উনিশ শতক চর্চা
লেখক: অভ্র ঘোষ
২৫০.০০
অক্ষর প্রকাশনী
এ দেশের জাতপাতের বিন্যাস, ধর্মসম্প্রদায়ের ভিত্তি, জনজাতির বিস্তার মেনে তবেই ভারতীয় জাতীয়তার বিশ্লেষণ সম্ভব। এই সূত্রটিই যেন অভ্র ঘোষের উনিশ শতকের সমাজতাত্ত্বিক চর্চায় অবধারিত হয়ে উঠেছে, একমাত্রিক বিশ্লেষণের পথে না হেঁটে তিনি তাঁর নানাবিধ নিরীক্ষণে এর জটিলতার ধারণাটিকে বুনে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন নিজের বইটিতে। যেমন রামমোহনের আন্তর্জাতিকতার বোধ সম্পর্কে লিখেছেন যে ‘তাঁর আন্তর্জাতিকতার ধারণা পাশ্চাত্য প্রেরিত নয়। তবে... হিন্দুধর্মে যে মালিন্য ও অন্ধ লোকাচারের শাসন দেখেছিলেন, তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য পশ্চিমের সাহায্য ছাড়া গত্যন্তর নেই— এরকম এক ধারণার বশবর্তী হয়েই তিনি ব্রিটিশ শাসনকে আবাহন করেছিলেন।’ ইতিহাসের এই দ্বান্দ্বিকতাই এ বইয়ের প্রবন্ধগুলির নির্ভর, তাতে বিদ্যাসাগর, প্যারীচাঁদ মিত্র, অক্ষয়কুমার দত্ত, রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী থেকে বিতর্কিত জাতীয় সংগীত বন্দে মাতরম্— সব কিছুই ঠাঁই পেয়েছে। সূচনাকথা-য় খেয়ালও করিয়ে দিয়েছেন লেখক: ‘উনিশ শতক বাঙালির আধুনিকতার আঁতুড়ঘর। দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, ঝগড়া ভালোবাসা, মতান্তর-মনান্তর তাতে থাকবেই। সেটাই স্বভাবের স্বাভাবিক ধর্ম।’
রিটন বাই সেলিম-জাভেদ/ দ্য স্টোরি অব হিন্দি সিনেমাজ গ্রেটেস্ট স্ক্রিনরাইটার্স
লেখক: দীপ্তকীর্তি চৌধুরী
মূল্য: ৩৯৯.০০
প্রকাশক: পেঙ্গুইন বুকস
১৯৭১ থেকে ১৯৮৭ অবধি, একদা বম্বের (এখন মুম্বই) হিন্দি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে একের পর এক যে সব ‘সুপার হিট’ সিনেমা তৈরি হত, সে সবের কাহিনি কিংবা চিত্রনাট্য লিখতেন একসঙ্গে দু’জন। সেলিম খান আর জাভেদ আখতার। আমরা তো আর আঁতুরঘরের খবর রাখি না, তাই জানতেও পারি না সেলিম-জাভেদের চিত্রনাট্যের গুণে কত অভিনেতা-অভিনেত্রী তারকা হয়ে উঠেছেন, কত পরিচালক-প্রযোজকের ছবি বাণিজ্যিক সফলতার মুখ দেখেছে। ’৭১-এ ‘হাথী মেরে সাথী’র রাজেশ খন্না, ’৭২-এ ‘সীতা আউর গীতা’র হেমা মালিনী, ’৭৩-এ ‘ইয়াদোঁ কী বারাত’-এর ধর্মেন্দ্র; আর সেই একই বছরে জঞ্জির থেকে দিওয়ার-শোলে-ত্রিশূল হয়ে ডন-কালা পাত্থর পেরিয়ে শক্তি (’৮২) অবধি অমিতাভ বচ্চনের ‘অ্যাংগ্রি ইয়ং ম্যান’ ইমেজের জন্মদাতাই ওই দুই কাহিনিকার। এমনকী ’৮৭-তে ‘মিঃ ইন্ডিয়া’তে অনিল কপূরকে তারকা বানানো পর্যন্ত জুটি বজায় ছিল সেলিম-জাভেদের, তার পর ভেঙে যায়। বেঙ্গালুরুর বাঙালি লেখক দীপ্তকীর্তি এত চমৎকার লিখেছেন এই জুটির গড়া-ভাঙার বৃত্তান্ত, হাতে নিলে না শেষ করে ছাড়া যায় না। রসিক পাঠক, সমাজতাত্ত্বিক— সকলেরই অবশ্যপাঠ্য। সত্তর দশকের দুর্লভ কিছু ছবি ও পোস্টারও আছে।
ইন পারসিউট অব ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট/ এসেজ ফর মানবী মজুমদার
সম্পাদক: দয়াবতী রায় ও শ্রীময়ী ঘোষ
মূল্য: ৩০০.০০
পূর্বালোক পাবলিকেশন
পণ্ডিত মানুষ দুর্লভ। প্রচারবিমুখ, অকৃপণ পণ্ডিত খুঁজে পাওয়া আরওই দুঃসাধ্য। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক-গবেষক মানবী মজুমদার বিরল ব্যক্তিত্ব, তাঁর সম্মানে এই প্রবন্ধ সংকলন। প্রান্তবাসী মানুষের জীবনকেও উন্নয়ন স্পর্শ করছে কি না, নানা অনুসন্ধানের কেন্দ্রে সেই প্রশ্নকে রেখেছেন প্রবন্ধকাররা। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় গ্রামের মানুষ কেন সে ভাবে যোগ দিতে পারলেন না, লিখছেন প্রাক্তন আধিকারিক দিলীপ ঘোষ। পঞ্চায়েতে আসন দিয়ে মেয়েদের সক্ষমতা বাড়ানো গেল কিনা, খুঁজেছেন দয়াবতী রায়। শিক্ষার জন্য কেন মালদহের শিশুদের যেতে হয় কেরলে, কেন প্রাইভেট টিউশন আবশ্যক মনে করছেন অভিভাবকেরা, তা নিয়ে লিখেছেন অশোকেন্দু সেনগুপ্ত এবং জয়িতা দে। স্কুলশিক্ষার মূল্যায়ন ও উন্নয়ন বিষয়ে মূলস্রোতের বিশেষজ্ঞদের থেকে মানবীদেবীর অবস্থানে পার্থক্য কোথায়, দেখিয়েছেন রাহুল মুখোপাধ্যায়। দুর্গাপুরের অসংগঠিত শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা নিয়ে লিখেছেন শ্রীময়ী ঘোষ। পরিযায়ী (পলাতক) শিশু তথা শিশুশ্রমিকদের নিয়ে লিখেছেন সুপ্রিয়া রায়চৌধুরী। গোড়ায় অচিন চক্রবর্তীর প্রবন্ধটি সংকলনের অবস্থানটি নির্দিষ্ট করছে। লেখকেরা মানবীদেবীর সহকর্মী বা ছাত্র, অনুন্নয়ন নিয়ে তাঁর উদ্বেগ এই লেখকদের মধ্যে চারিয়ে গিয়েছে।
স্মৃতি ও কৃষ্টি
লেখক: বিশ্বজিৎ রায়
মূল্য: ২০০.০০
কলিকাতা লেটারপ্রেস
প্রাবন্ধিক হিসেবে বিশ্বজিৎ রায় ইতিমধ্যে খ্যাতিমান। সেই সব অ্যাকাডেমিক লেখার তুলনায় আলোচ্য বইটির অন্তত অর্ধেক অপেক্ষাকৃত লঘু চালে লেখা। কিন্তু, সেই নিরিখে বইটি বিশিষ্টতা দাবি করবে না, কারণ লেখক দুই কলমে লেখেন— তাঁর হালকা চালে লেখা বইয়ের সংখ্যাও একাধিক।
কাছাকাছি সময়ে প্রকাশিত ‘ইস্কুল গাথা’-র সঙ্গে ‘স্মৃতি ও কৃষ্টি’ একটি অন্য কারণে বিশিষ্ট। ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হওয়ার আগে এই বইয়ের বেশ কয়েকটি লেখা ফেসবুকের দেওয়ালে জনসমক্ষে এসেছে। সোশ্যাল মিডিয়া ক্রমেই বাংলায় লেখালেখির বিকল্প পরিসর হয়ে উঠছে। সিরিয়াস লেখকের কাছেও পরিসরটি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে— লেখা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে পাওয়া পাঠক-প্রতিক্রিয়া কী ভাবে লেখককে প্রভাবিত করে, লেখায় নতুন মোড়, নতুন মোচড়় নিয়ে আসতে পারে, সেটা তাৎপর্যপূর্ণ প্রশ্ন বইকি।
আলোচ্য বইটির প্রথমাংশ স্মৃতির। ব্যক্তির স্মৃতি, সময়েরও। সমাজেরও। কিন্তু, কোনও বড় গল্পে নয়, সময়ের কোনও সামাজিক-রাজনৈতিক ধারাভাষ্যে নয়, এই স্মৃতি গাঁথা রয়েছে ব্যক্তিগত সুখ-দুঃখ, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, মনখারাপ-ভাল লাগায়। আশির দশকের পুরুলিয়া, সেখানকার এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের দৈনন্দিনতা, এবং সেই অবকাশেই বেড়ে ওঠা এক শিশু-কিশোর— স্মৃতির উপাদান এগুলোই। একটা অচল ঘড়ি, বহু দরজার ছোট-বড় বহু তালা, বাবা যদি মনের ভুলে ট্রেনের টিকিট হারিয়ে ফেলে, তবে কী হবে নিয়ে উদ্বেগ, একটা কুয়োকে কেন্দ্র করে বাড়িওয়ালা-ভাড়াটের সম্পর্কের উচ্চাবচতার খুব অনুচ্চ স্বরে প্রকাশ— এই সব ব্যক্তিগত গল্প বলেছেন বিশ্বজিৎ।
গল্পগুলোকে জুড়ে গেলেই চোখের সামনে আশির দশক। বাঙালির ব্যক্তিগত ইতিহাস। অথবা সেই ইতিহাসের এক খণ্ড। আরও খণ্ড লিখবেন কেউ। আজ অথবা কাল। সেগুলোকে জুড়তে জু়ড়তেই হয়তো পাওয়া যাবে সমগ্র। বিভিন্ন তলে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাস। প্রায় সমসময়ে, কিন্তু ধরা যাক কলকাতা শহরে, যে শিশুটি বড় হয়ে উঠছিল, তার গল্প কোথায় আলাদা, কোথায় সেই পুরুলিয়ার শিশুর সঙ্গে মিলেমিশে যায়— জানতে ইচ্ছে হয়। অন্য কারও ফেসবুকের দেওয়ালে হয়তো সেই প্রশ্নের উত্তর লেখা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ার পরিসরে যে সংলাপ চলছে, চলতে পারে, বিশ্বজিতের লেখাগুলি তার গোড়়ার দিকে থাকবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy