স্বপ্নের সত্তর/ মায়া রহিয়া গেল...
লেখক: স্থবির দাশগুপ্ত
২২৫.০০
ধানসিড়ি
নকশালবাড়ির সত্তর, বজ্রনির্ঘোষের সত্তরকে নিয়ে ‘মায়া রহিয়া গেল’? যে দশকের আখ্যান মূলত ও প্রধানত পৌরুষের, অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণের, তাকে নিয়ে লেখা বই কি সেই আখ্যানে মায়ার খোঁজ করে? ২০১৬ সালে শারদীয় ‘আরেক রকম’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল ‘আলোর ফুলকিগুলো’ শিরোনামে একটি লেখা। এই বইয়ের প্রথম পরিচ্ছেদ সেই লেখাটিই। ২০১৬ সালে, ওই লেখাটি পড়তে পড়তে মনে হয়েছিল, আর জি কর হাসপাতালের বৃদ্ধ দারোয়ান থেকে চিরগম্ভীর মেট্রন, মুখচেনা আয়া থেকে নার্স কোয়ার্টার্সের বারান্দায় মুখ দেখতে না পাওয়া কোনও এক নার্স— নকশালবাড়ি আন্দোলনের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংযোগহীন এই মুখগুলো কী আশ্চর্য মায়ায় ধারণ করে ছিলেন বেপরোয়া, কিন্তু অসহায় সব তরুণ রাজনৈতিক কর্মীদের। কুড়ি-একুশ বছরের স্থবিরবাবুদের। তাঁর দীর্ঘ পাঁচ-ছ’বছরের আন্ডারগ্রাউন্ড জীবন, সুন্দরবনের বাদা অঞ্চলের রাতগুলি, দিনগুলিও যে সেই মায়া দিয়েই ঘেরা, এই বইয়ে স্থবির দাশগুপ্ত তা জানালেন।
আন্ডারগ্রাউন্ড রাজনীতির গল্প আছে। স্টাডি সার্কল তৈরি করা, গ্রাম থেকে গ্রামে পালানো, পুলিশের তাড়া, সে কাহিনিও আছে। অ্যাকশন, জোতদার নিকেশ, তা-ও আছে। কিন্তু স্মৃতি জু়ড়ে তার চেয়েও বেশি আছে মানুষ। রাজনীতির ডাকে ঘর ছাড়া অচেনা যুবকদের ধারণ করে রাখা মানুষ। তাঁদের বিশ্বাস, ভালবাসা। এক গ্রাম্য প্রৌঢ়া আছেন, যিনি বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া নকশাল যুবককে ডাকতেন ‘নারায়ণ’। মুসলমান দম্পতি, যাঁদের ঘরে থাকা একমাত্র বই বিষাদসিন্ধু পড়ে শোনাতে হত গ্রামে সংগঠন করতে আসা তরুণকে। এক হতদরিদ্র কৃষিশ্রমিক, অচেনা কিছু নকশাল যুবকের ভরসায় তরুণী স্ত্রী আর সদ্যোজাত সন্তানকে ফেলে গোটা রাতের জন্য ভিন্ গাঁয়ে যেতে বিন্দুমাত্র ভাবেননি। এক মাঝি, পুলিশের হাতে পড়ার ঝুঁকি নিয়েও যিনি রায়মঙ্গল আর মাতলায় উজান ঠেলে বিপ্লবীদের পৌঁছে দিয়েছেন এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। এক প্রবীণ নেতা, যিনি বাড়িতে পুলিশ ডেকে এনেও শেষ অবধি পালানোর পথ করে দিয়েছেন আশ্রিত নকশালকে। স্থবিরবাবুর বই জুড়ে এঁরা আছেন। মানুষ। যাঁদের জন্যই রাজনীতি করতে গিয়েছিল সত্তরের যুবকরা। সেই আখ্যানে মায়া থাকবে না?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy