রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ঢালাও বিলগ্নিকরণের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও নরেন্দ্র মোদী সরকার তার লক্ষ্য পূরণ করতে পারবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ অর্থ মন্ত্রকের অন্দরেই।
সরকারি সূত্রের ইঙ্গিত, বিলগ্নিকরণ খাতে ৫৮,৪০০ কোটি টাকা তোলার লক্ষ্যমাত্রা অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি নিলেও বাস্তবে তার অর্ধেকও সরকারের ঘরে আসবে না। শেয়ার বাজারে সুদিন ফিরলেও তেমন আশা নেই বলেই আশঙ্কা। ফলে অর্থের টানাটানির জেরে আবারও কোপ পড়তে পারে সরকারি খরচের উপর। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহেই খরচে রাশ টানতে আমলাদের প্রথম শ্রেণিতে বিমানযাত্রা এবং পাঁচতারা হোটেলে থাকা বন্ধ করার কথা জানিয়েছে কেন্দ্র। এ বার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দও ছাঁটাই হতে পারে বলে আশঙ্কা জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রকের একটি সূত্র।
চলতি অর্থবর্ষের প্রথম ছ’মাসে কর রাজস্ব প্রত্যাশা মতো না-বাড়ায় কোষাগার ভরাতে বিলগ্নিকরণের উপরেই নির্ভর করছিল কেন্দ্র। কিন্তু তাতেও বাধা পড়বে বলেই আশঙ্কা। তাই খরচ আরও কমিয়ে আনা ছাড়া আর তেমন কোনও বিকল্প থাকবে না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে অর্থ মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট সূত্র। ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার কোটি টাকা খরচ সে ক্ষেত্রে বাঁচাতে হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রকের জনৈক আধিকারিক জানান, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বেচে সর্বসাকুল্যে কেন্দ্র সম্ভবত ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকা চলতি ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষে সংগ্রহ করতে পারবে। এর পিছনে বেশ কয়েকটি কারণও চিহ্নিত করেছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। যেমন:
• বেশ কিছু কর্মী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে বিলগ্নিকরণে বাধা
• অর্থ মন্ত্রকের প্রথম সারির অফিসারদের বদলির জেরে আমলা স্তরে ক্ষোভ
• লাল ফিতের ফাঁসে কাজে ঢিলেমি
• বিলগ্নিকরণ হলেও বড়সড় রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে না-পারা
অর্থবর্ষের অর্ধেকেরও বেশি কেটে গেলেও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বেচে এ পর্যন্ত সরকারের হাতে এসেছে প্রায় ৫২ কোটি টাকা, যা মোটামুটি লক্ষ্যের এক হাজার ভাগের এক ভাগ। তাই সরকারি রাজস্বের ৫.৬ শতাংশ বিলগ্নিকরণ বাবদ সরগ্রহ করা যাবে বলে বাজেটে হিসাব করা হলেও, তা সম্ভব হবে না বলে কেন্দ্র কার্যত ধরেই নিয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে ওই সূত্র। সেই কারণেই এখন থেকে ব্যয়ে রাশ টানতে শুরু করেছে তারা।
এই মুহূর্তে ওএনজিসি-র ৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রির বিষয়টি চূড়ান্ত করার পথে অনেক দূর এগিয়েছে কেন্দ্র। এই খাতে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা সরকারের ঘরে আসার কথা।
তবে হিন্দুস্তান জিঙ্ক ও বালকো-য় কেন্দ্রের হাতে যে-অল্প পরিমাণ শেয়ার রয়েছে, তা বিক্রির পথে রয়েছে আইনি বাধা, যদিও এর থেকে আসতে পারত ১৫ হাজার কোটি টাকা। ট্রেড ইউনিয়ন এই বিলগ্নিকরণ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে আর্জি জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। ফলে এই অর্থবর্ষে ওই শেয়ার বিক্রি করা যাবে না বলে এক রকম স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
কোল ইন্ডিয়ার ১০ শতাংশ শেয়ার বিক্রিতে ইতিমধ্যেই সায় দিয়েছে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। এই বাবদ ১৮ হাজার কোটি টাকা বাজার থেকে তোলার সম্ভাবনা। কিন্তু সংস্থার কর্মী ইউনিয়ন কয়লার জোগানের অভাবে ঘোরালো হয়ে ওঠা বিদ্যুৎ সঙ্কট ও অন্যান্য কারণ দেখিয়ে এর জোরালো বিরোধিতায় নেমেছে। অল ইন্ডিয়া কোল ওয়ার্কার্স ফেডারেশন-এর সাধারণ সম্পাদক জীবন রায় জানান, “আমরা বেসরকারিকরণের বিরোধী। কারণ সংস্থা বেসরকারি হাতে গেলে যথেচ্ছ খনন শুরু হবে। কর্মীদের কোনও সুরক্ষাও থাকবে না।” বিষয়টির প্রতিবাদ জানাতে আগামী ২৪ নভেম্বর ধর্মঘট ডেকেছেন কোল ইন্ডিয়া কর্মীরা।
প্রসঙ্গত, বিগত ইউপিএ সরকারের আমলেও একই ভাবে কোল ইন্ডিয়ার প্রস্তাবিত বিলগ্নিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে তা আটকে দেয় কর্মী ইউনিয়ন। বিদ্যুৎ সঙ্কট প্রসঙ্গে তাদের মত হল, কয়লা খনি বেসরকারি হাতে চলে গেলে আরও বিপন্ন হবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মতো অত্যাবশ্যক ক্ষেত্রে কয়লার জোগান। পাশাপাশি বাড়বে কয়লার দামও।
কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী পীযূষ গয়াল বৃহস্পতিবারই ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের মঞ্চে বলেছেন, বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের হাল ফেরাতে চার-পাঁচ বছরে ১৫ লক্ষ কোটি টাকা লগ্নি প্রয়োজন। এই পরিপ্রেক্ষিতে কোল ইন্ডিয়ার বেসরকারিকরণ প্রস্তাবকে ভাল চোখে দেখছে না কর্মী ইউনিয়ন। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ৬০% তাপবিদ্যুৎ, যা কয়লার উপর নির্ভরশীল। বিলগ্নিকরণ হলে ওই উৎপাদন ব্যবস্থা আরও সঙ্কটে পড়বে বলেই আশঙ্কা অধিকাংশ ইউনিয়নের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy