Sourced by the ABP
সত্যজিৎ রায় প্রায় লাফিয়ে উচ্চৈঃস্বরে বললেন: “ওহ্! আপনার ভাল লেগেছে ছবিটা? আপনি দেখেছেন ছবিটা?” যাঁকে বলছিলেন, তিনি সলমন রুশদি। রুশদি এসেছিলেন সত্যজিতের সঙ্গে দেখা করতে, তখন ঘরে-বাইরে’র শুটিং চলছে গ্রামবাংলায়, আশির দশক। সাক্ষাতের শুরুতে নিজের অত্যন্ত পছন্দের ছবি সোনার কেল্লা-র (১৯৭৪) কথা তুলতেই সত্যজিতের এমন উচ্ছ্বাস।
আমেরিকায় এক বার টেলুরাইড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দর্শকের সামনে সোনার কেল্লা উপস্থাপন করেছিলেন রুশদি, ছবিটি দেখানোর সুপারিশও ছিল তাঁর, আমন্ত্রিত কিউরেটর ছিলেন তিনি সে বারের উৎসবে। এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল ছবিটা যে, ধার্য দিনের বাইরেও তা দেখানোর বন্দোবস্ত করতে হয়েছিল।
এ-ছবি তাঁকে কতখানি আনন্দ দিয়েছে, তা বোঝাতে নিজের সবচেয়ে ভাল লাগার মুহূর্তটিও জানিয়েছেন রুশদি। যখন মুকুলের ‘ফ্যান্টাসি’ থেকে কেল্লাটি প্রথম বাস্তব চেহারা পায়... ভোরবেলা ট্রেনে তোপসেকে ডেকে দেখায় ফেলুদা, রুশদি লিখছেন: “শিমারিং অন্য দ্য হরাইজ়ন— ইজ় ওয়ান অব দ্য গ্রেটেস্ট স্ক্রিন মোমেন্টস ইন দিস গ্রেট ফিল্ম ডিরেক্টর’স ম্যাগনিফিশেন্ট ওভ্র।”
সোনার কেল্লা-র পঞ্চাশ পূর্তি উপলক্ষে সত্যজিৎ রায় সোসাইটি-র সহযোগিতায় এই স্মারক গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ‘ফাটাফাটি’ সংস্থা'। গ্রন্থটি তাদের ‘সোনার কেল্লা কালেক্টর’স এডিশন বক্স সেট’-এর একটি অংশ। রুশদি সংক্রান্ত বিষয়টি-সহ ছবিটিকে কেন্দ্র করে এ পর্যন্ত দেশে-বিদেশে যা যা ঘটেছে এবং ছাপা হয়েছে বই ও পত্রপত্রিকায়, তা গ্রন্থটিতে বিশদে সঙ্কলিত করেছেন সৌরভ বাগচী।
সোনার কেল্লা ৫০ স্মারক গ্রন্থ
পৃথক মূল্য অনুল্লিখিত
পরিবেশনা: ফাটাফাটি ডট কো ডট ইন,
সহযোগিতা: সোসাইটি ফর দ্য প্রিজ়ার্ভেশন অব সত্যজিৎ রায় আর্কাইভস
পাশাপাশি লিখেছেন সুতপা সেনগুপ্ত দেবরাজ গোস্বামী চন্দ্রিল ভট্টাচার্য প্রবীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সৈকত ভট্টাচার্য অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায় প্রজিতবিহারী মুখোপাধ্যায় কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ সান্যাল চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় ও শুভেন্দু দাশমুন্সি, ছবিটির বিভিন্ন পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে। জয়সলমিরের কেল্লাটির আদি ইতিহাস, সত্যজিতের উপন্যাস ও ফিল্মে কাহিনি ও কাঠামোর অদলবদল, ছবিতে সংলাপ ও সঙ্গীতের ব্যবহার, ভ্রমণ ও ‘রোড মুভি’, প্যারাসাইকোলজি ও টেলিপ্যাথি— এমন বহুবিধ বিষয় উঠে এসেছে তাঁদের তন্নিষ্ঠ কলমে। সত্যজিতের কর্মকাণ্ডের আলোকচিত্রী নিমাই ঘোষ লিখেছেন এই ছবির আউটডোর শুটিংয়ের গল্প। সঙ্গে অভিনেতা সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায় (তোপসে), কুশল চক্রবর্তী (মুকুল), শান্তনু বাগচী (অন্য মুকুল) এবং শুটিংয়ের আলোকচিত্রী তারাপদ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার।
সত্যজিতের ‘খেরোর খাতা’ নিয়ে ঋদ্ধি গোস্বামী, ও সত্যজিতের কর্মসঙ্গী পুত্র সন্দীপ রায়ের রচনা থেকে ধারণা পাওয়া যায়— পরিচালক হিসাবে তিনি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী ভাবে গড়ে তুলেছিলেন ছবিটিকে, কতখানি নির্মম হয়েছিলেন চূড়ান্ত সম্পাদনার সময়। সন্দীপ লিখছেন: “বাবা বলতেন, ‘কোনও দৃশ্য যত খেটেই তোলা হোক না কেন, সে দৃশ্য যদি ছবিকে এগোতে সাহায্য না করে তাহলে সেটা আর রাখা চলে না।’”
১৯৭৬ সালে আমেরিকার ফিল্ম অ্যাট লিঙ্কন সেন্টার-এর মুখপত্র ফিল্ম কমেন্ট-এর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায় সত্যজিৎ যে সাক্ষাৎকারটি দিয়েছিলেন, তার মধ্যে সোনার কেল্লা-র সংশ্লিষ্ট অংশটি ছাপা হয়েছে এই বইয়ে। জন হিউজের নেওয়া সেই সাক্ষাৎকারে সত্যজিৎ বলেন মুকুলের মনস্তত্ত্বের কথা। সোনার কেল্লা খুঁজতে জয়সলমিরের মতো প্রাচীন শহরে এসে খুব একা লাগে তার, গোটা ছবিতে কখনও হাসেনি সে, অথচ ছবির উপসংহারে ‘দুষ্টু লোক’কে নাস্তানাবুদ হতে দেখে তার যে দীর্ঘ উচ্চকিত হাসি, আদতে তা ‘আ রিটার্ন টু নর্মালিটি ফর দ্য বয়’, জানান সত্যজিৎ।
অনেকটা বলেছেন তাঁর প্রিয় অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়েও। সৌমিত্রর নাকি ফেলুদা চরিত্রে অভিনয় নিয়ে আশঙ্কা ছিল, সন্তোষ দত্তের ‘জটায়ু’ আর কামু মুখোপাধ্যায়ের ‘মন্দার বোস’-এর পাশে প্রচ্ছন্ন হয়ে পড়বেন তিনি। সত্যজিৎ তাঁকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন: তোমার এই কিচ্ছু না করাটাই শেষ পর্যন্ত হয়ে উঠবে ‘দ্য ভেরি স্পাইন অব দ্য ফিল্ম’। হয়েওছিল ঠিক তা-ই, সত্যজিৎ রায় বলেছেন সে কথা: ফেলুদার ‘সম্বার পার্সোনালিটি’ ছবিতে হয়ে উঠেছিল ‘আ মার্ভেলাস ফয়েল ফর দ্য সিলি রাইটার অ্যান্ড দ্য বাম্বলিং ক্রুকস’।
সত্যজিৎ, সৌমিত্র, সন্তোষ, কামু কেউই আজ আর নেই, তবে তাঁদের ছবিটি আছে। আসন্ন ডিসেম্বরে মুক্তির পঞ্চাশ বছর পেরিয়েও থেকে যাবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy