অগ্রন্থিত প্রবন্ধ/ নীরদচন্দ্র চৌধুরী
সম্পাদক: শ্রুত্যানন্দ ডাকুয়া
৩৫০.০০
সূত্রধর
নীরদচন্দ্র চৌধুরী বাঙালি ভদ্রলোক-সংস্কৃতির নানা ঠাট তাঁর চলনে-বলনে-লিখনে দাপটের সঙ্গে প্রকাশ করতেন। তিনি ‘জাতীয়তাবাদী’ ছিলেন না, ‘সাম্যবাদী’ও নন। বঙ্গসংস্কৃতির নানা অঙ্গ নিয়ে তাঁর নিজস্ব মতামত প্রখর ভাষায় প্রকাশ করতে দ্বিধা করতেন না। তাঁর দেখার চোখটি স্বভাবত স্বতন্ত্র, স্মৃতিদীপ্ত মানুষটির আত্মমর্যাদাবোধ প্রবল। আত্মমর্যাদাবোধ অনেক সময় অন্ধ অহমিকার সীমা স্পর্শ করত। অহমিকা আত্মঘাতী সন্দেহ নেই। তবে প্রতিভার ব্যাপ্তি ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে তিনি যেমন নজরকাড়া মানুষ, তেমনই তাঁর লেখাও। সাধু ভাষার বিশিষ্ট চালটি তিনি বজায় রেখে চলতেন। তাঁর লেখাপত্রের একাধিক সংগ্রহ বাজারচলতি, তবে তাতে সম্পাদনার ছোঁয়া খুব একটা চোখে পড়ে না। আলোচ্য বইটি সে অভাব পূর্ণ করবে। নীরদচন্দ্র আড্ডাবাজ বাঙালির মতো সচল মনের অধিকারী ছিলেন। নানা বিচিত্র বিষয়ে তাঁর মন ও কলম চলাচল করত। সত্যজিতের সিধুজ্যাঠার মতো তিনি কোষগ্রন্থসদৃশ মানুষ। যুদ্ধের নতুন পদ্ধতি, নৌবল, ইসলামের প্রথম যুগের চিত্রকলা, বাংলা সামাজিক উপন্যাস— রকমারি বিষয় নিয়ে লিখতে পড়তে ভালবাসতেন। সমসাময়িক সাহিত্যসংস্কৃতি নিয়ে ‘শনিবারের চিঠি’র প্রসঙ্গকথায় মোক্ষম ফুট কাটতেন তিনি। নিজের সাহিত্যবোধ নিয়ে উঁচকপালেপনার শেষ ছিল না বলেই অন্যদের কচুকাটা করতেন নির্দ্বিধায়। ‘নব্য সাহিত্যিকদের অকারণে বিদ্রোহ ও গণ্ডগোল পাকাইয়া তুলিবার বাতিক দেখিয়া মনে হয় ইঁহাদিগকে এক উৎকট Moral ও intellectual sadism পাইয়া বসিয়াছে। ইঁহাদের উপন্যাসে ও গল্পে নায়ক-নায়িকারা কেন যে হাসে, কেন যে কাঁদে, কেন যে এত ঝগড়া করে তাহা বুঝিবার জো নাই।’ নীরদচন্দ্রের লেখাগুলি শ্রুত্যানন্দ শুধু সংকলিত করেননি। ‘প্রাককথন’ ও ‘প্রবন্ধ-পরিচয়’ অংশে তথ্য-বিশ্লেষণ সহযোগে এ কালের পাঠকদের নীরদচন্দ্রকে বোঝার ‘জো’ করে দিয়েছেন। সম্পাদক খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন নীরদচন্দ্রের সাহিত্যভাবনা সমকালীন বিতর্ককে স্পর্শ করেছিল। সবুজ পত্র, কল্লোল বাংলা সাহিত্যে যে ঝোঁকগুলিকে বড় করে তুলতে চাইছিল শনিবারের চিঠি তার থেকে ভিন্নতর ঝোঁকের অভিমুখী। নীরদচন্দ্র শনিবারের চিঠির অন্যতম রসদদার। নীরদবাবুর বাংলা লেখা সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত। তাঁর লেখায় তথ্যনিষ্ঠতা ও সরসতা মিলেমিশে যায়। পড়তে ভাল লাগে।
কাহিনী পঁচিশ
সম্পাদক: গোপাল দাস
৩০০.০০
মিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স
আলোচ্য বইটির ভূমিকায় জানানো হয়েছে, ছোটগল্প প্রকাশের নিজস্ব কোনও পত্রিকা ছিল না। ভারতী বা হিতবাদী-র মতো মাসিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় আর পাঁচ রকম লেখার সঙ্গে ছোটগল্প ছাপা হত। প্রবাসী-তে ছোটগল্প প্রতিযোগিতার আয়োজন হত নিয়মিত। একসময় ছোটগল্পের সমাদরের কথা ভেবেই গল্পলহরী থেকে শুরু করে গল্পভারতী নামে পত্রিকা প্রকাশিত হয়েছে। শৈলেন্দ্রকৃষ্ণ লাহা এক সময় ছোটগল্প নামে পত্রিকা বার করেছেন, যাতে পরশুরাম থেকে কল্লোল-এর লেখকরা গল্প লিখেছেন। ঠিক এই রকমই ১৯৩১-’৩২ সালে ‘কথা ও কাহিনী সিরিজ’ও প্রকাশিত হয়। যেখানে সপ্তাহান্তে এক জন লেখকের একটি করে গল্প প্রকাশিত হত। সম্পাদক হিসেবে প্রচ্ছদে নাম থাকত কিরণলেখা দেবীর। গোপাল দাস তাঁর একক প্রচেষ্টায় নিরলস অনুসন্ধানে সংগ্রহ করেছেন এই গল্পমালার সতেরোটি পুস্তিকা। সেখান থেকে মোট পঁচিশটা গল্প উদ্ধার করে সাজানো হয়েছে এই সংকলনে। সংকলিত হয়েছে শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আসার আশায়’, প্রেমাঙ্কুর আতর্থীর ‘বাণ্’, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘রাইকমল’, শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের ‘জোড়-মানিক’, ‘ঝুমরু’, প্রেমেন্দ্র মিত্রর ‘দেখা হল পথ চলিতে’, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘মৌরীফুল’, ‘নাস্তিক’-এর মতো আরও অনেক গল্প। পরিশিষ্টে সংকলিত হয়েছে গল্পগুলির মধ্যে যেগুলির রচনার প্রাসঙ্গিক সূত্র চিঠিপত্র ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছে, সেগুলি এবং কিছু লেখকের বিস্তারিত পরিচিতি।
কিছু মুহূর্ত কিছু আশ্রয়
লেখক: রুশতী সেন
২৫০.০০
এবং মুশায়েরা
স্বামী রণজিৎ সিংহের সঙ্গে জীবনযাপনের স্মৃতি রোমন্থন মাধুরী সিংহের যে বইটিতে— পাগল নিয়ে ঘরকন্না, সেটির পাঠ-প্রতিক্রিয়ায় রুশতী সেন লিখছেন ‘এই রোমন্থন থেকে যে প্রশ্ন পাঠক বানাতে পারেন, সেখানে বশ্যতা কিংবা প্রতিরোধের চেয়ে অনেক বেশি আছে মমতা। সেখানে অবশ্যই স্বাধীনতার থেকে বন্ধনের অনুপাত বেশি। অথচ সে বন্ধন এতটাই আনন্দের যে তাকে বন্ধন বলে মানতে কোনো দ্বিধা সংকোচ নেই।’ কলেজের শিক্ষক ছিলেন মাধুরী, তাঁর বইখানি বাহির কিংবা আর্থিক স্বাবলম্বনের সঙ্গে মেয়েদের স্বাধীনতার প্রশ্নটিও গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে রুশতীর লেখনীতে: ‘অন্দর আর বাহিরকে একই সঙ্গে বহন করবার টানাপোড়েনে তাঁরা কতখানি স্বাধীন?’ রেখা চট্টোপাধ্যায় অণিমা দাশগুপ্ত কাকলি রায় বা এরকম আরও বেশ কিছু স্মৃতিকথার আলোচনা... মেয়েদের এই অকপট আত্মকথনে সামাজিক, অর্থনৈতিক, এমনকী রাজনৈতিক ইতিহাসের বিস্তর উপাদান খুঁজে আনেন লেখক: ‘ব্যক্তের বিন্যাসে তো বটেই, অব্যক্তের পরত খুললেও তেমন জরুরি উপাদানের হদিস মেলে।’ স্মৃতিকথার পাশাপাশি কবিতা-গল্প-উপন্যাস-প্রবন্ধেরও পাঠ-প্রতিক্রিয়া এ-বইয়ে, একই সঙ্গে থিয়েটার আর ফিল্মেরও। রসাস্বাদী গদ্যে অভাবিত-কে পেশ ক’রে পাঠকের ভাবনার পরিসরকে যেমন বিস্তৃত করেছেন, তেমনই সাহিত্য-শিল্প নিয়ে তৈরি করেছেন বিকল্প পড়া বা বিকল্প দেখার পরিসর। সত্যজিতের ‘অপুর সংসার’-এ অপু-অপর্ণার সংলাপবিহীন হাসির মুহূর্তটির সবচেয়ে বেশি প্রেমের মুহূর্ত হয়ে-ওঠার অনুষঙ্গে তিনি তুলে আনেন হালফিলের ‘আসা যাওয়ার মাঝে’ ছবিটির কথা: ‘সাড়ে-পাঁচ দশক পরে এমন নীরবতায় আস্থা রাখার সাহস কেমন করে পেলেন পরিচালক আদিত্য বিক্রম সেনগুপ্ত?... একে-অন্যকে ছুঁয়ে বসে থাকার ব্যঞ্জনা কেমন করে মনে এল একুশ শতকের পরিচালকের?’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy