Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
Budget 2020

বাজারে আসছে এলআইসি শেয়ার

দেশের বৃহত্তম জীবন বিমা সংস্থার কত শতাংশ শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

বিমা নিগমের পুরো অংশীদারিত্ব নিজের কাছে রাখতে নারাজ সরকার।

বিমা নিগমের পুরো অংশীদারিত্ব নিজের কাছে রাখতে নারাজ সরকার।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:২৩
Share: Save:

মাত্র এক লাইনের ঘোষণা। তাতেই যেন ঢিল পড়ল মৌচাকে! বাজেট ঘোষণার সময়ে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানালেন, জীবন বিমা নিগমে (এলআইসি) কেন্দ্রের হাতে থাকা অংশীদারির (১০০%) একটি অংশ বিক্রি করার পথে পা বাড়াবে মোদী সরকার। এই প্রথম বাজারে আসবে রাষ্ট্রায়ত্ত জীবন বিমা সংস্থাটির শেয়ার।

দেশের বৃহত্তম জীবন বিমা সংস্থার কত শতাংশ শেয়ার বিক্রির পরিকল্পনা করছে কেন্দ্র, তা এখনও স্পষ্ট নয়। কত দিনের মধ্যে এই পদক্ষেপ করা হবে, সেই উল্লেখও আজ করেননি নির্মলা। কিন্তু ঘোষণা মাত্রই সংসদে রে রে করে উঠলেন বিরোধীরা। প্রশ্ন উঠল, যে-রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থায় সাধারণ মানুষের সঞ্চয়ের অন্তত একটি অংশ রাখা, তার শেয়ার বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার কথা কী ভাবে ভাবতে পারল কেন্দ্র? বিরোধ দেখে মাঝপথে টেবিল চাপড়ানো থামিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও!

সরকারের এই ঘোষণায় এ দিন ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিমা কর্মীদের সংগঠন। সূত্রের খবর, এর প্রতিবাদে শীঘ্রই ধর্মঘটের পরিকল্পনা করছে তারা। এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে সঙ্ঘ প্রভাবিত বিএমএসও।

সংশ্লিষ্ট মহলের কয়েক জন জানালেন, একাধিক কারণে এই ঘোষণায় সিঁদুরে মেঘ দেখছেন ওই সংস্থায় লগ্নিকারী এবং কর্মীদের একাংশ। যেমন, তাঁরা মনে করছেন, সরকার এখনও খোলসা করেনি ঠিকই। কিন্তু শেষমেশ খুব কম শেয়ার প্রথম দফায় বাজারে আনবে না তারা। কারণ, গত অর্থবর্ষে বিলগ্নিকরণ থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১.০৫ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু আদপে ওই খাতে রাজকোষে এসেছে ৬৫ হাজার কোটি। তাঁদের প্রশ্ন, তা দেখেও এ বার বিলগ্নিকরণ থেকে আয়ের সম্ভাব্য অঙ্ক কী ভাবে ২.১ লক্ষ কোটি হবে বলে বাজেটে লিখল কেন্দ্র? এর মধ্যে মূল অংশ কি তবে আসবে এলআইসি-র শেয়ার থেকেই? বিশেষত যেখানে অর্থ সচিব নিজেই জানিয়েছেন, এলআইসি এবং আইডিবিআইয়ের বাকি শেয়ার বেচে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা আসবে বলে আশাবাদী তাঁরা।

বিমা সংস্থাটির এক এজেন্ট বলছিলেন, বিমা করেছেন অথচ এলআইসি-তে টাকা রাখেননি, এমন সঞ্চয়ীর সংখ্যা খুব বেশি নয়।

বিশেষত রাজ্যে। এখানে চাকরি পেয়ে অনেকেরই প্রথম টাকা রাখা এলআইসি-তে। এর অন্যতম কারণ সংস্থার মালিকানা পুরোপুরি কেন্দ্রের হাতে থাকায় তা ডুবে যাওয়া কিংবা টাকা মার না-যাওয়ার ভরসা। তাঁদের আশঙ্কা, এর পরে সেই নির্ভরতা চিড় খাবে না তো? এঁদের কেউ কেউ আবার বলছেন, গ্রামে-মফসস্‌লে অনেকেই অত তলিয়ে বোঝেন না। সরকার কত শতাংশ শেয়ার বেচল, তার খুঁটিনাটি না-ই জানতে পারেন তাঁরা। সেই সুযোগে যদি বেসরকারি বিমা সংস্থার কর্মীরা তাঁদের বোঝান যে, এ বার বেসরকারি হাতে যাচ্ছে এলআইসি-ও, তাতে সম্ভাব্য লগ্নিকারীরা বিভ্রান্ত হবেন না তো?

উল্টো যুক্তিও আছে। অনেকে বলছেন, এই টানাটানির বাজারে কৌশলী হয়ে এলআইসি-র অল্প কিছু শেয়ার বেচেও মোটা টাকা ঘরে তুলতে পারে সরকার। শুধু তা-ই নয়। অনেকের মতে, অনেক সময়ই বাজেটের হিসেব মেলাতে লোকসানে চলা রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার অংশীদারি এলআইসি-কে ‘কিনতে বলে’ সরকার। নিশ্চিত লোকসান জেনেও লগ্নি করতে হয় কিছু ক্ষেত্রে। আগামী দিনে এই রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থার বেশ খানিকটা শেয়ার লগ্নিকারীদের হাতে গেলে, কিন্তু এমনটা চাইবেন না তাঁরা। কারণ, সে ক্ষেত্রে টান পড়বে তাঁদের মুনাফাতেই। আর সংস্থা যদি লোকসানের জায়গায় লগ্নি কমায়, তাতে লাভ সেখানে টাকা রাখা সঞ্চয়কারীদেরও।

তবে এর মধ্যে কোন ছবি ফুটে উঠবে, তা বলবে ভবিষ্যৎই। তা অনেকটা নির্ভর করবে, কত শতাংশ হাত বদলাচ্ছে, তার উপরেও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy