Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

ঘরকুনো অপবাদ কাটিয়ে ভবঘুরে

তিহাসের পাতায় মালদহের অবস্থান বহু প্রাচীন কাল থেকে হলেও ঔপনিবেশিক শাসনকালেই গঠিত হয়েছিল মালদহ জেলা (১৮১৩)।

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০১৭ ০০:০৮
Share: Save:

মালদহ জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস

লেখক: সমর কুমার মিশ্র

১৫০.০০

অক্ষর প্রকাশনী

মালদহের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস অত্যন্ত গৌরবময়। ইতিহাসের পাতায় মালদহের অবস্থান বহু প্রাচীন কাল থেকে হলেও ঔপনিবেশিক শাসনকালেই গঠিত হয়েছিল মালদহ জেলা (১৮১৩)। এই জেলা জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে যথাযোগ্য ভূমিকা পালন করেছিল। এই জেলায় অসংখ্য ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, বিদ্রোহ, প্রতিবাদ, বিক্ষোভ, স্থানীয় পত্রপত্রিকায় সমালোচনা ইত্যাদি সবই হয়েছিল বিভিন্ন সময়ে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামের ধারা ও পথ নির্দেশ অনুসরণ করে। আবার বিভিন্ন সময় জাতীয় নেতৃত্বের নীতি ও মতাদর্শগত পার্থক্যের প্রভাবে এই জেলায় আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি কখনও কখনও ভিন্নতর মাত্রা অর্জন করেছিল।

বইটিতে লেখক ধারাবাহিক ভাবে ভারত ইতিহাসের কালক্রম অনুযায়ী মালদহের স্বাধীনতার কালখণ্ডকে অনুসরণ করেই এগিয়েছেন। মালদহ জেলা গঠনের প্রাসঙ্গিকতা ও প্রভাব থেকে শুরু করে জেলায় উপনিবেশবাদ বিরোধী আন্দোলন, কৃষক বিদ্রোহ, সংগ্রামশীল জাতীয়তাবাদের উন্মেষ, খিলাফত, স্বরাজ্যদল ও গাঁধী-চিত্তরঞ্জন মতভেদ, বিপ্লবী কার্যকলাপ, অসহযোগ, আইন অমান্য ও ভারত ছাড়ো আন্দোলন, জাতীয় কংগ্রেস ও স্থানীয় পত্রপত্রিকার ভূমিকার বিষয়ে বহু তথ্য, ঘটনা ও চিত্র সংবলিত এই গ্রন্থটি মালদহ জেলার স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রকৃত ইতিহাস জানতে সাহায্য করবে।

অমর্ত্যের আলোর ইশারা

লেখক: সোমালী পাণ্ডা

১০০.০০

অচিন প্রকাশনী

ব্রাহ্মসমাজের জন্য ব্রহ্মসংগীত রচনার সময় রবীন্দ্রনাথের কাছে দেবতা ভুবনেশ্বর প্রভু, প্রিয় নন। পরে যখন ‘দেবতারে প্রিয় করি’ লিখছেন, তখন তাঁর মনের গতি সহজিয়া সাধনায়, মিস্টিক ট্র্যাডিশনে। এই সূত্রটিকে প্রায় তত্ত্বে গেঁথেছেন সোমালী পাণ্ডা তাঁর ‘রুমি, রুবাইয়াৎ, রবীন্দ্রনাথ’ রচনাটিতে: ‘দেশভক্ত রবীন্দ্রনাথের যে সুর, যে মনন, যে অনুরণন তা যেন আদ্যন্ত সুফি সাধকের।’ এ রকম মৌল ভাবনাতেই নির্ভর বইটির বাকি নিবন্ধাদি। যেমন ‘শূন্য, পূর্ণ ও টেগোর সিম্ফনি’ রচনাটিতে উঠে এসেছে চার্চ মিউজিকের গাম্ভীর্য, বৌদ্ধ নির্বাণের কল্পনা ও উপনিষদের দর্শন কী ভাবে কবির প্রাণে শ্বাসবায়ুর মতো লিপ্ত থেকে তৈরি করে আলোর গান। আবার বৈচিত্রের প্রসারও বইটিতে— তিন আপাত সম্পর্কহীন বিষয় ‘ডায়াসপোরা, মিউজিক ও ফুটবল’ নিয়ে লেখা, কিংবা ‘নীল, বেগুনি, কমলা ভোরের সিম্ফনি’ বা ‘পোড়ামাটির ধ্রুপদী সঙ্গীত’। শেষেরটিতে সোমালী লিখছেন, ‘এখন ঘটনা পরম্পরায় লাল মাটি আমার মাটি হয়ে গেছে। ইচ্ছেমত তার অতুল ঐশ্বর্য প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে। বহুবার, বহুভাবে। বাঁকুড়া-পুরুলিয়ার প্রবল গ্রীষ্মে দগ্ধ চেহারা, শীতে রিক্ত রূপ, হেমন্তের ফসলের ঘ্রাণ, বসন্তে আগুন লাল বর্ণ সবই দেখেছি।’ সাহিত্য, শিল্প, জীবনপ্রবাহের নির্যাসের সঙ্গে প্রায় ধ্রুবপদের মতো সংগীত আর তার নিহিত ছন্দ-কাঠামো ঘুরেফিরে আসে সোমালীর রচনায়। ব্যক্তিগত জীবনে লেখক গানের চর্চায় নিয়ত রত বলেই কি?

অন্ধকারের আফ্রিকা/ রামনাথ বিশ্বাস

সম্পাদক: প্রসাদরঞ্জন রায়

২০০.০০

ঋত প্রকাশন

‘আমার প্রচলিত নিয়মমতে ঘুম থেকে খুব সকালে উঠলাম। দরকারী জিনিস সাইকেলের পেছনে বাঁধলাম তারপর রওয়ানা হলাম। আমাদের পথ সমুদ্র-তীর দিয়ে গিয়েছে। সমুদ্র-তীর আমাদের দেশের মত নয়। হঠাৎ যেন এক খণ্ড ভূমি সমুদ্র ভেদ ক’রে উঠেই আকাশ ছুঁইতে চলেছে। এতে আমাদের অসুবিধা মোটেই হ’ল না। ...আমরা যে পথে চলছিলাম তাকে মোটর-পথ বলা যেতে পারে না, কারণ অনেক স্থানেই পথ ভাংগা এবং বড় বড় পাথর পাহাড়ের গা হ’তে খসে পথের উপর পড়ে রয়েছিল। মাইল দুই চলার পর আর সাইকেলে বসতে পারলাম না। পায়ে হেঁটেই চলতে লাগলাম। ঠিক করেছিলাম, সকালে তিন ঘণ্টা আর বিকালে তিন ঘণ্টা চলে যতটুকু পথ চলা যায় ততটুকুই চলব। সুখের বিষয় প্রথম দিনই সন্ধ্যার সময় আমরা একটি নিগ্রো গ্রামে পৌছেছিলাম।’ ভূপর্যটক রামনাথ বিশ্বাস (১৮৯৪-১৯৫৫) লিখেছেন তাঁর ‘অন্ধকারের আফ্রিকা’ বইতে। বাঙালির ‘ঘরকুনো’ অপবাদ কাটিয়ে তিনি নিজের ‘ভবঘুরে’ নামেই গর্ব অনুভব করতেন। বইতে তাঁর ভ্রমণের মাত্রাও অকল্পনীয়— যাত্রা শুরু কেনিয়ার মোম্বাসা বন্দরে, সেখান থেকে পদব্রজে বা সাইকেলে টাংগা, টাংগা থেকে ট্রেনে কুল্-মানজার (কিলিমাঞ্জারো), তার পর টাংগা ফিরে জাহাজে জান্‌জিবার, জান্‌জিবার থেকে জাহাজে দার-এস-সালাম, সেখান থেকে ট্রেনে ডুডুমা, সাইকেলে টাবোরা, টাবোরা থেকে সিনা সিনইয়াঙ্গা, তার পর মোয়ান্‌জা, আবার টাবোরা হয়ে ডুডুমা, ডুডুমা থেকে ইরিংগা, ইরিংগা থেকে মবিয়া, সেখান থেকে চুনিয়া স্বর্ণ-খনি, আবার মবিয়া হয়ে মায়া, মায়া থেকে নায়াসা হ্রদে জাহাজে নায়াসাল্যান্ডের পোর্ট জনস্টন, তার পরে জুম্বা হয়ে লিম্বি, লিম্বি থেকে পোর্ট হেরাল্ড হয়ে মোজাম্বিক-এর বেরা বন্দর, সব শেষে ট্রেনে রোডেশিয়ার ইমতালি। এই পর্যায়ে তিনি প্রায় ৭,০০০ কিমি অতিক্রম করেছিলেন ৬ মাসে। তবে তিনি সর্বমোট ৮৭,০০০ মাইল ভ্রমণ করেছেন— ৫৩,০০০ মাইল সাইকেলে, ৭,০০০ মাইল পদব্রজে, ২০০০ মাইল ট্রেনে এবং ২৫,০০০ মাইল জাহাজে। সম্পাদক দীর্ঘ ভূমিকায় লেখকের পরিচিতি দিয়েছেন, পরিশিষ্টে আছে টীকা। ১৯৫০ সালে প্রথম প্রকাশিত বইটি এত দিনে সুমুদ্রিত সংস্করণে হাতে এল।

বাংলা মঞ্চ ও ছায়াছবিতে নীরব শিল্পী সন্তোষ সিংহ

সম্পাদক: কুন্তল মুখোপাধ্যায় ও শম্ভু সিংহ

২০০.০০

পরি: প্রিয়া বুক হাউস

‘আমার এক্সপ্রেশানের এত প্রশংসা করছিলেন তার সবটুকুই আমার ওই সন্তোষদার কাছ থেকে পাওয়া। তিনি আমাকে দিনের পর দিন অসীম ধৈর্যের সঙ্গে শিখিয়েছেন ওইসব ফেসিয়াল এক্সপ্রেশান। আমি তাঁকে গুরু বলে স্বীকার করি, শ্রদ্ধা করি, সম্মান করি। আমাদের এই লাইনে এখন ওঁর মতো শিক্ষক আর কেউ আছেন বলে মনে করি না। ’ উত্তমকুমার বলেছিলেন সন্তোষ সিংহ সম্পর্কে, লেখাটি রবি বসুর। এ রকম আরও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ লেখার সমাহারে সন্তোষ সিংহের (১৮৯৯-১৯৮২) মতো বঙ্গরঙ্গমঞ্চ ও ছায়াছবির এক প্রচারবিমুখ শিল্পীর কাজ ও জীবন গ্রন্থাকারে প্রকাশ পেল। আত্মবিস্মৃত বাঙালির কাছে বড় পাওনা। সন্তোষবাবুর নিজের লেখা ‘অভিনয়-জীবনের শৈশবে’ আর ‘পেশাদার রঙ্গালয়: কিছু স্মৃতি’ আরও ঋদ্ধ করেছে বইটিকে, রচনা দু’টির ভিতর দিয়ে উঠে এসেছে বাঙালির অভিনয়জীবনের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস, একই সঙ্গে রঙ্গমঞ্চেরও। সে সময়ের নাট্যকার অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় নাট্যশিক্ষক হিসাবেও ছিলেন সুবিদিত। সন্তোষ সিংহ লিখেছেন, ‘‘আমায় তৈরী করেছিলেন অপরেশচন্দ্র। ওই যে আগে বলেছি ‘গাধা পিটিয়ে ঘোড়া’, আমাকে ঠিক তেমনি করে পিটিয়ে পিটিয়ে তৈরী করেছিলেন তিনি।’’ দেবনারায়ণ গুপ্ত, গৌরাঙ্গ প্রসাদ ঘোষ, প্রভাতকুমার দাস প্রমুখের রচনায় সন্তোষবাবুর অভিনয়-জীবনের নির্মাণ। আছে স্ত্রী নির্মলাদেবী ও পুত্র শম্ভুনাথের স্মৃতিকথন, অরুণেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারে। সত্যজিতের ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’-এ একসঙ্গে অভিনয় করার স্মৃতিতে ফিরতে-ফিরতে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মন্তব্য: ‘অনেকে ভালো অভিনেতা হলেও অভিনয় শিক্ষাদানে সমর্থ হন না।... সন্তোষ সিংহ মহাশয়ের এই পারদর্শিতা ছিল।’ অর্ধশতক আগে তাঁর সম্পর্কে তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেন ‘বাংলাদেশের সুপ্রসিদ্ধ নাট্যশিল্পী শ্রীযুক্ত সন্তোষ সিংহ আমার অত্যন্ত সুপরিচিত।...একটা কালের তিনি শক্তিধর শিল্পী... দৃষ্টিশক্তি তাঁর বরাবরই ক্ষীণ সে ক্ষীণ দৃষ্টি— বর্তমানে প্রায় শেষ প্রান্তে এসে উপনীত হয়েছে। এই অবস্থায় দেশ ও সরকারকে তাঁর সাহায্যে অগ্রসর হয়ে আসতে হবে। এটি আমাদের জাতীয় কর্তব্য।’ সম্পাদকদ্বয় সযত্নে সাজিয়েছেন গোটা বইটিকে, দুর্লভ সব ছবি ও তথ্যপঞ্জি... সংগ্রহে রাখার মতো।

অন্য বিষয়গুলি:

Book Review Stories
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy