গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
মোবাইল ব্যাঙ্কিং জানা ছিল। ডিজিটাল ওয়ালেটে টাকা এখন অনেক চায়ের দোকানও নিয়ে থাকে। কিন্তু যে ভাবেই নিক না কেন, সে টাকা কিন্তু সরকারি প্রেসে ছাপা হয়। তবে আজকের সু্প্রিম কোর্টের রায় চালু হলে আলু কিনতে পারবেন ব্যাট দিয়ে! ব্যাট না থাকলে বিটকয়েন তো থাকবেই! ডিজিটাল ওয়ালেট যদি থাকে ডিজিটাল মানি বা ই-মুদ্রাই বা নয় কেন?
হয়ত একটু বেশি সরলীকরণ হয়ে গেল। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আজ ই-মুদ্রার ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সাম্প্রতিক কিছু নীতির ভাবনা এই চিন্তা থেকে আমাদের দূরেও রাখছে না।
ই-মুদ্রা কী
অতি সরলীকরণের অনেক দোষ। কিন্তু তা মেনে নিয়েই বলা যাক, প্রথাগত টাকা বলতে যা বুঝি ই-মুদ্রা কিন্তু তা নয়। সাতোসি নাকামোতো ২০০৮ সালের শেষে জাপানে কম্পিউটার নির্ভর লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করেন। প্রথাগত মুদ্রার বিকল্প নয়। এটা তিনি করেছিলেন এমন একটা লেনদেন ব্যবস্থা তৈরি করতে যাতে কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন হবে না। হিসাব থাকবে কম্পিউটারে। পরিভাষায় বলেই ফাইল শেয়ারিং সিস্টেম। আর এই লেনদেনের হিসাব রাখতে একটা, সাধারণ ভাবে বললে, সূচকের ব্যবহার করা হবে। এই সূচকই এখন বিটকয়েন নামে পরিচিত। যা এখন মুদ্রা হিসাবেই পরিচিত হয়ে উঠেছে। এটা করা হয়েছিল ব্লক চেন প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
নাকামোতো রাস্তায় হেঁটে বাজারে নানান ই-মুদ্রা চলছে, যাদের নিজেদের মধ্যে বিনিময় মূল্যও তৈরি হয়ে গিয়েছে। বাজারে বিটকয়েনের বিনিময় মূল্য কিন্তু অনেক। আজকের হিসাবে প্রায় ১০ হাজার ডলার। বিটকয়েনের সঙ্গী হিসাবে বাজারে রয়েছে লাইটকয়েন, ইথেরিয়াম, ব্যাটের মতো আরও অনেক ই-মুদ্রা।
প্রতীকী ছবি।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপত্তি
নাকামোতোর প্রযুক্তিতে এই যে দু’পক্ষের লেনদেন সরাসরি করার ব্যবস্থা তৈরি হয়ে গেল, তার কিন্তু একটা সুদূরপ্রসারী ফল হল কালবাজারি। ড্রাগ, বন্দুক থেকে শুরু করে এমনকি ছবির কালবাজারিতেও এই প্রযুক্তির বহুল প্রচলন শুরু হয়ে গিয়েছে। এর কারণ অবশ্যই কোনও তৃতীয় পক্ষ ছাড়াই লেনদেনের সুবিধা। আর সেই লেনদেন যেহেতু দু’পক্ষের মধ্যেই হয়, তাই তা ধরাও মুশকিল। আপনি বিটকয়েন কিনলেন কারও কাছ থেকে। প্রথাগত মুদ্রার বিনিময়ে। যার কাছ থেকে কিনলেন, তার লেজারে বিটকয়েন কমে গেল। তৈরি হল আপনার লেজার, যাতে জমল যে ক’টা বিটকয়েন কিনলেন তা। এ বার তা দিয়ে বাজারে কী লেনদেন করলেন তা থাকল আপনাদের দু’জনের লেজারেই ওই বিটকয়েনেই! তবে তৃতীয় পক্ষ নেই তা বলাও আর ঠিক নয়। এই লেনদেন ব্যবস্থা কিন্তু যাদের বলা হয় ক্রিপটোক্যারেন্সি মাইনার তাদের সিলমোহর লাগে। তারাই কিন্তু এই লেনদেনের হিসাব রেখে থাকে। কিন্তু তারা কোনও সরকারি সংস্থা নয়।
আরও পড়ুন: ক্রিপ্টোকারেন্সিতে লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা তুলতে নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের
যাই হোক এই কালোবাজারি রোখার অজুহাতেই ২০১৮ সালে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক নিষেধাজ্ঞা জারি করছিল এই ধরনের মুদ্রা কেনাবেচার উপরে।
সুপ্রিম কোর্টের মামলা
ইন্টারনেট অ্যান্ড মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করে বসল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অধিকারই। আগেই বলেছি, ই-মুদ্রা আসলে মুদ্রা বলতে যা বুঝি তা নয়। লেনদেনের নির্দেশক। আর এই যুক্তিতেই অ্যাসোসিয়েশনটি বলল, ই-মুদ্রা আসলে যেহেতু মুদ্রা নয়, তাই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করার অধিকার নেই। আজকের রায়ে প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে সেই দাবিই মেনে নিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত।
আরও পড়ুন: দেশে করোনা আতঙ্ক ছড়াচ্ছে, আক্রান্ত ২৮-এর মধ্যে ১৬ ইতালীয় পর্যটক
প্রতীকী ছবি।
ই-টাকার প্রস্তুতি
শুরু করেছিলাম আলু কিনতে ব্যাটের ব্যবহার করা নিয়ে। একটু হাল্কা চালেই। কিন্তু ২৭ নভেম্বর, ২০১৯-এ তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী সঞ্জয় ধোত্রে জাতীয় ব্লকচেন নীতি তৈরির কথা ঘোষণা করেন। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে তামিলনাড়ু সরকার ঘোষণা করে দেশের প্রথম ‘ব্লকচেন’ ব্যবস্থা আনার প্রস্তুতির কথা।
ব্লকচেন মানেই যে ই-মুদ্রা তা নয়। এই ব্যবস্থায় যে কোনও ডিজিটাল লেনদেনকে সিলমোহর দেওয়া যায় সরাসরি। কিন্তু এই ব্যবস্থার সঙ্গে ই-মুদ্রা যে খুবই ঘনিষ্ঠ ভাবে যুক্ত! তবে এটাও ঠিক, এখনও পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার যা বলেছে, তা থেকে এটাও খুব স্পষ্ট নয় যে এ দেশে এর প্রচলন একেবারেই হবে না। সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ে যাঁদের কাছে বিটকয়েনে সম্পদ রাখা আছে তাঁদের বোধহয় ঝামেলা কাটল। কিন্তু সাম্প্রতিক যে সব ব্যবস্থার কথা গণমাধ্যমে ভেসে আসছে তাতে সরকারি ব্যবস্থায় এর ব্যবহারের প্রচলন উড়িয়ে দেওয়া যায় কি না, তা-ও ভাবার সময় এসেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy