প্রতিকৃতি: কাবুলের কাছে ভেলায় নদী পার হচ্ছেন বাবর। ন্যাশনাল মিউজিয়াম ‘বাবরনামা’ থেকে নেওয়া ছবি
দ্য ইলাসট্রেটেড বাবরনামা
লেখক: সোমপ্রকাশ বর্মা
৫৯৫০.০০
রাটলেজ
মুঘল তসবিরখানায় নির্মিত অগণিত চিত্রিত গ্রন্থের মাত্র দশটি এ দেশের বিভিন্ন সংগ্রহশালায় সুরক্ষিত আছে। একেবারে আক্ষরিক অর্থে ‘সুরক্ষিত’, দেখার সুযোগ পাওয়া যায় না, প্রকাশনের ব্যবস্থা হয় না। তাই বর্ষীয়ান শিল্প-ঐতিহাসিক সোমপ্রকাশ বর্মার এই নবতম গ্রন্থটি হাতে পেয়ে উৎসাহিত হলাম। দিল্লির ন্যাশনাল মিউজিয়ামে ১৯৫৩ সালে আগ্রার মিশনারি কলেজ থেকে সংগৃহীত ‘বাবরনামা’ এর আগে ১৯৮৩ সালে মহিন্দর সিংহ রনধাওয়া প্রকাশ করেছিলেন। রঙিন ছবির সংখ্যা ছিল তখনকার রেওয়াজ অনুযায়ী খুবই সীমিত, আর বাকি ছবিগুলি খুব ছোট আকারে ও সাদা-কালোয় হওয়ায় ‘বাবরনামা’র এই প্রায় সম্পূর্ণ কপিটির উঁচু মানের ছবিগুলির ভাল করে রসাস্বাদন করা সম্ভব হয়নি। বর্মা সেই দুঃখটা ঘুচিয়েছেন, পুঁথির ১৪৫টি ছবিই তাঁর বইয়ে চমৎকার ভাবে ছাপা হয়েছে। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে আসল ছবির সম আকারে ছাপা না হওয়ায় খেদ থেকেই যায়।
এখানে উল্লেখ করা দরকার যে বাবর তাঁর মাতৃভাষা চাঘাতাই তুর্কিতে ঘটনাবহুল জীবনের খুঁটিনাটি বিবরণ রোজনামচার মতো লিখে রাখতেন। সুদূর মধ্য এশিয়ার ছোট্ট উপত্যকা-রাজ্য ফরঘানায় তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ১৪৯৪ সালে মাত্র এগারো বছর বয়সে ফরঘানার সিংহাসনে বসলেও ১৫২৬ সালে হিন্দুস্তানের গদি দখল করার মাঝে দীর্ঘ বত্রিশ বছর ভাগ্যের নানা বিপর্যয়ে, যুদ্ধবিগ্রহে কেটেছে। তবু তিনি ছিলেন শিক্ষিত ও মার্জিত, কবিতা লিখতেন, সাহিত্য চর্চা করতেন, দুর্লভ ছবি ও পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করতেন। তাঁর রোজনামচার বিবরণ থেকে রচিত আত্মজীবনী ‘ওকীয়ত-ই-বাবুরি’ একটি মূল্যবান আকরগ্রন্থ হিসাবে পরিগণিত হয়েছে। পৌত্র আকবরের সময় চাঘাতাই তুর্কি ভাষায় পড়বার লোক বেশি না থাকায় তিনি এই মহৎ গ্রন্থের ফার্সি অনুবাদ করাতে উদ্যোগী হন। ১৫৮৯-এর শেষের দিকে আবদুর রহিম খান-এ খানান সেই কাজ সম্পূর্ণ করেন। প্রথামত আকবরের নিজস্ব ব্যবহারের জন্য একটি সচিত্র পুঁথি লেখা হয়। তারপর তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী রাজপুত্রদের ও আমির-ওমরাহদের জন্য প্রতিলিপি নির্মাণ করা হয়। আকবরের নিজস্ব ব্যবহারের পুঁথিটি অখণ্ড অবস্থায় পাওয়া যায়নি। আরও যে চারটি চিত্রিত পুঁথির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, ন্যাশনাল মিউজিয়ামের কপিটি তার মধ্যে সব থেকে সম্পূর্ণ। তারিখ দেওয়া পুষ্পিকা না থাকলেও দুটি ছবিতে হিজরি সনে ইংরেজি ১৫৯৮ ও ১৫৯৯ সালের সমান তারিখ দেখে সহজেই অনুমান করা যায় যে কপিটি ১৫৯৯ সালে সম্পূর্ণ হয়েছিল। ছবির মান উৎকৃষ্ট ও অধিকাংশ ছবির নিচে শিল্পীর স্বাক্ষর কিংবা নাম লেখা আছে। এই পুঁথি এক দিকে যেমন বাবরের যাযাবর জীবনের নানান ঘাত-প্রতিঘাতের দলিল তেমনই ঘটনাবলির আট-নয় দশক পরে আকবরের দরবারে চিত্রশিল্পের মান কেমন ছিল তারও গুরুত্বপূর্ণ দলিল।
দুঃখের বিষয় বর্মা এই দুর্লভ সুযোগটি ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারেননি। ব্রিটিশ লাইব্রেরির কপি বা মস্কোর মিউজিয়াম ফর ইস্টার্ন কালচার ও বাল্টিমোরের ওয়াল্টার্স আর্ট মিউজিয়ামে ভাগ করা কপি বা আকবরের নিজস্ব কপির বিক্ষিপ্ত অংশের ছবি বা আলোয়ার মিউজিয়ামের কপিটির সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনার সুযোগটিও নেননি। কিছুটা দায়সারা ভাবে চারটি সাদাকালো ছবি দিয়ে যতটুকু লিখেছেন তাতে মন ভরে না।
গত দু’তিন দশকে বাবরনামার অনেক ছবির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। কখনও নিলামের ক্যাটালগে, কখনও প্রদর্শনীর ক্যাটালগে বা সংক্ষিপ্ত প্রবন্ধে বাবরনামার ছবি প্রকাশিত হয়েছে। তুর্কি পাণ্ডুলিপির নতুন সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছে, অন্তত দুটি ফরাসি বইয়ে ন্যাশনাল মিউজিয়ামের বাবরনামার কিছু ছবির অত্যন্ত উঁচু মানের প্রতিলিপি প্রকাশিত হয়েছে। বর্মার বইয়ে এ সবের কোনও উল্লেখ নেই।
বেশ কয়েকটি ছাপার ভুল নজরে পড়ল। বইয়ের বিন্যাস আজকালকার পেশাদারিত্বের দিনে মোটেই আকর্ষণীয় নয়। আর দাম এতটাই আকাশছোঁয়া যে গবেষক বা উৎসাহী পাঠকের ক্রয়ক্ষমতার একেবারে বাইরে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy