Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

স্বাধীন মনের স্বাক্ষর

ময়না থানা এলাকায় গ্রামে গ্রামে যেতেন জলপথে। তালের ডিঙি বাইত তেরো-চোদ্দো বছরের একটি মেয়ে। ওই নেত্রী মণিকুন্তলা সেন। আর ওই বালিকা বিমলা মাইতি। বিমলার যাত্রার সেই শুরু।

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৮ ০১:০৪
Share: Save:

তেভাগা-র অগ্নিকন্যা বিমলা মাজী স্মরণগ্রন্থ

সম্পাদক: বিপ্লব মাজী ও মুক্তি মুখোপাধ্যায়

১৫০.০০

সহজপাঠ

দুর্ভিক্ষে তখন মানুষ মরছে বাংলার গ্রামে গ্রামে, তার উপর ভয়ানক ঝড়ে বিধ্বস্ত মেদিনীপুর। ত্রাণ শিবির খুলতে, কৃষকের ঘরের মেয়েদের সংগঠিত করতে জেলায় জেলায় ঘুরছেন এক কমিউনিস্ট নেত্রী। যথাসম্ভব গোপনে। ময়না থানা এলাকায় গ্রামে গ্রামে যেতেন জলপথে। তালের ডিঙি বাইত তেরো-চোদ্দো বছরের একটি মেয়ে। ওই নেত্রী মণিকুন্তলা সেন। আর ওই বালিকা বিমলা মাইতি। বিমলার যাত্রার সেই শুরু। বালবিধবার সংস্কার ত্যাগ করে কৃষক নেত্রী হয়ে উঠলেন, তেভাগা আন্দোলনে মেয়েদের সংগঠিত করে লড়াই করলেন পুলিশ-জোতদারের সঙ্গে। হাতে ঝাঁটা আর কোঁচড়ে বালির সঙ্গে মেশানো নুন-লঙ্কাগুঁড়ো, এই ছিল মেয়েদের অস্ত্র। তাঁর নেতৃত্বে চিরকালীন প্রথা ভেঙে মেয়েরা ধান কেটে, ঝাড়াই করে গোলাবন্দি করতে লাগল। বিমলার মাথার দাম ঘোষিত হয়েছিল পাঁচ হাজার টাকা। মণিকুন্তলার সঙ্গে বিমলার ফের দেখা হয়েছিল মেদিনীপুর জেলে। ততদিনে বিয়ে করেছেন অনন্ত মাজীকে, সঙ্গে দেড় বছরের পুত্র। পরে এই বিমলাই তেভাগার দাবি নিয়ে আলোচনায় বসেন মুখ্যমন্ত্রী সুরাওয়ার্দির সঙ্গে।

স্মরণগ্রন্থটি থেকে তেভাগা আন্দোলনের সংগঠনে বিমলার ভূমিকা বোঝা যায়। কিন্তু কমিউনিস্ট আন্দোলন কী করে তাঁর মতো প্রথম শ্রেণির নেত্রীকে ঘরবন্দি, অপ্রাসঙ্গিক করে দিল, তার ইতিহাস জানাও জরুরি। মণিকুন্তলা, বিমলার রাজনীতি থেকে সরে আসার গল্পটা জেন্ডার-রাজনীতির পাঠ।

পরাধীন ভারতে পরাধীন নারী/ ভ্রমণকথায় স্বদেশ ও সমাজচেতনা

লেখক: সোনালি মুখোপাধ্যায়

৪৫০.০০

গাঙচিল

সামাজিক বিধান মেনে গৃহে আবর্তিত না থেকে উপযুক্ত স্বামীর সঙ্গে উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ও বিশ শতকের প্রথমার্ধে স্বদেশ ও প্রবাসের ভ্রমণ-অভিজ্ঞতা লিখেছিলেন এমন চোদ্দো জন বাঙালি নারীর লেখার আলোচনা এ-বইয়ের আটটি অধ্যায়ে। কৃষ্ণভাবিনী দাসের ইংলণ্ডে বঙ্গমহিলা-র প্রকাশক সত্যপ্রসাদ সর্বাধিকারীর উক্তি: ‘তিনি একটি স্বাধীন জাতির স্বাধীনতার নিদান উপাদান সকল এক-একটি করিয়া চক্ষের উপর ধরিয়া দিয়াছেন।’ সুস্থ, পুষ্ট মথুরাবাসীর সঙ্গে বাঙালির বিবাহ-পরিকল্পনার মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রমাণ রেখেছেন প্রসন্নময়ী দেবী তাঁর আর্য্যাবর্ত্ত গ্রন্থে। যবনভৃত্যদের প্রতি সন্দেহপ্রবণতার জন্য আত্মসমালোচনায় স্পষ্ট তিনি। অবলা বসুর কথায়, ‘দেশে যাহা কিছু করিয়াছি তাহাও বিদেশ ভ্রমণের অভিজ্ঞতারই ফল।’ নেপালে বঙ্গনারী-তে নেপালের দাসপ্রথার প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছেন হেমলতা সরকার। প্রথম শ্রেণিতে ভ্রমণ না-করা শরৎরেণু দেবী জাহাজ কর্তৃপক্ষের ঔদাসীন্য, শ্বেতাঙ্গপ্রীতির অভিজ্ঞতা পারস্যে বঙ্গ রমণী-তে উল্লেখ করেছেন। আর্থিক সম্পন্নতা নয়, মনের তাগিদেই জাতির বিকাশ সম্ভব, ভ্রমণলব্ধ এই উপলব্ধি সরোজনলিনী দত্তের জাপানে বঙ্গনারী-তে। হরিপ্রভা তাকেদা-র বঙ্গমহিলার জাপানযাত্রা-ও এই বইয়ে আলোচিত। এমন শ্রমনিষ্ঠ বিশ্লেষণ, যেখানে মেয়েদের দেখার চোখ এতখানি গুরুত্ব পেয়েছে সেখানে বইয়ের নামকরণে খটকা থেকেই গেল। সময়টা ‘পরাধীন ভারত’ হলেও এই মেয়েরা কিন্তু তাঁদের লেখায় স্বাধীন মনের স্বাক্ষরই রেখে গিয়েছেন।

রবীন্দ্রনাথ ও প্রযুক্তি

লেখক: সুব্রত ঘোষ

৩০০.০০

সিগনেট প্রেস

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবি-পরিচিতি এত বড় যে তার আড়ালে ঢাকা পড়ে যায় তাঁর রাজনীতি এবং সমাজচিন্তার ব্যাপ্তি। স্রষ্টা হিসাবে যে কোনও কবিই চিন্তাবিদ। রবীন্দ্রনাথের মতো মানুষ যে সমকালীন সমাজে নানা দিকের অভিঘাত নিয়ে ভাববেন, তা মোটেই আশ্চর্যের নয়। রবীন্দ্রনাথের জীবনকালে প্রযুক্তি আজকের মতো সর্বগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ না-হলেও তার পদধ্বনি প্রকট। সে পদচারণা কবির মনে কেমন প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছিল, তা সন্ধানে লেখক আগ্রহী। ‘মুক্তধারা’ এবং ‘রক্তকরবী’ নাটক দু’টিতে প্রযুক্তির প্রতি কবির বিদ্বেষ সাধারণ পাঠকের জানা। অথচ সামগ্রিক ভাবে বিজ্ঞানের প্রতি তিনি সশ্রদ্ধ। প্রযুক্তি বাদ দিয়ে বিজ্ঞান কি সম্ভব? প্রচলিত বিশ্বাসকে উল্টে দিয়ে লেখক এমন দাবিও করেছেন যে, প্রযুক্তি আগে, বিজ্ঞান পরে। মৌল গবেষণার চর্চাকারীদের কাছে এ দাবি কতটা সমর্থন পাবে, তা বলা যায় না। যাই হোক, ‘মুক্তধারা’ এবং ‘রক্তকরবী’ নাটকে রবীন্দ্রনাথের জীবনদর্শন কী ভাবে ফুটে উঠেছে, এবং তার ব্যাখ্যা নানা বিদ্বজ্জন কে কী ভাবে দিয়েছেন, তা সবিস্তারে আলোচনা করেছেন লেখক। তাঁর মন্তব্য: রবীন্দ্রভাষ্যে ‘বিজ্ঞান যেখানে নন্দিত বিজ্ঞান সেখানে বিজ্ঞান, বিজ্ঞান যেখানে নিন্দিত বিজ্ঞান সেখানে প্রযুক্তি।’— অথচ,
‘এমন কিছু জায়গা আছে যেখানে রবীন্দ্রনাথ সপ্রশংস— অথচ প্রযুক্তিই বুঝিয়েছেন। এবং নিন্দা বর্ষিত হয়েছে সরাসরি প্রযুক্তির ওপর নয়, প্রযুক্তি-ব্যবস্থাপকদের ওপর।’

অন্য বিষয়গুলি:

Book Review
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy