গাজন
লেখক: মনোজিৎ অধিকারী
২৬০.০০
দে’জ পাবলিশিং
বাঙালির উৎসবে আনন্দের মাঝে আত্মপীড়নের আকূতিও ধর্ম-সংস্কৃতির অঙ্গ। সংস্কৃতির এই ধারা সাধারণের কাছে অন্তঃপ্রবাহী হয়ে কৃষিসংস্কৃতির সঙ্গেও জড়িয়ে আছে। দেবতা শিবের আরাধনায় গাজনের সাড়ম্বর রূপের বিস্তার বাংলায় কমবেশি সর্বব্যাপী। তাই আঞ্চলিক বিভিন্নতায় রীতিনীতিতে প্রভেদ থাকলেও, শিবগাজন একান্ত ভাবে সাধারণ মানুষের হয়ে উঠেছে। বাংলার গাজন-উৎসবের সার্বিক অন্বেষণ এই বইটি। গবেষণার সরেজমিন বর্ণনায় আঞ্চলিক পালপার্বণের কথারূপ এই গাজন-সংস্কৃতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেখা যাচ্ছে, এই ধারা একমুখী নয়। শিবগাজনের বহুমান্য ধারা ছাড়াও ধর্মরাজ, মনসা, শীতলা, বলরাম, ভগবতী, রতনমালা গাজনেরও স্বতন্ত্র বর্ণনা গাজন-চর্চার নতুন অভিমুখ তৈরি করেছে। আবার গাজন-সংশ্লিষ্ট নাচ, গান, নাটক, মেলা নিয়ে যে সার্বিক আবহ তা গ্রাম-সংস্কৃতির এক অনন্য ছন্দোবদ্ধ প্রকাশ। ছো, সঙ, গম্ভীরা, গমীরা, বোলান ইত্যাদি কত বঙ্গীয় সংগীত-নৃত্য-নাট্যধারা মিশে থাকে গাজনের সঙ্গে। বইটির বিশেষত্ব, এখানে গাজন-সংশ্লিষ্ট বাণফোঁড়া, ঝাঁপ, চড়ক ঘোরা ইত্যাদির আচার-অনুষঙ্গ ছাড়াও আছে এক ব্যাপ্ত দৃশ্যায়ন। তুলনামূলক আলোচনায় আছে ঝাড়খণ্ডের সেরাইকেলা ও ওড়িশার ময়ূরভঞ্জের শিবসংস্কৃতি ও গাজন। বইটিতে গাজন আলোচনায় জেলা থানা গ্রাম ইত্যাদির উল্লেখে কিছু অসংগতি বা ছবির পরিচিতিতে অসম্পূর্ণতা থাকলেও সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে উৎসবের তথ্যের নবরূপায়ণ ঘটেছে।
বাংলা সংগীত চরিতাভিধান
লেখক: সুরেন মুখোপাধ্যায়
৫৫০.০০
কাজল প্রকাশনী
ছেলেবেলা থেকেই গ্রামোফোন রেকর্ডে আঙুরবালা ইন্দুবালার গান শুনে নির্ভুল গাইতে পারতেন মঞ্জু গুপ্ত (১৯২৬-’৭৯)। রবীন্দ্রগানের তালিম নিয়েছিলেন দেবব্রত বিশ্বাসের কাছে। ছোটপিসি সাহানা দেবীর কাছে পণ্ডিচেরী আশ্রমে গিয়ে গানের নিয়মিত তালিম নিতেন, দিলীপকুমার রায়ের কাছেও, তাঁরই ‘তব চির চরণে’ গানটি মঞ্জু গুপ্তের প্রথম গ্রামোফোন-রেকর্ড, ১৯৪৪-এ। অতুলপ্রসাদের গানেও বিশিষ্ট এই শিল্পী। তাঁকে বিস্মৃতি থেকে বাঙালির স্মৃতিতে ফিরিয়ে এনেছেন সুরেন মুখোপাধ্যায়, তাঁর নির্মিত বাংলা সংগীত চরিতাভিধান-এ। আবহমান বাংলা গানের শিল্পীদের এ ভাবে ইতিহাসে নথিভুক্ত করা অতীব দুরূহ কাজ। বাণীকুমারকে (১৯০৮-’৭৪) আমরা শুধু ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র কালজয়ী গীতিকার বলেই মানি, কিন্তু এর বাইরেও তাঁর সম্পর্কে জানিয়েছেন অভিধান-প্রণেতা: ‘গান রচনার প্রথম যুগে ‘দেবদাস’, ‘রূপরেখা’, ‘ভাগ্যচক্র’ প্রভৃতি ছায়াছবিতে তিনি গান রচনা করে দিয়েছিলেন। প্রায় সহস্রাধিক গান তিনি রচনা করেছিলেন।’ বৈষ্ণব ধর্মের অভিনিবেশেই চিহ্নিত হয়ে আছেন বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী (১৮৪১-’৯৯), অথচ এক সময়ে ‘তিনি অনেক ব্রহ্মসংগীত রচনাও করেছেন এবং ব্রাহ্মসমাজের বিভিন্ন আসরে সংগীত পরিবেশনও করেছেন।’ একই ভাবে অভিধানে উঠে এসেছেন গীতিকার তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, যিনি নিজের কথাসাহিত্যিক সত্তার চাপে হারিয়ে গিয়েছেন। লুপ্ত স্মৃতি থেকে বাঙালি সংগীতপ্রতিভাদের তুলে না আনলে তো বাংলা গানের ইতিহাসটাই হারিয়ে যাবে, ‘পর্বতপ্রমাণ তথ্যাবলি সংগ্রহ করে... এই বই বাংলা গানের ইতিহাসের ভিত্তিপ্রস্তর’ স্থাপন করেছে, মনে করেন বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, তাঁর মতোই মার্গ সংগীতের আর-এক শিল্পী অরুণ ভাদুড়ীর মনে হয়েছে ‘এতে বাংলা গানের... অনুরাগীরা উপকৃত হবেন।’
মুর্শিদাবাদের লোকসংস্কৃতি
লেখক: পুলকেন্দু সিংহ
৩০০.০০
অন্নপূর্ণা প্রকাশনী
বইটি লেখকের দীর্ঘ অভিজ্ঞতালব্ধ গ্রামীণ সংস্কৃতির তথ্য নিবন্ধীকরণ ও মূল্যায়ন। মুর্শিদাবাদ জেলাকে কেন্দ্র করে তিনি মধ্যবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গ্রামীণ সংস্কৃতির ধারা আর শিল্পীদের সান্নিধ্যে এসেছেন প্রায় অর্ধশতাব্দী কাল যাবৎ। শিল্পীদের পরিচয়, আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নে ভেবেছেন নিজের মতো করে। তাই তাঁর দেখার ভঙ্গি ও চৌহদ্দি স্বাভাবিক ভাবেই স্বতন্ত্র। মুর্শিদাবাদের লোকসংস্কৃতি-তে লোকাচার, ব্রত-পার্বণ, পুজো-উৎসব, কথকতা, হেঁয়ালি, গাজনের গান, সঙ, মেলেনীর গান, গড়িয়া পুজোর নিয়ম-আচার, মুসলিম বিয়ের গান ও বুলু বিবির বৃত্তান্ত, হাপু গান, নাপিতের ছড়া, সত্যনারায়ণ ও সত্যপীরের গান, কিংবদন্তি— লেখকের ক্ষেত্রানুসন্ধানে প্রাপ্ত বহু বিষয়ের আলোকপাত। লেখকের সমাজচেতনা ও গ্রামীণ শিল্পীদের সঙ্গে একনিষ্ঠ সংযোগ-সম্পর্কের অভি়জ্ঞতায় গুরুত্বপূর্ণ এই প্রকাশনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy