কুবের, ১১ শতকের ভাস্কর্য। সূত্র: উইকিপিডিয়া
অক্ষয় তৃতীয়া তিথিটির সঙ্গে ঐশ্বর্য ও বৈভবের এক যোগসূত্র বিদ্যমান। এ দিন স্বর্ণ ও রত্ন ব্যবসায়ীরা বিশেষ পূজা করেন। গৃহস্থও সামান্য হলে সোনা বা অন্য মূল্যবান ধাতুর অলঙ্কার কিনতে চান। এই বৈভবের অনুষঙ্গের পিছনে রয়েছে এক পৌরাণিক বিশ্বাস। পুরাণ মতে, এক অক্ষয় তৃতীয়ার দিনেই ঐশ্বর্যের দেবতা কুবেরকে তাঁর অনন্ত বৈভবের উৎস দান করেছিলেন স্বয়ং মহাদেব। কিন্তু মজার ব্যাপার এই, বেদ-এর কালে কুবেরকে মোটেই খুব সুবিধের লোক হিসেবে দেখা হত না। অথর্ব বেদ-এ উলটে তাঁকে ‘অপদেবতা’-দের প্রধান এবং শতপথ ব্রাহ্মণ ‘তস্কর’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। তা হলে কোন জাদুবলে ঘটল তাঁর এই রূপান্তর?
প্রাচীন ভারতের ইতিহাস এবং পুরাণ বিশেষজ্ঞ নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য তাঁর বিস্তারিত গবেষণায় দেখিয়েছেন, কুবেরের পৌরাণিক পরিচয় গন্ধর্বপতি বা যক্ষরাজ হিসেবে। এই ‘গন্ধর্ব’ এবং ‘যক্ষ’-রা দেবতা নন। গন্ধর্বরা দেবলোকের নিম্নতম স্তরে অবস্থান করেন আর যক্ষরা তো রাক্ষস বা অসুরের সমকক্ষ। মনে রাখা প্রয়োজন, কুবেরের বাবা বিশ্রবা মুনি এবং তাঁর বৈমাত্রেয় ভাই স্বয়ং লঙ্কাধিপতি রাক্ষসকুলতিলক রাবণ। রামায়ণ এবং মহাভারতে কিন্তু কুবের দেবতা হিসেবেই বর্ণিত। তিনি ধনপতি এবং বহু দেবতাই তাঁর কাছ থেকে ধনসম্পদ ধার নেন। নরেন্দ্রনাথের গবেষণা থেকে এটা বোঝা যায় যে, গন্ধর্ব বা যক্ষ হিসেবে পরিচিত জনগোষ্ঠী আর্য সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। অন্তত বৈদিক যুগে তো নয়ই। কিন্তু তাঁরা অতুল সম্পদের অধিকারী ছিলেন অথবা সম্পদের উৎসের (সোনা বা রত্নের খনির) সন্ধান জানতেন। প্রথমে পশুচারণ ও পরে কৃষিজীবী আর্যদের কাছে তাঁরা ঈর্ষার পাত্র হয়ে দাঁড়ান ও ‘চোর’ বা ‘বিঘ্নকারী’ বলে বর্ণিত হতে থাকেন। পরে তাঁদের অধিপতিকে (বা উপাস্য দেবতাকে) পুরাণকাররা নিজেদের দেবলোকে স্থান দেন এবং কুবের আর্যদেরও উপাস্য হয়ে ওঠেন।
বিভিন্ন পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, কুবেরকে তাঁর অফুরান বা অক্ষয় সম্পদ দান করেছিলেন স্বয়ং মহাদেব। ভাবা দরকার, মহাদেবও আর্য সংস্কৃতিতে আদি বৈদিক যুগে ছিলেন না। পরে তিনি ‘দেবাদিদেব’ হয়ে ওঠেন। সে দিক থেকে দেখলে কুবেরকে তাঁর সম্পদ দান মাথার ঘাম পায়ে ফেলে জীবন ধারণ করা আর্যদের কাছে ঈপ্সিত এক ঘটনা হিসেবে প্রতিভাত হয়। কুবেরও সম্পদের দেবতা হিসেবে পূজিত হতে শুরু করেন।
রামায়ণ জানায়, কুবেরই স্বর্ণলঙ্কার অধিপতি ছিলেন। কিন্তু রাবণ তাঁকে বিতাড়িত করে লঙ্কা দখল করেন। তখন কুবের মহাদেবের তপস্যায় রত হন। মহাদেব তুষ্ট হয়ে তাঁকে অনন্ত ঐশ্বর্য দান করেন। বিশ্বকর্মা কৈলাসের কাছে অলকায় তাঁর প্রাসাদ নির্মাণ করে দেন। পরম্পরাগত ভাবে মনে করা হয়, অক্ষয় তৃতীয়ার দিন গণেশ এবং লক্ষ্মীদেবীর সঙ্গে কুবেরের পূজা করলে অনন্ত সম্পদ আয়ত্ত হয়। অনেকে অবশ্য এই ‘সম্পদ’-কে পার্থিব সোনাদানা হিসেবে দেখতে নারাজ। তাঁদের মতে, কুবের আসলে জ্ঞান ও সুবুদ্ধির দেবতা। প্রসঙ্গত, হিন্দু পুরাণের পাশাপাশি বৌদ্ধরাও কুবেরকে বিপুল গুরুত্ব দেন। বৌদ্ধ দেবতত্ত্ব অনুসারে কুবেরের নাম ‘বৈশ্রবণ’। তিনি চার স্বর্গপতির মধ্যে অন্যতম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy