দ্য লাভ সং অব মায়া কে অ্যান্ড আদার স্টোরিজ
সুমা রাহা
৩৯৫.০০
অলিভ টার্টল (নিয়োগী বুকস)
গল্প মানে যে গল্পই, তা যে দীর্ঘ সংলাপ নয়, সমাজ-সংসারের উপর মন্তব্য কিংবা লম্বা স্বগতোক্তি নয়, তা যেন পাঠক ভুলতে বসেছে। সুমা রাহার এই গল্প সংকলন সেই খেদ ঘুচিয়ে দেয়। প্রত্যেকটি গল্পেরই শুরু আছে, পরিণতি আছে, আর এই দুই বিন্দুর মধ্যে চলতে চলতে চরিত্রগুলোয় পরিবর্তন আছে। দিল্লির এক তরুণী নিজের সমকামী পরিচয় খুঁজে পায়, কলকাতার এক বৃদ্ধা দীর্ঘ দাম্পত্যের পর বাড়ি বদলানোর সময়ে খুঁজে পান স্বামীর পুরনো ডায়রি, ট্যাক্সি ড্রাইভারের হাতে নিগৃহীত অভিজাত মহিলা খুঁজে পান নিজের অজানা হিংস্র সত্তাকে, যা তাঁকে এক রকমের মুক্তি দেয়। এমন ভাবেই তো আপাত-সামান্য ঘটনা জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। আবার এক একটা মোড় আসে যখন বোঝা যায়, এমনই চলবে, আর কিছু হবে না। ঘিঞ্জি বস্তির সেলসগার্ল শপিং মলে সুগন্ধী বেচে, তার স্বপ্নকে বাঁচাতে চায় চিটচিটে, ঘিনঘিনে বাস্তব থেকে, কিন্তু হেরে যায়। লেখকের পর্যবেক্ষণ তীক্ষ্ণ, কলম তরতরে, আর অন্যের চামড়ার তলায় ঢুকে পড়ার ক্ষমতা পুরোমাত্রায়। ছাত্রী-লোলুপ অধ্যাপক, নির্যাতন-লুকোনো গৃহবধূ, দারিদ্রের অভিঘাতে প্রেম-বিপ্লব গিলে বাপের বাড়ি ফেরা তরুণী, প্রত্যেকে জীবন্ত হয়ে ওঠে। গল্প শোনা, গল্প বলার যে সুখ, তার স্বাদ ফের ছুঁয়ে দেখা গেল। মোট তেরোটা গল্প, বেশ কয়েকটা মনের পিছু ছাড়ে না।
নাস্তিক পণ্ডিতের ভিটা/ অতীশ দীপংকরের পৃথিবী
সন্মাত্রানন্দ
৪৫০.০০
ধানসিড়ি
সময়ের গভীরে কোথাও আছে আপনার, আমার সকলের এক প্রতিরূপ। সেই প্রতিরূপ পাঁচ হাজার বছর আগে থাকতে পারে, থাকতে পারে পাঁচ হাজার বছর পরের পৃথিবীতেও। এই উপন্যাস পড়তে পড়তে জিজ্ঞাসু পাঠক হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, আগে মানে কী? পরে বলতেই বা কী বোঝায়? বৌদ্ধ ধারণা তাই বলে, সময়, তথা অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ কারও নিজস্ব অস্তিত্ব নেই। সে থাকে শুধু তোমার চেতনায়। আজকের কলকাতা শহরে তাই রিসার্চ স্কলার অমিতায়ুধের সঙ্গে আটশো বছর আগের নালন্দার বৌদ্ধ ভিক্ষু চাগ লোচাবার দেখা হয়ে যেতেই পারে। চাগ লোচাবা আবার তন্ত্রকুশলী স্বয়ংবিদার চুম্বনে পিছিয়ে যেতে পারেন আরও দুশো বছর আগের তিব্বতে। এই উপন্যাসের অন্যতম আকর্ষণ, সময়ের এই গোলকধাঁধা। কিন্তু সন্মাত্রানন্দ উপন্যাসের শেষে জানান, চাগ লোচাবার মতো অমিতায়ুধেরও কোনও অস্তিত্ব নেই। দু’ জনেই শাওন বসু নামে এক লেখকের কল্পনা। কল্পনা আর বাস্তবের মধ্যে কি কখনও থাকে নিরেট প্রাচীর? বেঁচে থাকার এই রক্তমাংসের জীবনও তো হতে পারে দূরাগত কোনও কল্পনা। একদা যোগাচার বৌদ্ধ দর্শন এ রকমই ভাবত।
উপন্যাসের নায়ক বিস্মৃত এক বাঙালি। দীপঙ্কর শ্রীজ্ঞান অতীশ। অলকা চট্টোপাধ্যায়ের অতীশ অ্যান্ড টিবেট বইটি অনেকাংশে এই উপন্যাসের নোঙরের কাজ করেছে। হিমালয়পথে প্রৌঢ় অতীশ যে একটি তারামূর্তি নিয়ে তিব্বতে গিয়েছিলেন, ‘ওঁ তারে তুত্তারে তুরে’-র পাশাপাশি বাংলায় ‘অতি ভালা’ বলেছিলেন, অলকাই তা প্রথম জানিয়েছিলেন। অতীশকে নিয়ে ইতিহাসাশ্রয়ী উপন্যাস, তারই মাঝে ইতিহাস-ভবিষ্যৎ সময়ের ছায়ারেখা ভেঙে দেওয়াই এই উপন্যাসকে উজ্জ্বল করেছে। একটি জিনিস অবশ্য থাকলে ভাল হত। তিব্বতের তৎকালীন ধর্মসংস্কারে অতীশের অবদান। উপন্যাস বারংবার অতীশের লেখা বোধিপথপ্রদীপ বইয়ের উল্লেখ করেছে। তিব্বতি ধর্মসংস্কৃতিতে আজও সে বইয়ের গুরুত্ব প্রবল। স্তরে স্তরে কী ভাবে সাধনপথে এগোতে হবে, সেই সন্দর্ভের নাম ‘লাম রিম’। অতীশের ওই বইটি তিব্বতি ভাষায় প্রথম লাম রিম। উপন্যাসে সে কথা নেই। তবু সময়ের প্রথাভাঙা এই উজ্জ্বল উপন্যাসকে অতীশের ঢঙেই বলতে হবে… অতি ভালা!
এক ছিলিম ফিলিম
শান্তনু চক্রবর্তী
২০০.০০
অভিযান পাবলিশার্স
স্টিভেন সোডারবার্গ-এর ‘সাইড এফেক্টস’-এ ‘স্টক মার্কেটে এক ওষুধ কোম্পানির শেয়ারের দর কমিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী কোম্পানির বাজার তেজি করার ফন্দি’ খুঁজে পেয়েছেন লেখক, লিখছেন ‘‘এভাবেই এমিলির ‘ডিপ্রেশন’ যেন এখানে একই সঙ্গে বাজার-অর্থনীতির মন্দা আর একটা লোভে-ভোগে ক্লান্ত সমাজের নৈতিক অবসাদের প্রতীক হয়ে যায়।’’ আমেরিকার স্বাধীন ছবি-করিয়েদের ছবিই শুধু নয়, ইউরোপ-সহ দুনিয়া জুড়ে ভিন্ন ভাবনার নানান ছবি নিয়ে একের পর এক রচনা বই জুড়ে। প্রতিটি লেখার পরতে-পরতে জড়িয়ে থাকে সমাজ-ব্যবচ্ছেদ। যেমন দক্ষিণ কোরিয়ার কিম কি-দুক-এর ছবি নিয়ে লেখেন, তেমনই রোমানিয়ার ছবি ‘ফোর মান্থস থ্রি উইক্স অ্যান্ড টু ডেজ’ নিয়ে লেখেন: পরিচালক ক্রিস্টিন মানগিউ ‘‘একটা অদৃশ্য, কিন্তু নিষ্ঠুর-সন্ত্রাসী পিতৃতান্ত্রিক ‘ব্যবস্থা’র অস্তিত্বটা টের পাওয়াতে থাকেন।’’ সাম্প্রতিক কূপমণ্ডূক বাংলা ‘ফিল্ম রিভিউ’-এর বাইরে সপ্রতিভ গদ্যে লেখা তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণী বইটি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy