Advertisement
০৩ নভেম্বর ২০২৪
Quit India Movement

অন্য চোখে দেখা ‘ভারত ছাড়ো’

ভারত ছাড়ো আন্দোলন ইতিহাস বইতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির অন্যতম হিসাবে আলোচিত হয়ে থাকে।

কৌস্তুভ মণি সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০২৩ ০৭:৪১
Share: Save:

‘রিভিজ়িটিং’ বা ফিরে দেখার কথা বইটির শিরোনামেই রয়েছে। ইতিহাসের কোনও ঘটনার পুনর্মূল্যায়ন নানা ভাবে করা যেতে পারে— নতুন দৃষ্টিভঙ্গির উত্থাপনে, বা নতুন প্রশ্নের অবতারণায়, বা নতুন কোনও আঙ্গিকের বিচারে। আলোচ্য বইটিতে ভারত ছাড়ো আন্দোলন ও সেই সময়ের অন্য কিছু রাজনৈতিক ঘটনা নিয়ে ষোলোটি নিবন্ধ চল্লিশের গোড়ায় ভারতের অশান্ত পরিস্থিতির নতুন কিছু ছবি তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছে।

ভারত ছাড়ো আন্দোলন ইতিহাস বইতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শেষ পর্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচির অন্যতম হিসাবে আলোচিত হয়ে থাকে। তবে এই আলোচনায় মহাত্মা গান্ধী ও কংগ্রেসের ভূমিকাই প্রাধান্য পেয়েছে প্রাথমিক লেখাপত্রে। ১৯৪২-এর অগস্ট মাসে তৎকালীন বম্বেতে কংগ্রেসের অধিবেশনে গান্ধীর ‘ডু অর ডাই’ স্লোগান যেন হঠাৎ করেই ভারতের ব্রিটিশ-বিরোধী রাজনীতির পালে নতুন হাওয়া জুগিয়েছিল। প্রথম সারির নেতৃবর্গকে পরের দিনই গ্রেফতার করলেও আন্দোলনকে রুদ্ধ করতে পারেনি ব্রিটিশ সরকার। বরং সাধারণ মানুষের উদ্যমে তা নানা জায়গায় নানা রূপ পায়। ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত জ্ঞানেন্দ্র পান্ডের সম্পাদিত বই দি ইন্ডিয়ান নেশন ইন ১৯৪২ বেশ কিছু নতুন সম্ভাবনার কথা বলে। জাতীয়তাবাদী ইতিহাসচর্চার সীমাবদ্ধতা তথা কংগ্রেসি ভাষ্যের বাইরে এসে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সাধারণ মানুষের লড়াইয়ের ইতিহাস তুলে ধরে এই বইয়ের নিবন্ধগুলি।

রিভিজ়িটিং ১৯৪২

সম্পা: অনুরাধা কয়াল

২৫০.০০

প্রোগ্রেসিভ পাবলিশার্স

অনুরাধা কয়ালের সম্পাদিত বর্তমান বইটিতে এই ধারাতেই আঞ্চলিকতার প্রশ্নটি— বিশেষত উত্তরবঙ্গ ও উত্তর-পূর্ব ভারতের অবস্থা— বেশ গুরুত্ব সহকারে কয়েকটি নিবন্ধে আলোচিত হয়েছে। ত্রিপুরার রিয়াং বিদ্রোহ, শ্রীহট্ট ও কাছাড়ের আন্দোলন, উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলা, মেদিনীপুরের তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার এবং বিপ্লবী ও ‘গরম দল’ নিয়ে ছ’টি প্রবন্ধ নতুন তথ্য জানায় আমাদের। আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি ছাড়াও তার সীমাবদ্ধতার কথাও ফুটে উঠেছে এই নিবন্ধগুলিতে।

একই ভাবে শ্রমিক আন্দোলন নিয়ে বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে তাঁদের সীমাবদ্ধ যোগদানের প্রশ্নটি। বাংলার পাট, চা বা কয়লা শিল্পের শ্রমিকরা ভারত ছাড়ো আন্দোলনে সক্রিয় ভাবে যোগ দেননি। একই ভাবে কলকাতার ট্রাম শ্রমিকরা বা কেরানিকুলও এর থেকে দূরে ছিলেন। অন্য দিকে, উচ্চবর্ণ ও মধ্যবিত্তের কংগ্রেসি রাজনীতি বাংলার নিম্নবর্ণের মানুষের সহায়তা পায়নি।

লেখাগুলি নিয়ে বিশদে আলোচনার অবকাশ বর্তমানে নেই। তবে এটুকু বলাই যায় যে, ইতিহাসচর্চার কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১৯৪২ সালের আন্দোলন নিয়ে নতুন ভাবনা উস্কে দেবে এই বইয়ের বেশ কয়েকটি লেখা। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে আঞ্চলিক ইতিহাসের আঙ্গিক বা শ্রমিক শ্রেণির প্রত্যক্ষ যোগদান থেকে বিরত থাকার বিষয়গুলি।

লেখকের তালিকায় প্রবীণ ও নবীনের মিশেল এই বিষয়ে গবেষণার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে খানিক আভাস দেয়। লেখাগুলি, বলা বাহুল্য, সমমানের নয়। অনেক ক্ষেত্রেই আরও নিবিড় গবেষণার অবকাশ ছিল। আশা করা যায় যে তরুণ গবেষকদের হাত ধরে এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আন্দোলন আগামী দিনে আরও নতুন আঙ্গিকে আলোচিত হবে।

বইটির প্রকাশনায় যে অযত্নের ছাপ রয়েছে তা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও পীড়াদায়ক। অজস্র বানান ভুল ও ব্যাকরণগত ভ্রান্তি চোখে পড়ে। একটি প্রতিষ্ঠিত প্রকাশনা সংস্থার কাছে এটা মোটেই প্রত্যাশিত নয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Quit India Movement Freedom Fighters mahatma gandhi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE