E-Paper

‘নিজের আমি’কে ভেঙে চলা

‘ব্রেভিটি’ কী ভাবে এক জন অভিনেতার অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে, সে উদাহরণ দিতেও তিনি ফিরে যান বলরাজ অভিনীত গরম হাওয়া-য়।

—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র।

শিলাদিত্য সেন

শেষ আপডেট: ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৭:২০
Share
Save

ইরফান খান, নওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকি, মনোজ বাজপেয়ীর অভিনয়ের প্রশংসা করছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়— সুমন ঘোষের সঙ্গে এক কথোপকথনে। সুমনের নির্দেশনায় পদক্ষেপ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে সেরা অভিনেতার শিরোপা (জাতীয় পুরস্কার) পান সৌমিত্র। তিনি ভারতীয় সিনেমায় এই তিন অভিনেতাই শুধু নয়, তাঁদের পূর্ববর্তী ওম পুরি আর নাসিরউদ্দিন শাহের অভিনয়ের কথাও সবিশেষ বলছিলেন। ‘ব্রেভিটি’ শব্দটি উচ্চারণ করে সৌমিত্র বলেন, ওটাই এক জন অভিনেতার আবশ্যিক অস্ত্র। ব্যাখ্যাও করেন: “উইথ সো লিটল এফর্ট দে এক্সপ্রেস সো মেনি থিংস।”

সৌমিত্রবাবুর জন্মদিন উপলক্ষে এই কথোপকথনটি প্রথম প্রকাশ পায় বছর ছয়েক আগে দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায়। তারও বছর ছয়েক আগে ওই ইংরেজি দৈনিকেই প্রকাশিত হয়েছিল আরও একটি কথোপকথন, সুমনের সঙ্গেই, উপলক্ষ ওই একই। সেখানে তাঁর পূর্বসূরি সম্পর্কে বলার সময় সৌমিত্র নিজেকে ‘উত্তমকুমার অ্যাডমায়ারার’ হিসাবে চিহ্নিত করলেও ‘বাট আই নেভার রিয়েলি আইডলাইজ়ড হিম’, খেয়াল করিয়ে দেন। তাঁর ‘আইডল’ বলরাজ সাহনি— “হি ইজ় দ্য বেস্ট অ্যাক্টর আওয়ার কান্ট্রি হ্যাজ় প্রডিউসড’, বিশ্বাস করতেন তিনি।

‘ব্রেভিটি’ কী ভাবে এক জন অভিনেতার অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে, সে উদাহরণ দিতেও তিনি ফিরে যান বলরাজ অভিনীত গরম হাওয়া-য়। এম এস সথ্যুর ছবিটিতে জুতো তৈরি ও মেরামতির একটি কারখানায় সেলিম মির্জ়ার চরিত্রে বলরাজ এমন অনায়াস ভঙ্গিতে জুতোর কাজ করেন, মনে হয় যেন কিছুই করছেন না, ‘হি ইজ় এগজ়ার্টিং সো লিটল’, বলতে বলতে সৌমিত্র চলে আসেন ছবির শেষ দৃশ্যে।

সৌমিত্র চ্যাটার্জি: আ ফিল্ম-মেকার রিমেম্বারস

সুমন ঘোষ

৫৯৫.০০

ওম বুকস ইন্টারন্যাশনাল

সদ্য দেশভাগ পেরোনো স্বাধীনতা তখন আমাদের, বিপন্ন এক সময়ের মধ্যে দিয়ে চলেছে এ দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, তেমনই এক মুহূর্তে আগরা ছেড়ে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মির্জ়াসাহেব। টাঙ্গা থেকে যখন লাফিয়ে নামেন সেলিম ওরফে বলরাজ, প্রখর কোনও আত্মবিশ্বাস খেলা করে না তাঁর মুখে, অথচ অভিব্যক্তিতে আশ্চর্য এক সংবেদনশীলতা। নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস, ভারতের দীর্ঘ কালের ইতিহাসের উপর আস্থা লুকোনো থাকে তাতে। ফলে কোনও রকম নায়কোচিত অতিরেক ছাড়াই বলরাজের সেলিম মির্জা হয়ে ওঠেন এ দেশের ‘কমন ম্যান’, আর পাঁচ জনের মতোই এক সাধারণ নাগরিক।

সুমনের এ বইতে যেমন কথোপকথন আছে, তেমনই আছে ছবি-করিয়ে হিসাবে কী ভাবে দেখেন তিনি ‘অভিনেতা’ সৌমিত্রকে— তারকা হওয়া সত্ত্বেও ফিল্মের প্রথম ও প্রধান শর্ত মেনে তিনি যে আদ্যোপান্ত ‘পরিচালকের অভিনেতা’ (ডিরেক্টর’স অ্যাক্টর), সত্যজিতের ছবির বাইরেও বিবিধ ছবিতে বহু রকম চরিত্রে তিনি যে স্বধর্মে স্থিত থাকতেন, সে সব নিয়েই আলোচনা। নানা স্মৃতি ও কথাবার্তার ভিতর দিয়ে সৌমিত্রর শিল্পী মনটিকে চেনাতে থাকেন লেখক, তাঁর ভিতরের মানুষটিকে খুঁজে চলেন, বিশ্লেষণ বা মূল্যায়নের ঘেরাটোপে না ঢুকে, ছবি-করিয়ে বলেই বোধহয় এমন ভাবে বইটিকে সাজানোর কথা ভাবতে পেরেছেন তিনি।

সৌমিত্র এমনই এক জন অভিনেতা যিনি ক্যামেরার সামনে নিজের ‘আমি’কে ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে চলতেন। “নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে অভিনেতা তাঁর আপন অন্তঃসারের দিকেই এগিয়ে চলেন,” লিখেছেন তিনি তাঁর আত্মপরিচয় গ্রন্থে। জন কিটস-এর বলা ‘নেগেটিভ কেপেবিলিটি’র প্রসঙ্গ এনে অভিনেতার আসল জোরের জায়গাটি বোঝাতেন: অভিনেতা সে-ই হবে, যে নিজের থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে, সে যা নয় তা-ও যখন সে হয়ে উঠতে পারবে।

নজরে

বাংলা ভাষার বিচ্ছিন্নতার ইতিহাস সুদীর্ঘ— ভারতের অন্য ভাষাগুলির সঙ্গে বাংলার যতটুকু আদানপ্রদানের যোগ ছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি ছিল ইউরোপের ভাষার সঙ্গে। সাম্প্রতিক কালে যে কবিকে কেন্দ্র করে অন্যান্য ভারতীয় ভাষার সঙ্গে বাংলার যোগ তৈরি হল, তিনি শঙ্খ ঘোষ— তিনি যেমন বারংবার ছুঁতে চেয়েছেন অন্য ভাষার লেখালিখির নাড়ির স্পন্দনকে, তেমনই ভিন্ন ভাষার লেখক-পাঠক গোষ্ঠীও তাঁর কবিতা অনুবাদ করেছেন, বুঝতে চেয়েছেন তাঁর মন্দ্র স্বরের অভিব্যক্তি। শঙ্খবাবুর মৃত্যুর পরে তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে অজস্র বই, অজস্রতর পত্রিকা। কিন্তু, তার প্রায় সবটাই বাঙালি পাঠকের প্রতিক্রিয়া। আলোচ্য সঙ্কলনটিতে ধরা রয়েছে আট অ-বঙ্গভাষী কবি-পাঠকের শঙ্খ-পাঠ। তাঁরা অনেকেই বাংলা ভাষায় সিদ্ধ, কিন্তু তাঁদের পাঠের প্রিজ়মটি মূলত ভিন্ন ভাষাভাষীর। কী ভাবে তাঁদের কাছে পৌঁছেছে শঙ্খ ঘোষের স্বর, তার আটটি পাঠ শঙ্খ ঘোষ-চর্চার ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। সম্পাদক ও প্রকাশক ধন্যবাদার্হ।

আট পাঠে এক কবি: অন্য ভারতীয় ভাষার লেখকের চোখে শঙ্খ ঘোষের কবিতাসম্পা: অভীক মজুমদার

১৬০.০০

গুরুচণ্ডা৯

লেখকদের মধ্যে প্রবীণতম প্রয়াগ শুক্ল, জন্ম ১৯৪০ সালে; নবীনতম রুমুজ়, জন্ম ১৯৮১। অর্থাৎ, আরও একটি পাঠ চলে আসছে সঙ্কলনে— বেশ কয়েকটি প্রজন্মের ব্যবধানে কী ভাবে পঠিত হলেন কবি। গুজরাতি কবি সিতাংশু যশচন্দ্র লিখেছেন, “কাব্যবাণীর এই যে বাগ্মিতার থেকে আলগা হয়ে যাওয়া সংযোগ, যা তাকে মৌনতার দিকে অনায়াসে ঠেলে দেয়, তাই হল শঙ্খ ঘোষের সৃজনশীলতার মাতৃভাষা।” মালয়ালি কবি কে সচ্চিদানন্দনের মূল্যায়ন: “কবিতায় আমি মৌলিক দু’টি গুণ খুঁজি— চিত্ররূপ ও মেটাফরের তরতাজা নতুনত্ব এবং বাক্যবিন্যাস ও গঠনশৈলীর মাধ্যমে সৃষ্ট বিস্ময়, বিষয়বস্তুর মাধ্যমে নয়। এবং শঙ্খর একটি কবিতাও আমায় এই নিরিখে হতাশ করেনি।” রুমুজ় লিখেছেন, তাঁর কাশ্মীরি সত্তাকে শঙ্খ ঘোষের কবিতা— অনুবাদের মাধ্যমেই— যে ভাবে নাড়া দেয়, কেরলের বা রুশ দেশের কোনও মনকেও সে ভাবেই নাড়া দেবে— “যে শঙ্খ ঘোষকে আমি তাঁর কবিতায় পাই, তিনি সমাজের চলতি ব্যবস্থা, তার রীতিনীতিগুলির বিষয়ে দারুণ সজাগ... তাঁর কবিতায় রয়েছে বিদ্রোহের চোরা উপাদান...।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sankha Ghosh soumitra chatterjee

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।