Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
book review

Review: তাঁর ছবির ভাষায় মুগ্ধ ছিলেন সত্যজিৎও

বাহাদুর শাহ জাফর নির্বোধ ছিলেন না। তিনি নিজের ক্ষমতা জানতেন। যাঁদের দেওয়া ভাতায় তাঁর এবং পরিবারের ভরণপোষণ চলে, তাঁদের বিরোধিতার পরিণতিও জানতেন।

বিশেষ প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০২২ ০৭:১০
Share: Save:

পিয়েরো ল্যো ফু
ম্যাস্কুলাঁ ফেমিনাঁ
ভাষ্য ও ভাষান্তর: সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়
২৫০.০০ ও ২৫০.০০

বৈ-চিত্র

সত্যজিৎ রায় বলেছিলেন, “চিত্রভাষার ব্যাপারে বিপ্লবের পুরোধা হলেন জাঁ লুক গোদার।... গোদারের ছবি প্রধানত দুটি গুণে শিল্প হিসাবে সার্থক। এক হল আজকের রিয়ালিটি সম্পর্কে এক আশ্চর্য স্পষ্ট ধারণা; এবং দ্বিতীয় হল, পরস্পর আপাতবিরোধী চিত্রভাষাকে একই ছবিতে সমন্বিত করার অদ্ভুত ক্ষমতা। ভাষা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান না থাকলে এটা সম্ভব নয়।” গোদার নিয়ে বাংলা ভাষায় চলচ্চিত্রচর্চা বিরল না হলেও নিয়মিত নয়। সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ভাষ্য ও ভাষান্তরে গোদার-পাঠ আমাদের ঋদ্ধ করবে অবশ্যই। গোদারের দু’টি ছবি পিয়েরো ল্যো ফ্যু ও ম্যাস্কুলাঁ ফেমিনাঁ-র চিত্রনাট্য শুধু অনুবাদই করেননি সঞ্জয়, পাঠককে গোদারের মনন ও ভাবনার জগৎ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করে তুলেছেন। বার বার কেন তিনি ফিরে যান গোদারের কাছে, সে কথা অবশ্য সঞ্জয় জানিয়েছেন এর আগে তাঁরই করা গোদারের আর একটি চিত্রনাট্যের (টু অর থ্রি থিংস আই নো অ্যাবাউট হার) ভূমিকায়: “শিল্পের উৎকর্ষে তিনি যে সব সময় বার্গমান, বুনুয়েল বা আন্তোনিয়োনির পাশে হাঁটেন তা নয়, কিন্তু গোদার অবিস্মরণীয় কারণ সময় তাঁর বাহুলগ্না। সেই সূত্রে ছায়াছবির ইতিহাসে তিনি সবচেয়ে আর্ত প্রশ্নকারী— ধ্বনিতত্ত্ব থেকে বিপ্লব, বক্ষবন্ধনী থেকে সসেজ, মহাকাব্য থেকে কার্টুনমায়া সবই এই আধুনিক হ্যামলেটের প্রশ্নমালায় স্থান পায়।” সঞ্জয়ের একাধিক গদ্য সংযোজিত হয়েছে আলোচ্য চিত্রনাট্য দু’টির প্রারম্ভে। এগুলিকে তাঁর মুখবন্ধ বা ভূমিকা ভাবলে ভুল হবে, চলচ্চিত্রীয় নন্দনতত্ত্বের নিরিখে তিনি আন্তর্জাতিক সিনেমার দুনিয়ায় শিল্পী হিসাবে গোদারের স্থানাঙ্ক চিনিয়ে দিয়েছেন পাঠককে: “গোদার যে জন্য গোদার তা হচ্ছে একটি নিছক প্রেমের কবিতার মধ্য থেকে শিল্পকর্মটিকে তিনি ঐতিহাসিক মাত্রা দেন...।”

সুবীরকুমার পাল ইতিহাসবিদ নন। তিনি ইতিহাস-প্রিয়। সেই টানেই তিনি সম্ভবত মোগল বাদশাহ দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর এবং তাঁর বংশধরদের খোঁজ করেছেন। দ্বিতীয় বাহাদুর শাহ জাফর শুধুমাত্র মোগল সাম্রাজ্যের শেষ সম্রাট ছিলেন না। বরং বলা যায়, তাঁর ‘রাজত্ব’-এর শেষ কয়েক বছর দাঁড়িয়েছিল এক অদ্ভুত সন্ধিক্ষণে। ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহ, বিদ্রোহ দমনের পর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত থেকে সরাসরি ইংল্যান্ডের রানির হাতে ভারত শাসনের ভার চলে যাওয়া এবং একই সঙ্গে মোগল শাসনের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে দেওয়ার এক নিষ্ঠুর ব্রিটিশ প্রয়াসের স্বাক্ষর বহন করছে এই সময়কাল। এই বইতে তাঁকে যথার্থ ভাবেই এক অসহায়, সম্বলহীন সম্রাট হিসাবে দেখানো হয়েছে, যাঁর ঢাল, তরোয়াল, সেনাবাহিনী কিছুই ছিল না। অথচ, মহাবিদ্রোহে তাঁকে বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল— ‘হিন্দুস্থানের স্বাধীন বাদশাহ’।

জীবিত মোগল বংশধর
সুবীরকুমার পাল
২০০.০০

সোপান

বাহাদুর শাহ জাফর নির্বোধ ছিলেন না। তিনি নিজের ক্ষমতা জানতেন। যাঁদের দেওয়া ভাতায় তাঁর এবং পরিবারের ভরণপোষণ চলে, তাঁদের বিরোধিতার পরিণতিও জানতেন। কিন্তু নানাবিধ চাপের মুখে তিনি এক রকম বাধ্য হয়েছিলেন বিদ্রোহীদের পাঠানো নিয়োগপত্র, আদেশনামায় স্বাক্ষর করতে। বিদ্রোহ শেষ হওয়ার পর হুমায়ুনের স্মৃতিসৌধ থেকে বাদশাহকে বন্দি করার পর বিচারের নামে প্রহসন চলে। আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য তিনি যে দীর্ঘ বক্তব্য পেশ করেছিলেন, এই বইতে তার অনুবাদটি দেওয়া রয়েছে। সেখানে করুণ চিত্র ফুটে ওঠে। বিদ্রোহের নায়ক তাঁকে বানানো হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু বৃদ্ধ সম্রাট বিদ্রোহী, বিদ্রোহ দমনকারী— কারও কাছ থেকেই সামান্যতম সম্মান পাননি। নির্বাসনের সাজা ঘোষণার পর গরুর গাড়িতে চাপিয়ে বাদশাহ ও তাঁর পরিবারের কয়েক জনকে হিন্দুস্থান থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২১ জন মোগল শাহজাদাকে নিষ্ঠুর ভাবে হত্যা করা হয়। এমনকি রেঙ্গুনে দ্বিতীয় বাহাদুর শাহের মৃত্যুর পর তাঁর সমাধিতে মোগল রীতি অনুযায়ী কোনও স্থাপত্যও নির্মিত হয়নি, সমাধিস্থলটি লোকচক্ষুর আড়ালে রাখতে। বইটিতে বাদশাহের মৃত্যুর পর তাঁর বংশধরদের শোচনীয় অবস্থার কথাও বলা হয়েছে। জানা যায়, যে সামান্য ভাতা তাঁদের দেওয়া হত, সেটুকুও কালক্রমে বন্ধ হয়। পরবর্তী কালে অবশ্য প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে ইংরেজ সরকার কিছু পরিমাণ ভাতা বরাদ্দ করতে বাধ্য হয়েছিল। বংশগৌরব, ঐশ্বর্য, সম্মান সমস্ত হারিয়ে তাঁরা কখনও প্রায়-ঝুপড়িতে দিন কাটিয়েছেন, কখনও যৎসামান্য অর্থের জন্য সরকারকে অনুরোধের পর অনুরোধ জানিয়ে গিয়েছেন।

বইটি তথ্যসমৃদ্ধ, কিন্তু সুখপাঠ্য নয়। একই কথার পুনরাবৃত্তি ক্লান্ত করে, মুদ্রণপ্রমাদ পীড়াদায়ক। ফলে ইতিহাসের অবহেলিত অথচ গুরুত্বপূর্ণ পর্ব এই বইয়ে পরিসংখ্যান-সর্বস্ব বিবরণ হয়েই থেকে গেল।

অন্য বিষয়গুলি:

book review Satyajit Ray
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy