বুদ্ধদেব/ গৌতম বুদ্ধের সম্পূর্ণ জীবনচরিত ও উপদেশ
লেখক: সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ
মূল্য: ৩৫০.০০
প্রকাশক: অরুণা প্রকাশন
মহামহোপাধ্যায় সতীশচন্দ্র বিদ্যাভূষণ (১৮৭০-১৯২০) সংস্কৃতের পাশাপাশি বৌদ্ধ শাস্ত্রেও বিপুল পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। বাইশ বছর বুদ্ধিস্ট টেক্সট সোসাইটির সহযোগী সম্পাদক হিসাবে বহু পালি গ্রন্থ সম্পাদনা করেন তিনি। ১৮৯৭-এ সরকার তাঁকে সহকারী তিব্বতি অনুবাদকের কাজে নিয়োগ করে, এই পর্বে তিনি রায়বাহাদুর শরচ্চন্দ্র দাসের সঙ্গে তিব্বতি বৌদ্ধ ও সংস্কৃত অভিধান প্রণয়নের ভার নেন। বৌদ্ধ সাহিত্যে পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি ‘ত্রিপিটক বাগীশ্বর’ উপাধি পান। ১৩১১ বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয় তাঁর বুদ্ধদেব গ্রন্থটি। ভূমিকায় সতীশচন্দ্র লিখেছেন, ‘‘বৌদ্ধধর্মসংক্রান্ত স্থূল স্থূল বিষয়সমূহ তিন খণ্ডে বিবৃত করিব এরূপ কল্পনা করিয়া প্রথম খণ্ডে ‘বুদ্ধদেব’ এই নামে বুদ্ধের জীবনচরিত প্রকাশ করিলাম।’’ শুধু বুদ্ধজীবনী নয়, বুদ্ধের ধর্মপ্রচার, বৌদ্ধ রমণী, বুদ্ধের উপদেশ প্রণালী, সংন্যাসী সম্প্রদায়, বৌদ্ধজীবনের আদর্শ ও প্রাতিমোক্ষ নিয়েও গ্রন্থশেষের কয়েকটি অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যের সম্যক বিচারবিবেচনা সতীশচন্দ্রের রচনার বৈশিষ্ট্য। শতবর্ষ পেরিয়ে বইটি নতুন করে প্রকাশিত হওয়ায় পাঠক-গবেষকরা উপকৃত হবেন।
‘যাহার শক্তিতে আছে অনাগত যুগের পাথেয়/ সৃষ্টির যাত্রায় সেই দিতে পারে আপনার দেয়’— বঙ্কিমচন্দ্র প্রসঙ্গে এ ভাবেই শ্রদ্ধা জানান রবীন্দ্রনাথ। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায় তাঁর জন্ম আর ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল কলকাতায় তাঁর প্রয়াণ। বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন এই সাহিত্যিক ও চিন্তানায়কের মূল্যায়ন সহজ নয়। আনন্দমঠ, দেবীচৌধুরাণী, সীতারাম রচয়িতা ও ‘বন্দেমাতরম’ মন্ত্রের উদ্গাতা বলে তাঁর পরিচয়সীমা টানা হলে রামা কৈবর্তের পাশে যে তিনি হাসিম সেখকেও স্থান দিয়েছিলেন তা স্মরণে আসে না। কমলাকান্তের দপ্তর-ও তো তাঁরই লেখা। তিনি প্রগতিশীল না রক্ষণশীল, প্রথম সার্থক বাংলা উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী কি বঙ্কিমের মৌলিক লেখা না কি স্কট আছেন উৎসে, এমন সব তর্ক আজও জারি আছে। তাঁর জন্মের ১৭৫ বছর এবং দুর্গেশনন্দিনী-র ১৫০ বছর উপলক্ষে প্রকাশিত হয় আলোচ্য বইটি। নানা প্রবন্ধে অধ্যাপক ও গবেষকরা কখনও সমকালের দৃষ্টিতে, কখনও সম্পাদক, প্রশাসক বা প্রাবন্ধিক হিসেবে, কখনও বিজ্ঞানচর্চা, সাম্যভাবনা, নারীমুক্তিভাবনা, স্বদেশভাবনা, বঙ্কিমচন্দ্রের পড়াশোনার জগৎ, নব্যহিন্দুভাবনা থেকে তাঁর সাহিত্যের নানা ধারার মননশীল আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশের হাসান আজিজুল হক ও সারওয়ার জাহানের লেখায় বঙ্কিম আলোচনা অন্য মাত্রা পেয়েছে। এ বাংলা থেকে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য অলোক রায় ও সুদক্ষিণা ঘোষের লেখা।
বঙ্কিমচন্দ্র / কালের ভাবনায়
সম্পাদক: তাপস বসু
মূল্য: ৫৫০.০০
প্রকাশক: এবং মুশায়েরা
‘যাহার শক্তিতে আছে অনাগত যুগের পাথেয়/ সৃষ্টির যাত্রায় সেই দিতে পারে আপনার দেয়’— বঙ্কিমচন্দ্র প্রসঙ্গে এ ভাবেই শ্রদ্ধা জানান রবীন্দ্রনাথ। ১৮৩৮ খ্রিস্টাব্দে নৈহাটির কাঁঠালপাড়ায় তাঁর জন্ম আর ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের ৮ এপ্রিল কলকাতায় তাঁর প্রয়াণ। বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন এই সাহিত্যিক ও চিন্তানায়কের মূল্যায়ন সহজ নয়। আনন্দমঠ, দেবীচৌধুরাণী, সীতারাম রচয়িতা ও ‘বন্দেমাতরম’ মন্ত্রের উদ্গাতা বলে তাঁর পরিচয়সীমা টানা হলে রামা কৈবর্তের পাশে যে তিনি হাসিম সেখকেও স্থান দিয়েছিলেন তা স্মরণে আসে না। কমলাকান্তের দপ্তর-ও তো তাঁরই লেখা। তিনি প্রগতিশীল না রক্ষণশীল, প্রথম সার্থক বাংলা উপন্যাস দুর্গেশনন্দিনী কি বঙ্কিমের মৌলিক লেখা না কি স্কট আছেন উৎসে, এমন সব তর্ক আজও জারি আছে। তাঁর জন্মের ১৭৫ বছর এবং দুর্গেশনন্দিনী-র ১৫০ বছর উপলক্ষে প্রকাশিত হয় আলোচ্য বইটি। নানা প্রবন্ধে অধ্যাপক ও গবেষকরা কখনও সমকালের দৃষ্টিতে, কখনও সম্পাদক, প্রশাসক বা প্রাবন্ধিক হিসেবে, কখনও বিজ্ঞানচর্চা, সাম্যভাবনা, নারীমুক্তিভাবনা, স্বদেশভাবনা, বঙ্কিমচন্দ্রের পড়াশোনার জগৎ, নব্যহিন্দুভাবনা থেকে তাঁর সাহিত্যের নানা ধারার মননশীল আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশের হাসান আজিজুল হক ও সারওয়ার জাহানের লেখায় বঙ্কিম আলোচনা অন্য মাত্রা পেয়েছে। এ বাংলা থেকে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য অলোক রায় ও সুদক্ষিণা ঘোষের লেখা।
অরুণা শানবাগ / নিষ্কৃতিমৃত্যু ও ভারত
লেখক: অবন্তিকা পাল
মূল্য: ১৫০.০০
প্রকাশক: সুবর্ণরেখা
১৯৭৩ সালে মুম্বইয়ের কে ই এম হাসপাতালের নার্স অরুণা শানবাগ হাসপাতালেই ধর্ষিতা হন। অর্ধচেতন অবস্থায় একটানা প্রায় সাড়ে পনেরো ঘণ্টা পড়ে থাকা এবং গলায় কুকুরের মোটা চেন জড়ানো থাকার ফলে মস্তিষ্কে আঘাত লাগে। জীবন্মৃত অবস্থায় হাসপাতালের একটি ঘরেই থাকতে বাধ্য হন অরুণা। তাঁর আর কোথাও যাওয়ার ছিল না, ছিল না ক্ষমতাও। ১৯৯৭ সালে সাংবাদিক পিঙ্কি বিরানি প্রথমে সংবাদপত্রে একটি নিবন্ধ ও পরে একটি বই লিখে অরুণা শানবাগের মর্মান্তিক জীবনকথা সর্বসমক্ষে আনেন। ২০০৯ সালে পিঙ্কি অরুণার জন্য পরোক্ষ নিষ্কৃতিমৃত্যু প্রার্থনা করে সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন। ২০১১ সালে সর্বোচ্চ আদালত বিগত ৩৮ বছর কে ই এম হাসপাতালের যে সব কর্মী অরুণার দেখভাল করছিলেন তাঁদের ‘নিকটতম বন্ধু’র স্বীকৃতি দেয়। তাঁরা অরুণার নিষ্কৃতিমৃত্যু চাননি বলে পিঙ্কির আবেদনটি খারিজ হয়ে যায়। ২০১২ সালে ভারতের আইনমন্ত্রক পরোক্ষ নিষ্কৃতিমৃত্যুর সিদ্ধান্ত খতিয়ে দেখতে আগ্রহী হয়। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত এই সংবাদ এবং পিঙ্কি বিরানির বই তরুণ চিকিৎসক অবন্তিকা পালকে কত গভীর ভাবে স্পর্শ করেছিল তার প্রমাণ আলোচ্য বইটি। অরুণা শানবাগের ঘটনা, পিঙ্কির সাক্ষাৎকার, ধর্ম দর্শন চিকিৎসার দিক থেকে নিষ্কৃতিমৃত্যুর আলোচনা, উপশমক চিকিৎসা ও ‘জীবন্মৃতের ভাষ্য’— এ ভাবে নানা পর্যায়ে জটিল বিষয়টিকে অবন্তিকা ব্যাখ্যা করেছেন অত্যন্ত সহজ ভাবে। তথ্য ও পারিভাষিক শব্দ কোনওটিই বইটির পাঠযোগ্যতা নষ্ট করেনি। সুজাত ভদ্রের কথায় সায় দিয়ে বলাই যায়, এমন একটি বই লিখে সত্যিই ‘আমাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ করেছেন অবন্তিকা।’
বাংলার শহর / ঔপনিবেশিক পর্ব
সম্পাদক: শেখর ভৌমিক ও অরিন্দম চক্রবর্তী
মূল্য: ২৫০.০০
প্রকাশক: আশাদীপ
কলকাতার উপর ইতিহাসবিদদের নজর অনেক বেশি, আর তাই অবহেলিত থেকে গিয়েছে বাংলার ছোট শহরগুলির ইতিবৃত্ত। অথচ নানা ভ্রমণকাহিনি, স্মৃতিকথা, অন্যতর বিবরণে এমন শহরের কথা তো বড় কম জানা যায় না। কিন্তু কোন মাপকাঠিতে ‘শহর’ হিসেবে তাদের বিচার হবে, কী ভাবেই বা গড়ে উঠল সে সব শহর, কখনও কখনও কয়েক দশকের মধ্যেই আবার তলিয়ে গেল বিস্মৃতির অন্ধকারে, কখনও নানা উত্থানপতনের মধ্যে টিঁকে গেল তাদের অস্তিত্ব তা সে ভাবে খতিয়ে দেখাই হয়নি। বিজয়রাম সেনের তীর্থমঙ্গল কি ফ্রান্সিস বুকাননের সমীক্ষা-রিপোর্টে আঠেরো শতকের শহরগুলির খবর লুকিয়ে আছে। এক দিকে যেমন ভগবানগোলা, কাটোয়া-র উল্লেখ, অন্য দিকে তেমনই দিনাজপুরের বেশ কিছু জনপদ। ভারতচন্দ্র বর্ণনা দিয়েছেন বর্ধমান শহরের। ছিল ‘বাহান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির’ চন্দ্রকোণা। কোথাও বাণিজ্য কি শিক্ষার কেন্দ্র, কোথাও ধর্মস্থান। উনিশ শতকে উঠে এল আরও সব নতুন শহর, আজ তারা কোথায়? কারখানা হওয়ায় রয়ে গেল কোনওটা, হারিয়ে গেল উলা কি কুমারহট্ট-হালিশহর। উনিশ শতকের শেষ আর বিশ শতকের গোড়ার সরকারি বিবরণে স্পষ্ট, ঔপনিবেশিক মহানগর গড়ে ওঠার পাশাপাশি ছোট শহরের তেমন প্রসার হয়নি। এই সব তত্ত্ব-তথ্য ফিরে দেখার কাজ সামান্য হলেও সম্প্রতি শুরু হয়েছে। আলোচ্য সংকলনে রয়েছে এমন অনেকগুলি প্রবন্ধ। দীর্ঘ ভূমিকায় বাংলার শহর নিয়ে আলোচনার স্পষ্ট প্রেক্ষিত তৈরি করে দিয়েছেন দুই সম্পাদক। ভবিষ্যতের গবেষকদের জন্য অনেক ইঙ্গিত রয়েছে এই আলোচনায়। দক্ষিণ এশিয়ায় ‘শহর’কে কী ভাবে খুঁজতে হবে তার চমৎকার পথনির্দেশ রয়েছে নারায়ণী গুপ্তের সূচনার লেখাটিতে। অন্যান্য লেখায় উঠে এসেছে চন্দননগরের বিস্তারের কথা, শ্রীরামপুরে নগরায়ণের আদিপর্ব, রেলশহর আসানসোলের বৃত্তান্ত, এ ছাড়াও জলপাইগুড়ি, সিউড়ি, তমলুক ও ইংরেজবাজারের প্রসঙ্গ। বাদ যায়নি কলকাতাও। যোগ করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট তিনটি গ্রন্থ-সমালোচনা। সব মিলিয়ে ছোট শহর নিয়ে অনুসন্ধানের নতুন পথে এগিয়ে যাওয়ার আলোর দিশা অনেকটাই যে পাওয়া গেল তাতে সন্দেহ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy