—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
প্রায় চার বছর হল অনুকূল বাতাস বইছে ভারতীয় শেয়ার বাজারে। মাঝে মধ্যে ছোটখাটো সংশোধন হলেও সূচক তা দ্রুত কাটিয়ে উঠেছে। এই তেজী বাজারের ভাল রকম প্রতিফলন দেখা গিয়েছে শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডের জগতে। সেগুলির ন্যাভ নাগাড়ে বাড়তে থাকায় বাঁধ ভাঙা জলের মতো লগ্নি ঢুকেছে ফান্ড এবং শেয়ারের দুনিয়ায়। এই বিপুল পরিমাণ পুঁজিই আবার শক্তি জুগিয়েছে বাজারকে। বড় পতনের হাত থেকে রক্ষা করেছে। ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর সেই বছরের দিওয়ালির (১৪ নভেম্বর) আগে সেনসেক্স ছিল ৪২,৫৯৭ অঙ্কে। সেখান থেকে চার বছরেরও কম সময়ে তা দ্বিগুণের বেশি বেড়ে গত ২৬ সেপ্টেম্বর পৌঁছে গিয়েছে ৮৫,৮৩৬.১২-এ।
তবে এর পর থেকেই হাওয়া একটু একটু করে বদলাচ্ছে। গত তিন সপ্তাহে অনেকটা মাথা নামিয়েছে সেনসেক্স। শুক্রবার তার অবস্থান ছিল ৮১,২২৫। খুইয়েছে প্রায় ৪৬১১ পয়েন্ট বা ৫.৩৭%। আতঙ্কের কবলে না পড়লেও, বাজারে এখন আশঙ্কার অভাব নেই। যা বেশ কিছু দিন দুর্বল রাখতে পারে তাকে। যে কারণে এ বারের দিওয়ালি ভাল কাটবে, এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না কেউ। আশঙ্কার কারণগুলি হল—
মূল্যবৃদ্ধি, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের অস্বাভাবিক চড়া দাম। খুচরো বাজারে ফের মূল্যবৃদ্ধির হার ৫% ছাড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরে ছিল ৫.৪৯%। রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের লক্ষ্যমাত্রা ৪ শতাংশের চেয়ে অনেকটাই বেশি। শীর্ষ ব্যাঙ্ক স্পষ্ট জানিয়েছে, এখন সুদ কমানো ঝুঁকির কারণ হবে। অর্থাৎ তা কমছে না।
পশ্চিম এশিয়ায় আরও জোরালো হওয়া সংঘর্ষ। যুদ্ধ মেটার কোনও লক্ষণ নেই এখনও। বরং তা ছড়াচ্ছে একাধিক দেশে। ইজ়রায়েল-প্যালেস্টাইনের মধ্যে সংঘর্ষ এখন ছড়িয়েছে লেবানন এবং ইরানেও। ইজ়রায়েল ইরানের মিসাইল হানার জবাব দিলে তা বড় যুদ্ধের আকার নিতে পারে। বিশ্ব অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে তাতে। প্রভাব পড়বে দেশের বাজারেও।
দেশের বাজার থেকে বিদেশি লগ্নির প্রস্থান। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে চিন তাদের বিভিন্ন শিল্পকে আর্থিক উৎসাহ দেবে, এই ঘোষণায় ভারত থেকে মোটা অঙ্কের বিদেশি লগ্নি সরতে শুরু করেছে সে দেশে। ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে ভারতে টানা শেয়ার বেচছে ওই সব সংস্থা। তবে ভারতীয় লগ্নিকারী সংস্থাগুলির বিনিয়োগ সূচকের আরও বেশি পতন আটকেছে।
ডলারের সাপেক্ষে দুর্বল টাকা। দেশ থেকে লাগাতার বিদেশি লগ্নি বেরিয়ে যেতে থাকায় ডলারের নিরিখে ভারতীয় মুদ্রা ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ৮৪ টাকা ছাড়িয়ে গত শুক্রবার তা বন্ধ হয়েছে ৮৪.০৭ টাকায়।
কিছু সংস্থার আর্থিক ফল ভাল না হওয়া। জুলাই-সেপ্টেম্বরে ফল প্রকাশ শুরু করেছে দেশের সংস্থাগুলি। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে এ বার আশঙ্কার থেকেও খারাপ হতে দেখা গিয়েছে আয়-ব্যয়-মুনাফা হিসাবের খাতা। রিলায়্যান্স-সহ কয়েকটি বড় সংস্থার ফলাফল লগ্নিকারীদের খুশি করতে পারেনি। এই বছর উৎসবের মরসুমেও বিক্রিবাটা তেমন বাড়েনি বলে জানিয়েছে কিছু সংস্থা।
অদূর ভবিষ্যতে বাজার চাঙ্গা হওয়ার কারণ চোখে না পড়া। বর্তমান পরিস্থিতিতে ছোট মেয়াদে সূচকের ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এখন নজর থাকবে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এবং তার ফলের প্রতিক্রিয়ার উপর। বাজার যদি আরও নামে, তবে তা সুযোগ করে দেবে কম দামে ভাল শেয়ার কেনার। লগ্নিকারীরা শেয়ার কিনতে শুরু করলে ফের তা ঊর্ধ্বমুখী হবে। পড়তি বাজারে এসআইপি মারফত ফান্ডে লগ্নি অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। মাঝারি থেকে বড় মেয়াদে শেয়ার সূচক ফের চাঙ্গা হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এ দিকে, গত সপ্তাহে হয়ে গেল দেশের বৃহত্তম পাবিলক ইসু (কোনও সংস্থার বাজারে প্রথম বার শেয়ার ছেড়ে টাকা তোলা বা আইপিও)। হুন্ডাই মোটরসের ২৭,৮৭০ কোটি টাকার ইসুতে শেয়ার কেনার আবেদন জমা পড়েছে ২.৩৭ গুণ। তবে খুচরো লগ্নিকারীদের জন্যে বরাদ্দ শেয়ারের ক্ষেত্রে আবেদন এসেছে মাত্র ৫০ শতাংশের জন্য। ফলে ছোট লগ্নিকারীদের সবাই হুন্ডাইয়ের শেয়ার পাবেন। আগামী কাল বাজারে নথিবদ্ধ হবে এটি। গোটা বাজার বিশেষ করে দু’চাকা এবং চার চাকা গাড়ির শেয়ার সম্প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ায় নথিভুক্তির পরে হুন্ডাই শেয়ারে লাভ পাওয়া যাবে বলে আশা করা হচ্ছে না। ১৯৬০ টাকা দামে ইসু করা হয়েছে এই সংস্থার প্রতিটি শেয়ার। এর আগে দেশের বৃহত্তম আইপিও ছিল এলআইসি-র। ২০২২ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থাটির ইসুর আকার ছিল ২১,০০৮ কোটি।
(মতামত ব্যক্তিগত)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy