এই সময়ের কথক/ প্রসঙ্গ: অমলেন্দু চক্রবর্তী
সম্পাদক: প্রিয়দর্শী চক্রবর্তী
৫৫০.০০
দে’জ পাবলিশিং
‘কথাসাহিত্যিক অমলেন্দু-র সামাজিক অবস্থানকেই চিনে নেওয়ার আগ্রহ’ থেকে এ-বইয়ের প্রস্তুতি, কথামুখ-এ জানিয়েছেন সম্পাদক। বইটিতে বহু বিশিষ্ট বাঙালির বিবিধ রচনায় এক বিস্তারিত পরিচয়ে উদ্ভাসিত অমলেন্দু চক্রবর্তী। যেমন অশোক মিত্র লিখছেন ‘যখনই অমলেন্দুকে দেখতাম, ওর সঙ্গে একটু আলাদা করে কথা বলতে ভালোবাসতাম। একটা সময় ছিল যখন বামপন্থার বিরোধিতায় একটি সামাজিক সাহিত্য রচনা রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তখন আমরা সঙ্গী খুঁজতাম, সেই সব সঙ্গী যাদের সঙ্গে একটু সঙ্গোপনে মনের কথা আলাদা করে বলা যায়। বলতে দ্বিধা নেই, সেই সঙ্গসুখ অমলেন্দুর সঙ্গে আলাপচারিতায় আমি পেতাম।’ এ ধরনের স্মৃতিকথনের পাশাপাশি ঠাঁই পেয়েছে তাঁর গল্প-উপন্যাস নিয়েও তন্নিষ্ঠ ধারালো আলোচনা। তাঁর সাহিত্য থেকে তৈরি সিনেমার তুল্যমূল্য আলোচনা আর সেই সূত্রেই তাঁকে আর তাঁর সৃষ্টি নিয়ে মৃণাল সেনের স্মৃতিচারণ। জীবনপঞ্জি ও সম্ভাব্য সম্পূর্ণ রচনাপঞ্জির সঙ্গে অমলেন্দুবাবুর অদেখা নানান আলোকচিত্র আর তাঁর আঁকা বইয়ের প্রচ্ছদ বাড়তি পাওনা। আর আছে রুশতী সেনের নেওয়া অপ্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকার, প্রগতি সাহিত্য প্রসঙ্গে সেখানে তিনি বলেছেন ‘রাজনৈতিক অ্যাফিলিয়েশন থাকাটা কোনো প্রগতি লেখকের বড় কথা নয়... যে লেখক মানুষের পক্ষে আছেন, জীবনের পক্ষে আছেন, তিনিই প্রগতি লেখক।’
দেশভাগের গল্প: বাংলাদেশ
সম্পাদক: সুশীল সাহা
৫০০.০০
গাঙচিল
একটি সংকলন গ্রন্থ যদি সচেতন ভাবে সংলাপ হয়ে ওঠার চেষ্টা করে, তবে প্রয়াসটিকে গুরুত্ব দেওয়া বিধেয়। সম্পাদক ‘গ্রন্থ নির্মাণ প্রসঙ্গে’ উল্লেখ করেছেন একটি অন্য সংকলনের কথা। দেবেশ রায় সম্পাদিত, সাহিত্য অকাদেমি থেকে প্রকাশিত রক্তমণির হারে। দেশভাগ এবং সেই বিপুল পরিবর্তনের যে অভিঘাত সাধারণ মানুষের জীবনে পড়েছিল, তার আখ্যানের সংকলন। কিন্তু, ‘এই সংকলনে অনুপস্থিত বাংলাদেশ। তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান এবং বাংলাদেশের লেখকরা কি দেশভাগ নিয়ে কিছুই ভাবেননি? মানবতার এমন একটি চরম অপমানের কালে তাঁরা কি হাত গুটিয়েছিলেন?’ এই জিজ্ঞাসা থেকেই শুরু বর্তমান সংকলনটির যাত্রা, জানিয়েছেন সম্পাদক। পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের বেশির ভাগের কাছেই পূর্ববঙ্গের সেই আখ্যানগুলি অপরিচিত। ফলে, তার সংকলন হয়ে ওঠে একটি সংলাপ। এ পারের অভিজ্ঞতার প্রেক্ষিতে ও পারের অনুরণন, অথবা নতুন কোনও স্বর। ‘দেশভাগ’ মানে যে শুধু উদ্বাস্তু হওয়া নয়, বরং ভিটেতে থেকে যাওয়ার পরও সব হারানোর শূন্যতার সঙ্গে সহবাস, বহু গল্পেই ধরা পড়েছে সেই যন্ত্রণার কথা। আলোচ্য গ্রন্থটি অনেক উত্তরহীন প্রশ্নেরও সংকলন।
বিস্মৃতি ছাপিয়ে
লেখক: অশোক মিত্র
৩৫০.০০
আনন্দ পাবলিশার্স
‘‘না মেনে উপায় নেই, এটাও এক ধরনের নিখাদ গণতন্ত্র। মুখ্যমন্ত্রী মহোদয়ার বাছবিচার নেই, কোনোরকম ছুঁৎমার্গ নেই, আপনি খ্যাতনামা-নাম্নী হলেই চলবে, খবরের কাগজে-দূরদর্শনের পর্দায় প্রতিদিন আপনি উল্লেখিত হলেই আর ভাবনা নেই, তিনি আপনাকে কুক্ষিগত করবেন। এ রাজ্যে বসবাস করছেন, পালাবেন কোথায়!’’— ধারালো গদ্য কথাটা বহুব্যবহৃত, কিন্তু সত্যিকারের ধারালো গদ্য সুলভ নয়। অশোক মিত্র নব্বইয়ে পৌঁছেও যথার্থ ক্ষুরধার। তাঁর নতুন সংকলনের বহু প্রবন্ধেই সেই তীব্র ভাষার শতধা বিস্তার আজও পাঠককে চমৎকৃত করে। এবং জানিয়ে দেয়, প্রখর চিন্তা ও প্রবল রাজনৈতিক বিশ্বাসই ভাষার যথার্থ তীব্রতার জনক। গত কয়েক বছরে, প্রধানত তাঁর পাক্ষিক পত্রিকা আরেক রকম-এর পাতায় তিনি যে প্রবন্ধগুলি লিখেছেন, তার সঙ্গে আরও কয়েকটি লেখা যোগ করে তৈরি হয়েছে এই সংকলন। লেখাগুলির অধিকাংশই আপাতদৃষ্টিতে স্মৃতিচর্চা। কিন্তু বিষয়বৈচিত্র, তাঁর অন্য অনেক সংকলনের মতোই এবং, মানুষটির স্বভাবের অনুসরণেই, চমকপ্রদ। প্রবল বিরোধী অবস্থান থেকে সমকালের রাজনীতি দর্শন, কয়েক দশক আগের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতার নির্যাস, বহুকাল আগে পড়া কোনও কবিতার পঙ্ক্তির সূত্র ধরে এক পশলা সাহিত্য-আলোচনা, হঠাৎ ভেসে-আসা বাল্যবন্ধুর স্মৃতি, ইউরোপে বামপন্থী প্রতিবাদের তরঙ্গে আবেগঋদ্ধ মনোযোগ— আজও, নিতান্ত অশক্ত দেহ নিয়েও, তিনি সতত সতেজ, সজাগ। দেশ ও দুনিয়ার ঘটনাবলি তাঁকে নাড়া দেয়, তিনি সেই সব ঘটনায় আপন সংবেদন জানান তাঁর লেখার মধ্যে দিয়ে। জানান নিজের মতো করে। তাঁর সেই নিজস্ব ভাবনা কারও মতে মিলতে পারে, না-ও মিলতে পারে, কিন্তু তাঁকে অগ্রাহ্য করা যায় না কখনও। অশোক মিত্র, বাস্তবিকই, বিস্মৃতি ছাপিয়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy