি শুরু হয়। রুটির উৎসের এই তথ্য নস্যাৎ করে দেয় আফ্রিকা। সেখানে ইউরোপের দেশগুলোর মতো আটা গেঁজিয়ে রুটি বানানোর দস্তুর ছিল না, গোল রুটি বানানোর কৌশলের মালিকানা নাকি আদতে পূর্ব আফ্রিকা থেকেই এশিয়া পৌঁছেছিল, কারণ সোয়াহিলি উপজাতির কাছে এই রুটি বহু যুগ ধরেই প্রধান খাবার। আফ্রিকার এই দাবি সবাই মেনেই নিয়েছিলেন প্রায়। তখন আবিষ্কার হল, সিন্ধু সভ্যতার আমলেও রুটি ছিল...। এ ভাবেই ১৪১ পৃষ্ঠার বইটিতে ঝরঝরে বাংলায় লেখক বিভিন্ন খাবারের উৎস সন্ধান চালিয়ে গিয়েছেন। রচনাগুলি আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ২০১৪-১৬ পর্যন্ত।
বায়ো-মেডিসিন থেকে নজরদারি মেডিসিন
লেখক: জয়ন্ত ভট্টাচার্য
২০০.০০
হাওয়াকল
কেমন আছেন, প্রশ্ন করতে এক প্রবীণ বন্ধু সে দিন বললেন, ‘ভাল। কেন জানেন? সুগার, প্রেশার, কোলেস্টরল কিচ্ছু মাপাই না। যে দিন যাওয়ার হবে, চলে যাব।’ ইনি কি অজ্ঞানতায় মুখ-ঢাকা কাপুরুষ? নাকি স্বাস্থ্য-সন্ত্রাস জয়-করা প্রাজ্ঞজন? জয়ন্ত ভট্টাচার্য পেশায় চিকিৎসক, কিন্তু অনবরত নজরদারির মাধ্যমে মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করে যে মেডিসিন, তার ঘোর বিরোধী। দু’চামচ চিনি, দু’টুকরো মাংস বেশি খাওয়া হলে দারুণ বিপন্নতা, এবং তা থেকে মুক্তির নানা সমাধান (খাবার, জিম, জুতো কি চশমার নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড) এর মধ্যে মানুষের জীবন ঘোরাফেরা করছে। বিজ্ঞানের নামে যা চলছে, তার পিছনে রয়েছে কর্পোরেট ব্যবসার জগৎ, বলতে চেয়েছেন লেখক। রোগসর্বস্ব স্বাস্থ্যের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করার অনেক সূত্র মিলবে তাঁর বই থেকে। বলার কথা একটা। লেখক যাঁদের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়েছেন, তাঁরা সকলেই এক তাত্ত্বিক অবস্থানে নেই। অনেকে প্রচলিত মেডিসিনকে সম্পূর্ণ খারিজ করেছেন, অনেকে তার মধ্যে থেকেই তাকে আরও মানবিক, অর্থবহ করতে চান। এই বিভিন্নতা ধরা না পড়ায় ভুল বোঝার সুযোগ থাকে। আর, এত ইংরেজি কেন? ইংরেজি না জানলে যদি বাংলা বই বোঝা না যায়, তবে ঘোর বিপদ।
নিঃসঙ্গতার একশ বছর/ গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস
অনুবাদক: জি এইচ হাবীব
৯৯৫.০০
বাতিঘর (বাংলাদেশ)
১৯৬৭ সালে আর্জেন্টিনার বুয়েনস এয়ারেসের ‘এডিটোরিয়াল সুদামেরিকানা’ থেকে প্রকাশিত হয় গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেসের উপন্যাস ‘সিয়েন আনোস দে সোলেদাদ’, প্রখ্যাত মার্কিন অনুবাদক গ্রেগরি রাবাসার ইংরেজি অনুবাদে যা ‘ওয়ান হানড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউড’ নামে ভুবনজয়ী। রাবাসা-র অনুবাদ পড়ে মার্কেস বলেছিলেন, মূল স্প্যানিশের মিষ্টতা ও সাহিত্যকীর্তিকেও অতিক্রম করে গিয়েছে ইংরেজি অনুবাদ। ১৯৭০ সালের সেই ইংরেজি অনুবাদের পরেই গার্সিয়া মার্কেসের উপন্যাস অমর প্রতিষ্ঠা পায়, বিশ্বের অন্যান্য ভাষায় গ্রন্থটি অনুবাদের ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়। বাংলায় এই গ্রন্থ অনুবাদের কাজ হয়েছে দুই বঙ্গেই। বাংলাদেশের অনুবাদক জি এইচ হাবীব-এর ‘নিঃসঙ্গতার একশ বছর’ প্রথম প্রকাশিত হয় ২০০০ সালে, সম্প্রতি মূল উপন্যাসের পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে প্রকাশ পেল বাংলা অনুবাদটির সুবর্ণ জয়ন্তী সংস্করণ। এই অর্ধশতকে গার্সিয়া মার্কেস এবং তাঁর উপন্যাস উভয়েই অমর প্রতিষ্ঠায় আরূঢ়; তাঁর লেখায় জাদুবাস্তবতা, মিথ, উত্তর-ঔপনিবেশিকতার মতো তত্ত্ব ও প্রকরণ নিয়ে আলোচনাও পর্বতপ্রমাণ। চর্বিত-চর্চিত দিকে না গিয়ে শুধুমাত্র একটি অনুবাদগ্রন্থ হিসাবে হাতে তুলে নিলে, নজর কাড়ে এর গ্রন্থসজ্জা ও অলংকরণ। ২০১৭-র এপ্রিলে স্পেন থেকে প্রকাশিত, মূল বইটির একটি সুবর্ণ জয়ন্তী সংকলনের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ করেছিলেন লন্ডন-নিবাসী তরুণ শিল্পী লুইসা রিবেরা। আলোচ্য গ্রন্থটিতে সেই প্রচ্ছদ ও দু’পৃষ্ঠা জোড়া দশটি বহুবর্ণ চিত্র ব্যবহৃত হয়েছে। গার্সিয়া মার্কেসের কল্পনাভূমি ‘মাকোন্দো’ বা মেলকিয়াদেস, হোসে আর্কাদিও বুয়েন্দিয়া বা উরসুলা ইগুয়ারানের মতো চরিত্রের মনগড়া অবয়বদের পাতা-জোড়া হঠাৎ-দর্শনে বেশ লাগে। বিদেশি শব্দের অযথা-অনুবাদে ভারী নয় হাবীবের তরজমা। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ: ইংরেজি বাক্যবিন্যাস বাংলায় সুখপাঠ্যতা হারায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy